১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিন বছর ধরে স্কুলে অনুপস্থিত শিক্ষক দম্পতি, তারপরও...

-

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের আনন্দবাজার পঞ্চবটি এলাকার হাজী মতিউর রহমান সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সানজিয়া ইয়াসমিন ও সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান সরকার নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও খাতায় স্বাক্ষর করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও মাহমুদুর রহমান সরকার স্কুলে অনুপস্থিত থেকে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে দুইবছর ধরে স্কুল ফান্ড থেকে প্রতি মাসে সাড়ে ৮ হাজার টাকা করে বেতন তুলেছেন।

বিদ্যালয়ের সভাপতির ছেলে ও পুত্রবধু হওয়ার সুবাদে এই দুইজন শিক্ষক এমন অপকর্ম করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জানা যায়, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নে আনন্দবাজার পঞ্চবটি এলাকার হাজী মতিউর রহমান সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০৪ সালে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান মাহমুদুর রহমান সরকার ও ২০১৫ সালের জুলাই মাসে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান তার স্ত্রী সানজিয়া ইয়াসমিন।

নিয়োগের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন তারা। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করলেও মাহমুদুর রহমান স্কুলে এসে কোন একদিনের জন্যও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেননি বলে জানিয়েছেন শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। এমনকি শিক্ষার্থীরা তাকে চেনেও না।

এছাড়াও মাহমুদুর রহমানের স্ত্রী সানজিয়া ইয়াসমিনের নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আবু তালেব নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেননি। এমনকি নিয়োগের পর থেকে বিদ্যালয়ে না এসেও হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করছেন সানজিয়া।

অফিস সহকারী আবার কখনো কখনো প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে বাড়িতে হাজিরা খাতা নিয়ে এসে স্বাক্ষর করছেন এই শিক্ষক দম্পতি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বড় ভাই ও ভাবী হওয়ার সুবাদে প্রধান শিক্ষক তাদের এই অপকর্মে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার, শাহিন আলম, সাদিয়া আক্তার জানান, সানজিয়া ইয়াসমিন ও মাহমুদুর রহমান নামের কোন শিক্ষককে তারা বিদ্যালয়ে কখনো দেখেনি এবং চেনেও না। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও এই দুইজনের কেউ কখনো স্কুলে ক্লাস নেয়নি বলেও জানায় তারা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ২০০৩ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হাজী মতিউর রহমান। তিনি নিজে সভাপতি, ছেলে মাকসুদুর রহমান প্রধান শিক্ষক, আরেক ছেলে মাহমুদুর রহমান সরকার সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষক, ছেলের স্ত্রী সানজিয়া কম্পিউটার শিক্ষক। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্যপদে হাজী মতিউর রহমানের পরিবারের পাঁচজন সদস্যের নাম রয়েছে।

বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলী জানান, মাকসুদুর রহমান ২০০৪ সালে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর দীর্ঘ ৫ বছর স্কুলে অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফিসহ উন্নয়নের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় হওয়া টাকা প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বিধি মোতাবেক কোন খরচ করেন না। তাদের মনগড়া মতো অর্থ আদায় করে নিজেদের পকেটে ভরে নিয়ে যান। স্কুলের স্টক রেজিস্টার, ক্যাশ বই, রশিদ বই বিতরণ রেজিস্টার পরিচালনা করা হয় না। এগুলো না থাকার কারনে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি বিদ্যালয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগগুলো কাজে লাগাচ্ছেন।

বিদ্যালয়ের জমি দাতা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের নামে ৩৭ শতাংশ জমি দান করার দুইবছর পর জানতে পারি জমিটি মতিউর রহমান নিজের নামে সাফকবলা করে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে ঘটনাটি সাথে সাথে জানিয়েছি। আমি স্কুলের নামে জমি দান করলেও তিনি তা নিজের নামে লিখে নিয়েছেন।

হাজী মতিউর রহমান জানান, স্কুলে খন্ডকালীন অতিরিক্ত শিক্ষক থাকার কারনে তাদের এমপিও না হওয়ার পর্যন্ত দুজন শিক্ষককে স্কুলে যোগদান করতে মানা করা হয়েছে। তাছাড়া কম্পিউটার শিক্ষক বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। বিদ্যালয় পরিচালনাসহ বিভিন্ন কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

বিদ্যালয়ের জন্য দান করা জমি নিজের নামে লিখে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, জমিটি আমি আজিজুলের কাছ থেকে নগদ টাকায় সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে ক্রয় করেছি। আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

সোনারগাঁও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রধান বলেন, হাজী মতিউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর তদন্ত করে প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে হাজী মতিউর রহমান সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমান সরকার বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অনুমতি নিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম।

সানজিয়ার ইয়াসমিনের বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গিয়েছিলেন। তাঁর ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও বিদ্যালয়ে হাজির না হওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করবো। তারপরও হাজির না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
দেশে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের অংশ নিতে মানা সবল-দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার কাজ শেষ হতে কত দিন লাগবে? জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত

সকল