১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অধরাই থাকলো বিশ্বজিতের

অগ্নিকাণ্ডে নিহত বিশ্বজিৎ সরকার - সংগৃহীত

ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চেয়েছিল ১৭ বছরের এক হতদরিদ্র কলেজ ছাত্র বিশ্বজিৎ সরকার। কঠোর পরিশ্রম করে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতো সে। নিজের পড়াশুনা চালাতে পড়ালেখার পাশাপশি সময় সুযোগ মতো পার্টটাইম কাজ করতো শরীয়তপুর জেলার পালং উত্তর বাজারের গোপাল ঘোষের মিষ্টির দোকানে।

আজ শুক্রবার গভীর রাতে পালং বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিশ্বজিতের সে স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একই ঘটনায় বিশ্বজিতের সহকর্মী ও একই দোকানের কর্মচারী পলাশ বৈরাগীও পুড়ে মারা যায়। এ ঘটনার পর নিহতদের পরিবার, সহপাঠী, স্বজন ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

বিশ্বজিৎ এর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত বিশ্বজিৎ মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের হতদরিদ্র রবি সরকারের ৩ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। সে নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম করে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখতো। শত কষ্টের মাঝেও পড়ালেখা থেকে ছিটকে পড়েনি বিশ্বজিৎ। ২০১৭ সালে মাদারীপুর জেরার বাহাদুরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে পাশ করে বিশ্বজিৎ। এইচ এস সিতে ভর্তি হয় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার এ.বি.সি.কে সৈয়দ আবুল হোসেন মহাবিদ্যালয়ে। এ বছর বিশ্বজিত দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিল।

তার বাবা রবি সরকার একজন কির্ত্তণ (হরে কৃষ্ণ) সংগীত শিল্পী হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াতে হয়। দারিদ্র্যতা ঘোচাতে বড় মেয়ে শিল্পী সরকারকে কির্ত্তণের শিল্পী হিসেবে রাখেন নিজের সাথে রাখেন রবি সরকার।

পরিবারে অভাব অনটন দেখে বিশ্বজিৎ পড়ালেখার পাশাপশি বিভিন্ন সময় পার্টটাইম কাজ করতো। বিশ্বজিৎ এর আত্মীয় একই গ্রামের সুকচান বৈরাগীর ছেলে পলাশ বৈরাগী শরীয়তপুর জেলার পালং বাজারের গোপাল ঘোষের মিষ্টির দোকানে কাজ করে। পলাশের হাত ধরেই বিশ্বজিৎ গোপাল ঘোষের মিষ্টির দোকানে কাজে আসে।

কলেজ বন্ধ থাকায় গত ১৫ দিন পূর্বে বিশ্বজিৎ গোপাল ঘোষের মিষ্টির দোকানে নিয়মিত কাজে যোগ দেয়। আজ শুক্রবার রাতে গোপাল ঘোষের মিষ্টির দোকান আগুনে পুড়ে যায়। সেই সাথে বিশ্বজিৎ ও তার সহকর্মী পলাশ বৈরাগীও পুড়ে মারা যায়।

শরীয়তপুরে লাশ গ্রহন করতে এসে বিশ্বজিতের বড় ভাই কৃষ্ণ সরকার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের আত্মীয় সুকচান বৈরাগীর ছেলে পলাশ বৈরাগী গোপাল ঘোষের দোকানে ১ যুগ ধরে কাজ করে। পলাশের হাত ধরেই বিশ্বজিৎ গোপাল ঘোষের মিষ্টির দোকানে কাজে আসে। ভাগ্যের নির্মম পরিস্থিতি আজ এ অবস্থায় তাদের দুজনকেই কেড়ে নিয়েছে। আমার বাবা ও বোন শিল্পী এখন হরে কৃষ্ণ কির্ত্তণ করতে সিলেটে অবস্থান করছে। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ আমাদেরকে অনেক সহায়তা করেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের দুই পরিবারকে তাৎক্ষনিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া দোকান ও বাড়ির মালিকদের তালিকা করে তাদের টিন ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। যাতে পুনরায় ব্যবসা চালু করতে পারে। তালিকা করার জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেয়া আছে।


আরো সংবাদ



premium cement