১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেবিদ্বারে প্রসবকালীন নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন, হাত ও দেহ ডাস্টবিনে

দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে - সংগৃহীত

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফাতেমা বেগম নামে এক প্রসুতির গর্ভের সন্তান স্বাভাবিকভাবে প্রসবের জন্য ভর্তি হওয়ার পর ওই হাসপাতালের নার্স ও এক আয়া মিলে প্রসব করানোর সময় প্রসুতির পেটে নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এতে প্রসুতির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে পেটে সন্তানের মাথার অংশ রেখে তড়িঘড়ি করে তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অপারেশন চালিয়ে রবিবার ওই প্রসুতির গর্ভ থেকে সন্তানের মাথার অংশ বের করে আনলেও তার অবস্থা বর্তমানে আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন পরিবারের স্বজনরা। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটলেও দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বশীল মেডিক্যাল অফিসার ডা. আহসানুল হক ও ডা. ডা. নীলা পারভীন কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবির। এ ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য শনিবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার ডা. নীলা পারভীনের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হন।

ফাতেমার স্বামী সেলিম মিয়া ও স্বজনরা জানান, প্রসব বেদনা থাকলেও কোন চিকিৎসক না থাকায় সন্তান প্রসবের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। হাসপাতালের নার্স আছিয়া ও ঝর্না রোগীর স্বজনদের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের জন্য বাইরের দোকান থেকে ঔষধপত্র ক্রয় করান। পরবর্তীতে প্রসব বেদনায় প্রসুতি কাতর হয়ে পড়লেও সময়মত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

একপর্যায়ে ওই রাত সাড়ে ১১টার দিকে নার্স আছিয়া, ঝর্না ও আয়া মিলে ফাতেমার গর্ভের সন্তানের পা এবং হাত ধরে টানাটানি শুরু করলে হাত-পাসহ অর্ধেকাংশ ছিঁড়ে প্রসুতির পেট থেকে বেরিয়ে আসে এবং মাথা ছিঁড়ে পেটে থেকে যায়। এ অবস্থায় প্রসুতির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে গভীর রাতে প্রসুতিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এই ঘটনা ধামা চাপা দিয়ে নবজাতকের ছেড়া হাত ও দেহ হাসপাতালের পরিত্যাক্ত ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। সকালে ওই সরকারী হসপিটালের পিছনে কাটা হাত পরে থাকতে দেখে জানা জানি হলে এই ঘটনা বের হয়। রবিবার ওই হাসপাতালে অপারেশন করে প্রসুতির পেটে থাকা সন্তানের মাথাসহ অর্ধেকাংশ বের করে আনা হয়। বর্তমানে ওই প্রসুতি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

এদিকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবির জানান, দায়িত্বশীল মেডিক্যাল অফিসার ডা. আহসানুল হক ও ডা. ডা. নীলা পারভীনকে না জানিয়ে রাতে নার্স সিয়ির ষ্টাফ নার্স আছিয়া, ঝর্না ও এক আয়া মিলে প্রসুতির গর্ভের সন্তান ডেলিভারীর চেষ্টা করে। এসময় সন্তানের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে মাথার অংশ পেটে রেখেই প্রসুতিকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনার তদন্তের জন্য দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তামান্না সোলেমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব একই হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.মঞ্জুর রহমান ও সদস্য মেডিক্যাল অফিসার ডা. আহসানুল হক মিলু। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান জানান, দেবিদ্বার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে আমার কাছে যে তথ্য এসেছে তাতে আমি মর্মাহত হয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধের দাবি (পুরনো নিউজ)
প্রকাশিত : ৪ মে ২০১৭
প্রসবের সময় অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। সেই সঙ্গে এতে জড়িত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগম মুক্তা ২০১৭ সালের মে মাসে জাতীয় সংসদে এই দাবি জানান।

সংসদে ৭১ বিধিতে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নোটিশ উত্থাপন করে তিনি এ দাবি জানান।

সংরক্ষিত আসনের এই সাংসদ বলেন, ইদানীং উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বাংলাদেশে স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পরিসংখ্যান অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আশঙ্কাজনক। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করা যাবে তখনই, যখন প্রসবকালীন জটিলতার কারণে শুধু প্রসূতি মায়েদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষিত ও ধনী মানুষের মধ্যে অস্ত্রেপচারের প্রবণতা বেশি। কিন্তু অস্ত্রোপচার আসলেই প্রয়োজন হলে সেটা ধনী-গরিব শ্রেণি-বিভেদ সৃষ্টি করবেন না, সবার জন্য তা সমান দরকার।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ৮০ শতাংশ সন্তান প্রসব হচ্ছে সিজারের মাধ্যমে। বিশেষ করে পরিবারগুলো যত ধনী হচ্ছে তত বাড়ছে সিজারিয়ানের হার। মেডিকেল ইন্ডিকেশন মেনে চললে ধনী-দরিদ্র সবক্ষেত্রে এর হার এক হতো।

নূরজাহার বেগম বলেন, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেল্থ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০১৪ থেকে জানা যায়, দেশের হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে ১০ জন শিশুর মধ্যে ৬ জন শিশুর জন্ম হয় সিজারের মাধ্যমে। বিডিএইচএসের জরিপে আরও জানা যায়, ২০০৭ সালে সিজারের মাধ্যমে ৯ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় সিজারে। ২০১১ সালে ১৭ শতাংশ, ২০১৪ তা বেড়ে ২৩ শতাংশ হয়।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রচলিত স্বাস্থ্য বুলেটিন ২০১৫ তে দেখা যায়, দেশের উপজেলাগুলোতে সিজারের মাধ্যমে শিশুর জন্মের সংখ্যা প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে। ২০১৩ সালে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে সন্তান প্রসবের জন্য ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২১ জন প্রসূতি মা ভর্তি হন। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ৮৬৮ জন প্রসূতি স্বাভাবিক প্রসব করেন, আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩ শিশুর। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০০ প্রসূতির মধ্যে শতকরা ৮০ জনেরই স্বাভাবিক প্রসব করানো যেত।

তিনি বলেন, মা ও শিশুকে রক্ষা করার জন্য অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধ করা প্রযোজন। সে জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন, সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলারভিত্তিতে হাসপাতাল-ক্লিনিক ইত্যাদির অনুমতি প্রদান ও নবায়ন করার বিধান চালু করা, প্রসূতিবিদদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, নিরীক্ষণ, জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা, অত্যাবশ্যকীয় সিজারিয়ান সেকশনের প্রয়োজনীয়তা এবং অনাবশ্যক সিজারের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালানো, মানদণ্ড নির্ধারণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিকতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে অবসটেট্রিক ও গাইনিকলোজিকেল সোসাইটি অব বাংলাদেশকে (ওজিএসবি) পূর্ণাঙ্গভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


আরো সংবাদ



premium cement
বান্দরবানের কেউক্রাডং পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান : আটক ৮, অস্ত্র উদ্ধার স্বাধীনতা সূচকে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম নাটোর পৌরসভা কার্যালয়ের ভিতরে দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত কাঁঠালিয়ায় মাঠে ছাগল আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোরে মৃত্যু সালমান খানের বাড়িতে গুলির ঘটনায় গ্রেফতার ২ আরো দুই সদস্য বাড়িয়ে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন রাবির নতুন জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে অপরাধ না করেও আসামি হওয়া এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানোৎসবে নেমে শিশুর মৃত্যু ধূমপান করতে নিষেধ করায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বড় বোনের বৌভাতের গিয়ে দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র নিহত

সকল