২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নয়া দিগন্তের সংবাদে তোলপাড় :

নয়া দিগন্তের সংবাদে তোলপাড় : সন্তানের জন্য দোয়া চাইলেন সেই ইউএনও

ইউএনও হোসেন আরা বীনা - সংগৃহীত

মাতৃত্বকালীন ছুটি ভালোভাবে ব্যবহার করতেই সদর ইউএনও হোসেন আরা বীনাকে ওএসডি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া। তার মতে, ওএসডি সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেগেটিভ। আসলে ওএসডি মানে পরে কোথায় পাঠানো যায় সে সময়ের জন্য স্থগিত রাখা।

গতকাল রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কে অনুষ্ঠিত সভায় এ কথা বলেন তিনি। এ সময় জেলা প্রশাসক নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীনার নির্বাচনের সময় করা কাজের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি ইউএনওও তার সন্তানের সুস্থতা কামনায় সবাইকে দোয়া করার কথা বলেন। রোববার নয়া দিগন্তে নারায়ণগঞ্জ সদর ইউএনওর আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাস শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর রোববার নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। 

এ দিকে গতকাল রোববার বিকেলে মুঠোফোনে ইউএনও হোসনে আরা বীনা বলেন, রোববার আমার সন্তানের অবস্থা একটু ভালো হয়েছে। শনিবার বেশি খারাপ ছিল। অপারেশন ও মানসিক চাপে আমি এখনো অসুস্থ। আমাকেই ডাক্তার রিলিজ করেননি।

ওএসডির বিষয়ে কোনো পদপে নিবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে আমার সন্তান সুস্থ হওয়া জরুরি। সে সুস্থ হলে পরে আমি সিদ্ধান্ত নেবো। এখন শুধু আমার সন্তানের জন্য দোয়া চাই। পেশাগত কিছু সমস্যার কারণে সেই কর্মকর্তার নাম বলা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি বদলি হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীনা। বিদায়ের আগ মুহূর্তে সন্তান সম্ভবা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচিত হয়েছেন ইউএনও হোসনে আরা বেগম বীনা। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তার কোলজুড়ে আসে প্রথম সন্তান। তবে সন্তান অপরিপক্ব জন্ম নেয়ায় বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেণে (এনআইসিও) আছেন। দীর্ঘ ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর মা হয়ে সৌভাগ্যবতী হলেও সাধনালব্ধ সন্তানের এমন শারীরিক অবস্থা দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এই ইউএনও। তার নিষ্পাপ সন্তানের এমন অবস্থার জন্য একজনকে দায়ী করে গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে বীনা তার ফেসবুকে একটি আবেগ মাখানো স্ট্যাটাস দেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর ইউএনওর আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাস
 ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বীণা সম্প্রতি বদলি হয়েছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) তারিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তার স্থলে নাহিদা বারিকের যোগদানের বিষয়টি জানানো হয়। তবে বর্তমান ইউএনওর রদবদলে এক বিশেষ কর্মকর্তা কাজ করেছেন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন ইউএনও হোসনে আরা বীণা। পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো : 


‘আমি ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সাধারণত ফেসবুকে খুব একটা শেয়ার করি না। তবে আজ মনে হল এখন চুপ করে থাকাটাও অন্যায়। তাই আজ আর না, আজ আমি বলবো... আমি হোসনে আরা বেগম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ণগঞ্জ সদর, মাত্র ৯ মাস পূর্বে আমি এ পদে যোগদান করি। আমার দীর্ঘ ৯ বছরের দাম্পত্য জীবনে বহু চেষ্টা চিকিৎসার পরও আমরা কোনো সন্তান লাভ করতে পারিনি। কিন্তু পাঁচ মাস পূর্বে আমি জানতে পারি আমি দুই মাসের সন্তানসম্ভবা। এ ঘটনা আমার জীবনে সৃষ্টিকর্তার অপার রহমত ছাড়া আর কিছুই নয় এ বিশ্বাস আমি প্রতিনিয়ত বুকে ধারণ করেছি। এ বিশ্বাস ও স্বপ্ন বুকে নিয়ে অনাগত সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় দিন গুনছিলাম।


উল্লেখ্য, আমি আমার বাবুকে পেটে নিয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমি নারায়ণগঞ্জ ৪ ও নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের আংশিক নির্বাচন অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করি। একজন নারী কর্মকর্তা হিসেবে অজুহাত ফাঁকিবাজি এই বিষয়গুলোকে কখনই পুঁজি করিনি। যখন যে পদে কাজ করেছি চেষ্টা করেছি শতভাগ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে। সন্তানসম্ভবা হয়েও এর কোন ব্যতিক্রম আমি করিনি। অথচ আমি সন্তানসম্ভবা হয়েছি শোনার পর থেকেই একজন বিশেষ কর্মকর্তা, যার নাম বলতেও আমার রুচি হচ্ছে না, বিভিন্ন মহলে আমাকে অযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে আমাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পাঁয়তারা করেই চলেছিল। আমার সন্তানসম্ভবা হওয়াটাকেই সে বিভিন্ন মহলে আমার সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

অথচ এই সন্তান পেটে নিয়েই আমি অত্যন্ত সফলভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি, ও আমার ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এপ্রিসিয়েশনও পেয়েছি। আমার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল এপ্রিলের ২০ তারিখ, তেমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই আমি ছিলাম। গত ৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ বিকেলে রেগুলার চেকাপ করতে আমি হাসব্যান্ডসহ স্কয়ার হাসপাতালে আসি, চেকআপ শেষে সন্ধ্যায় আমরা হাসপাতালে অপেক্ষা করছি পরবর্তী পরীক্ষার জন্য এমন সময় আমার একজন ব্যাচমেট ফোন করে জানায় আমার সদাশয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ওএসডি করেছে অর্থাৎ আমাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেছে। আমার অপরাধ হলো আমি সন্তানসম্ভবা, আর তার চেয়েও বড় কারণ হলো সেই তথাকথিত ক্ষমতাধর কর্মকর্তার উপরের মহল কর্তৃক তদবির। খবরটা শোনার পর আমি প্রচণ্ড মানসিক চাপ সহ্য করতে পারিনি; উল্লেখ্য, আমি এজমার রোগী।

প্রচণ্ড মানসিক চাপে আমার ফুসফুসে ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, ফলে আমার পেটের সন্তানের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় এবং হঠাৎ করেই আমার পেটের বাবু নড়াচড়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। তাৎক্ষণিক হসপিটালে ভর্তি করা হলে ডক্টর সে দিন রাতেই সিজার করে বাবু বের করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, পরে আমার পরিবারের সবার সিদ্ধান্তে পরদিন সকালে আমার মাত্র ৩১ সপ্তাহ বয়সী প্রিমেচিউর বেবিকে সিজার করে বের করে ফেলা হয়। এখন সে স্কয়ার হাসপাতালের এনআইসিইউতে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করে যাচ্ছে!!! আমার এই নিষ্পাপ সন্তানটার কি অপরাধ ছিল??? নাকি মা হতে চাওয়াটাই আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল আমি জানি না!!! তবে জানি একজন সব দেখেন তিনি আমার নিষ্পাপ মাসুম সন্তানের উপর এই জুলুমের বিচার করবেন। এই নিষ্ঠুর অমানবিকতার পৃথিবীতে কোনো কর্তাব্যক্তির কাছে আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই না, শুধু আমার সৃষ্টিকর্তাকে বলব তুমি এর বিচার করো!!! আর যারা আমাকে একটুও ভালোবাসেন আমার নিষ্পাপ সন্তানটার জন্য দোয়া করবেন, ও সুস্থ হয়ে গেলে কোনো কষ্টের কথাই আমার মনে থাকবে না।’


আরো সংবাদ



premium cement
চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বাংলাদেশ-কাতারের মধ্যে ১০টি সহযোগিতা নথি সই ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি’ মিলান ডার্বি জিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার ইন্টারের

সকল