২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিক অসন্তোষ, গুলি ও টিয়ার সেল

-

গাজীপুরের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে রবিবার এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্ম বিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। আন্দোলনরত ক’শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা অবরোধ করেছে। উত্তেজিত শ্রমিকরা বেশ কিছু যানবাহন, কারখানা ও দোকানপাটসহ ব্যাপক ভাংচুর করেছে। এসময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
একপর্যায়ে পুলিশ সর্টগানের গুলি ও টিয়ার সেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয়দিকে অন্ততঃ ২৫ কিলোমিটার ব্যাপী যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্ততঃ অর্ধশত কারখানা এদিন ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ডেগেরচালা এলাকার নিট অ্যান্ড নিটেক্স লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ঈদের আগে আগস্ট মাসের পাওনা বেতন ভাতার অর্ধেক পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ। ঈদের ছুটি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়ে শ্রমিকরা তাদের অবশিষ্ট পাওনা পরিশোধের জন্য গত কয়েকদিন ধরে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছিল।
কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার আশ্বাস দিয়ে দিনতারিখ নির্ধারণ করলেও তা পরিশোধ করে নি। সর্বশেষ শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এদিনও তা পরিশোধ করেনি কর্র্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে শনিবার কারখানায় কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করে। কর্তৃপক্ষ এতে সায় না দেয়া শ্রমিকরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বারবার আশ্বাস দিয়েও বেতন ভাতা পরিশোধ না করায় একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাত ১০টার দিকে কারখানা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এসময় পুলিশের মধ্যস্থতায় কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনার পর শ্রমিকদের বেতন ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের আশ্বাস দিলে প্রায় আধাঘন্টা পর শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে শনিবার রাতে ওই কারখানার সরবরাহ লাইনের পানি পান করে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে- এমন খবর কারখানায় ও আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরে। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে ওই কারখানার শ্রমিকরা রবিবার সকালে কাজে যোগ দিতে কারখানার গেইটে এসে জড়ো হয়। কিন্তু তারা কাজে যোগ না দিয়ে গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের পাওনাদি পরিশেধের দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় পানি পানে অসুস্থ্যদের মধ্যে কয়েকজন শ্রমিক মারা গেছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। উত্তেজিত শ্রমিকরা সকাল ১০টার দিকে কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা লরিসহ বিভিন্ন মালামাল সড়কের উপর রেখে অবরোধ সৃষ্টি করে। এসময় আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে এসে আন্দোলনরতদের সঙ্গে যোগ দেয়। বেশ কিছু সংখ্যক বহিরাগতরাও তাদের সঙ্গে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে তারা যানবাহনসহ আশেপাশের বিভিন্ন কারখানা, দোকানপাট নির্বিচারে ভাংচুর করতে থাকে। এতে ওই মহা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে উভয়দিকে অন্ততঃ ২৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনরতদের সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এসময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে পুলিশের অন্ততঃ ১০ সদস্য আহত হয়। পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ব্যাপী পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পথচারী ও ব্যবসায়ীরা আতংকিত হয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। এতে অন্ততঃ ৪০জন আহত হয়েছে। এক পর্যায়ে পুলিশ পুলিশ সর্টগানের গুলি ও টিয়ার সেল ছুড়ে বেলা আড়াইটার দিকে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে বিকেলে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
ওই কারখানার শ্রমিক কালাম বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের পাওনা বেতন ভাতা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধের পাঁয়তারা করছিল। শ্রমিকদের যাতে বেতন না দিতে হয়, সেজন্য শ্রমিকদের দাবী দমন করতে কারখানা কর্তৃপক্ষ কৌশলে ট্যাংকের পানির সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দেয়। শনিবার রাতে ওই পানি খেয়ে বেশ কারখানার কয়েকজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাতেই তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও ওই ঘটনার জেরে একই সময়ে চান্দনা চৌরাস্তার নলজানী এলাকার শান্তাবুর কারখানার শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়ক অবরোধ ও ভাংচুর করে। এসময় তারা পাশ্ববর্তী দোকানের তেলের ড্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে দীর্ঘ সময় যান বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প পথে গন্তব্যের উদ্দ্যেশে রওনা হন। বেলা দেড়টায় থেকে ডিগ্রি পরীক্ষা থাকায় রাস্তায় বেরিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় জটিলতায় পড়েন অনেক পরীক্ষার্থী ও শিক্ষক।
জিএমপি’র গাছা থানার ওসি কাজী ইসমাইল হোসেন জানান, ওই কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক রয়েছে। তাদের সমর্থনে আশপাশের কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক সড়কে নেমে এসেছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডেগেরচালা ও আশেপাশের এলাকার প্রায় অর্ধশত কারখানা রবিবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় বিজিএমইএ কর্মকর্তারা এক জরুরী বৈঠকে বসেছে। এছাড়া জিএমপির কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমানও রবিবার কারখানা এলাকা পরিদর্শন ও বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের এএসপি আমিরুল আলম বলেন, “পানি পানে শ্রমিকের মৃত্যুর খবরটি পুরোপুরি গুজব। আমরা কোন শ্রমিকের মৃত্যুর খবরের সত্যতা পাইনি।


আরো সংবাদ



premium cement