২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শতবর্ষী শ্মশানে লাশ সৎকারে বাঁধা, সর্বমহলে ক্ষোভ

শতবর্ষী শ্মশানে লাশ সৎকারে বাঁধা, সর্বমহলে ক্ষোভ - নয়া দিগন্ত

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের শতবর্ষী নারায়নপুর মহাশ্মশানে লাশ সৎকারে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। বাঁধার মুখে বহরপুর মহাশ্মশানে লাশ সৎকার করতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের ষষ্ঠী শর্মার স্ত্রী অমিয় শর্মা (৭০) মঙ্গলবার সকালে নিজবাড়ীতে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। তার লাশ নারায়নপুর মহাশ্মশানে সৎকার করার উদ্যোগ গ্রহণ করে পরিবার।

নিহতের ছেলে তুষার শর্মা জানান, তার মায়ের মৃত্যুর পর নারায়ণপুর শতবর্ষী সার্বজনীন মহাশ্মশানে সৎকারের জন্য এলাকার লোকজন নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর নারায়ণপুর গ্রামের আব্দুল মালেক শেখ ও তার লোকজন লাশ সৎকারে বাঁধা সৃষ্টি করে। বাঁধার মুখে পরবর্তীতে বহরপুর মহাশ্মশানে লাশটি সৎকার করতে বাধ্য হন তারা।

শ্মশানে লাশ সৎকারে বাঁধা প্রদানকারী আব্দুল মালেক শেখ অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম না। আমি বা আমার পরিবারের কোনো সদস্য বাঁধা দেয়নি।

বালিয়াকান্দি থানার এসআই বিল্লাল হোসেন জানান, নারায়াণপুর মহাশ্মশানে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক সদস্যের লাশ সৎকারে বাঁধা দেয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে পৌছে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যবস্থা করি।

এ ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় বালিয়াকান্দি উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ বিনয় কুমার চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিতিশ কুমার মন্ডল, উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রামগোপাল চট্রোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক সনজিৎ কুমার দাসসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তীব্র নিন্দা ও দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেছেন।

উল্লেখ্য, নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক সুনিল কুমার ঘোষ গংদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজবাড়ী জেলার প্রশাসকের এসএ শাখা সরকারি জায়গায় অবস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাশশ্মানের জায়গা অবৈধ দখলদারে হাত থেকে উদ্ধার করতে গত বছরের ৫ জুন তারিখে একটি চিঠি বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করেন। যার স্মারক নং ০৫-৩০-৮২০০-০১০-৫১-১৭ ৮২৮(ক)।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরামর্শে ৩১ জুলাই তারিখে বালিয়াকান্দি সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। উচ্ছেদ অভিযানের পর গত বছরের ২ আগস্ট নারায়ণপুর গ্রামের মৃত কেসমত আলীর ছেলে আব্দুল মালেক বাদী হয়ে রাজবাড়ী ১নং আমলী আদালতে ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হোসেন খানসহ ১০ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়।

এর প্রেক্ষিতে বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম আজাদ গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে নোটিশের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে ডেকে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন এবং লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করেন। এরপর গত ২ অক্টোবর মিসপি ২১২/১৮ এর উপজেলা পরিষদের স্মারক নং উপ/চেয়ার/বালি/রাজ ২০১৮-৪৯, স্মারক নং ৪১২ তারিখ ২/৮/১৮ইং। উপজেলা পরিষদের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করে। মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে। জায়গাটি মূলত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় শতবর্ষ ধরে সেখানে লাশ সৎকার করে আসছিল।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল