২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মাদারীপুরে আউলিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ

আতঙ্কে ২ শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী, পাঠদান ব্যাহত
-

মাদারীপুর সদর উপজেলার ৩৯নং ছিলারচর আউলিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে দিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। আতঙ্কের মুখে প্রায় দুইশতাধিক শিক্ষার্থী।

বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন, যা অনেক আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ে আলাদা কোনো ভবন না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রায় দুই শতাধিক শিশুশিক্ষার্থীকে ঝুঁকির মধ্য দিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৩০ সালে শুরু হওয়া ৩৯নং ছিলারচর আউলিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৯ সালে একটি ৪ কক্ষের নতুন ভবন নির্মান করা হয়। নির্মাণের ১৫ বছরের মধ্যে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সৃষ্টি হয়। বর্ষার সময় একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে ক্লাস রুমগুলো ভিজে যায়। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া অভিভাবক তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠাতে রীতিমতো ভয় পাচ্ছে।

সমাপনীতে শতভাগ পাশ করা স্কুলটি ভবনের কারণে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে এবং শিক্ষার সকল কার্যক্রমে প্রভাব ফেলছে।

এছাড়াও বিদ্যালয়ে প্রায় দুইশ’ ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও শিক্ষক রয়েছে চারজন। তার মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে একজন শিক্ষক বদলী হয়েছেন, একজন রয়েছে ছুটিতে, মাত্র দুজন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

চতুর্থ শ্রেণীর একাধিক ছাত্রীরা জানায়, ‘আমাদের এই গরমে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ক্লাসে কোনো ফ্যান নাই। আমরা দ্রুত নতুন একটি ভবন চাই।’ তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীরা জানায়, ‘ছাদের বালু সিমেন্ট (প্লাস্টার) খসে গায়ের ওপর পড়ে। আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে ক্লাস করছি। আমাদের সঠিক পড়াশুনা করার ব্যবস্থা যেন সরকার করে দেয়।’ পঞ্চম শ্রেণীর একাধিক ছাত্র বলে, ‘সরকারের কাছে একটাই দাবি- আমরা একটি নতুন ভবন চাই। আমরা ভালোমতো পড়াশুনা করতে চাই। আমরা এই দেশকে একটি সুন্দর দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।’

৩৯নং ছিলারচর আউলিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিরিন আক্তার জানান, আলাদা কোনো ভবন না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ও লাইব্রেরি হিসাবে ব্যবহার করছি।

তিনি জানান, এর আগে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এই বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। আমাদের বিদ্যালয় অনেক বছর ধরে শতভাগ পাশসহ জিপিএ-৫ পেয়ে আসছে। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি আমরা এ স্কুলে একটি সুন্দর ভবন চাই। যেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নির্বিঘেœ আনন্দের সাথে পড়াশুনা করতে পারবে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো: সাইয়েদুল হক নান্নু মিঞা ও এলাকাবাসীরা জানান, ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় ক্লাসরুম কম, টেবিল বেঞ্চের সঙ্কট, এই গরমে শিক্ষকরা হাত পাখা নিয়ে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করছেন। ছাত্র-ছাত্রীরাসহ শিক্ষক-শিক্ষিকারা গরমে অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষকের সঙ্কট রয়েছে। এবং বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান হচ্ছে। আমাদের এই স্কুলের নতুন একটি ভবন নির্মাণ অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন জরুরি ভিক্তিতে আমাদের স্কুলে নতুন একটি ভবন যেন দেয়া হয়।

মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার রুবিনা আক্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা আমি আগে জানি নাই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবো। তবে আমি চেষ্টা করবো যথাশিগগিরই কিছু একটা করার।’

মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: আজাহারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল অত্যন্ত ভালো। তবে বিদ্যালয়ে নতুন কোনো ভবন নেই। আমরা শিগগিরই চেষ্টা করবো বিদ্যালয়টির নতুন একটি ভবন নির্মানের, যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার কোনো প্রকার সমস্যা না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement