১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কানধরা মামলায় সেলিম ওসমানকে অব্যাহতি

শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠ-বস করাচ্ছেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান (ইনসেটে - সেলিম ওসমান) - সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরিয়ে লাঞ্ছনা করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এমপি সেলিম ওসমানকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ড. এ কে এম ইমদাদুল হক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

একই সাথে মামলার অপর আসামি মো. অপুর অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে দিয়ে শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগে দন্ডবিধির ৩২৩ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়। পাশাপাশি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৮ ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন আদালত। চার্জ শুনানির সময় সেলিম ওসমান, মো. অপু ও শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিকালে শ্যামল কান্তি আদালতকে জানান, সেলিম ওসমান নিজে তার কানে আঘাত করে এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এর মাধ্যমে তিনি সমগ্র শিক্ষকজাতিকে অপমান করেছেন। এখন তিনি দুই কানেই শুনতে পাননা। যার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক তাকে কানে হেয়ারিং মেশিন ব্যবহার করতে হয়। তিনি এই ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করেন।

অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুলও শ্যামল কান্তির বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। তাদের এভাবে অপমান করার অর্থ গোটা জাতিকে অপমান করা। যেহেতু মামলার জুডিশিয়াল প্রতিবেদনে দুইজন আসামীর বিরুদ্ধেই শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মারধর করে আহত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাই উভয় আসামির বিরুদ্ধেই চার্জ গঠন করা হোক।

অন্যদিকে সেলিম ওসমানের পক্ষে ব্যারিস্টার মো. রায়হান বলেন, জুডিশিয়াল প্রতিবেদনে কানে আঘাত করার সত্যতা প্রকাশ পায়নি। সেখানে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কেবল কান ধরে উঠ-বস করানোর কথা বলা হয়েছে। আর সেলিম ওসমান তা করেছিলেন জনরোষ থেকে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে বাঁচানোর জন্য। যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে তিনি বরং শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে বাঁচিয়েছেন। তাই এই ঘটনার পিছনে সেলিম ওসমানের অসৎ কোনো উদ্দেশ্য না থাকায় তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হোক।

শুনানি শেষে বিচারক সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মতো কোনো উপাদান না থাকায় তাকে অব্যাহতি প্রদান করেন। অপর আসামী অপুর বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় দন্ডবিধির ৩২৩ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন।

আদালত সেলিম ওসমানকে অব্যাহতির আদেশ দেয়ার পর শিক্ষক শ্যামল কন্তি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গতবছর ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে ঢাকার আদালতে বিচারের জন্য বদলির নির্দেশ দেন। এরপর আদালত দন্ডবিধির ৩২৩/৩৫৫/৫০০ ধারায় মামলাটি আমলে গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ১৩ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করা হয়। এরপর দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।


আরো সংবাদ



premium cement