স্ত্রীকে অপমানের প্রতিবাদ করায় স্বামীকে মারধর: পরে আত্মহত্যা
- আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা
- ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:২৪, আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৮
রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ায় টর্ক্ক ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন সাবিনা আক্তার মীম(২০)। কারখানায় কাজ করার সময় মোবাইলে স্বামী অনিকের (২২) সাথে কথা বলায় মীমকে কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পেশায় রংমিস্ত্রি স্বামী অনিক কারখানার সামনে এসে এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত ও মারাত্মক জখম করে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আশুলিয়ার সাধুপাড়া টর্ক্ক ফ্যাশন লিমিটেড নামে পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত অনিক ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানাধীন আড়াইসিদা এলাকার আনিস মিয়ার ছেলে। সে স্ত্রী সাবিনা আক্তার মীমকে নিয়ে আশুলিয়ার সাধুপাড়া এলাকার মনিরের বাড়ির একটি কক্ষে ভাড়া থাকতো এবং রংমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। আর স্ত্রী মীম সাধুপাড়া টর্ক্ক ফ্যাশন লিমিটেড নামের পোশাক কারখানায় অপারেটর পদে চাকরি করতো।
এক বছর আগে বরগুনা জেলার তালতলী বড়বালিয়াতলী এলাকার মীমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নিহত অনিক।
নিহত অনিকের স্ত্রী পোশাক শ্রমিক মীম বলেন, গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় কারখানায় কাজের ফাঁকে পাশের এক অপারেটরের মোবাইল ফোন দিয়ে স্বামী অনিকের সাথে কথা বলেন তিনি। খাওয়া-দাওয়া ও বাড়িতে বেতনের টাকা পাঠানো হয়েছে কিনা জানতেই স্বামীকে ফোন করেন তিনি।
একপর্যায়ে কথা বলতে দেখে কারখানার এডমিন ম্যানেজার পিন্টু, ফ্লোর ইনচার্জ হারুন, সুপারভাইজার রাকিব ও টাইমকিপার রাকিব ফ্লোরের সকল শ্রমিকের সামনে মীমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
মীমের স্বামী অনিক অপরপ্রান্ত থেকে গালি-গালাজের অশ্লীল কথাগুলো শুনতে পেয়ে বাসা থেকে ওই কারখানাটির গেটে চলে আসেন। পরে স্ত্রী মীমকে বকা-ঝকার প্রতিবাদ করে তাকে এই কারখানায় চাকরি করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় অনিক।
এসময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে অনিককে কিল ঘুষি ও থাপ্পর দিয়ে কারখানা গেট থেকে বিদায় করে দেয় কারখানার কয়েকজন। তবে মীমকে কারখানা থেকে বের হতে দেয়নি।
মীম আরো জানায়, পরে বেলা সোয়া ১টায় দুপুরের খাবারের মূহুর্তে অনিক পুণরায় ওই কারখানা গেটে তাকে আনতে যায়। একপর্যায়ে মীমকে নিয়ে এডমিন ম্যানেজার পিন্টু, ফ্লোর ইনচার্জ হারুন অর রশিদ, সুপার ভাইজার রাকিব ও টাইম কিপার রুবেল কারখানার গেটের কাছে আসেন। সেখানে পুণরায় তাদের সাথে অনিকের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এডমিন ম্যানেজার পিন্টু অনিককে ঘুষি ও লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। সাথে সাথে অন্যান্যরাও একই কায়দায় কিল, ঘুষি, লাথি মারে ও নিরাপত্তাকর্মীরা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে অনিককে রক্তাক্ত জখম করে।
মীম আরো বলেন, এ ঘটনায় অপমান সহ্য করতে না পেরে বাসায় ফিরে বিকেল সাড়ে ৩টায় গলায় রশি লাগিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়ে অনিক। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
মীম তার স্বামী অনিককে হত্যার জন্য কারখানার এডমিন ম্যানেজারসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার এসআই রাকিব বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করার পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে লাশ এখনও পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
ঘটনায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। তবে মারধরের সাথে জড়িত কাউকে এখনো আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা