১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দাফন সরাইলে জীবিত উদ্ধার নারায়নগঞ্জে!

উদ্ধারের পর পুলিশ হেফাজতে আসাদুল্লাহ। - ছবি: নয়া দিগন্ত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে আসাদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি নিখোঁজ ছিলেন ২৭ দিন। নিখোঁজ হওয়ার ২৭দিন পর তার লাশ উদ্ধার করে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। দাফনের ৯ দিন পর শুক্রবার (১৪সেপ্টেম্বর) সকালে নারায়নগঞ্জের সোনারগাওঁ পুলিশ সেই আসাদুল্লাহকে জীবিত উদ্ধার করেছেন।

মৃত ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধারের বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। উদ্ধারকৃত আসাদুল্লাহ উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের অরুয়াইল গ্রামের আলী আকবরের পুত্র।

জানা যায়, অরুয়াই গ্রামে একটি জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আসাদুল্লাহ এর সাথে একই ইউনিয়নের ধামাউরা গ্রামের আক্তার হোসেনের পুত্র সফিক মিয়াসহ স্থানীয় কয়েকজনের বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে সফিক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা করেছিলেন আসাদুল্লাহ। এ ব্যপারে গত ৫ আগস্ট সফিকের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন আসাদুল্লাহ।

এরপর ৯ আগস্ট নিখোঁজ হন আসাদুল্লাহ। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে গত ৬ সেপ্টেম্বর সরাইল উপজেলার চুন্টা গ্রামের একটি বিল থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অর্ধ-গলিত লাশ উদ্ধার করেন পুলিশ। নিখোঁজ আসাদুল্লাহ এর শারীরিক গঠনের সাথে উদ্ধার হওয়া লাশের মিল থাকায় তার পরিবারের লোকজন লাশটি আসাদুল্লাহর বলে শনাক্ত করে। উদ্ধার হওয়া লাশটি এলাকায় নিয়ে দাফন করেন তার পরিবারের লোকজন।

এ ঘটনার পর ৭ সেপ্টেম্বর আসাদুল্লাহর মেয়ে মোমেনা বেগম বাদী হয়ে সফিক মিয়াকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো: মফিজ উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, উদ্ধার হওয়া লাশ দেখে আসাদুল্লাহর পরিবার শনাক্ত করে যে এটি তারই লাশ। তারপরও লাশের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।

তিনি আরো জানান আসাদুল্লাহকে সোনারগাঁও পুলিশ উদ্বার করে শুক্রবার সন্ধ্যায় সরাইল থানায় নিয়ে আসে। শনিবার জবানবন্দি গ্রহণের জন্য তাকে আদালতে হাজির করা হবে। জবানবন্দি গ্রহণের পর পুরো ঘটনা জানা যাবে।


আরো পড়ুন: দাফনের ১১ দিন পর জীবিত উদ্ধার সাথী!

যশোর অফিস, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গত ২৯ আগস্ট রাতে যশোরে সরকারি সিটি কলেজ এলাকা থেকে পলিথিন মোড়ানো অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই লাশ উদ্ধারের খবরে পর দিন ৩০ আগস্ট যশোর কোতোয়ালি থানায় ছুটে যান চৌগাছার নয়ড়া গ্রামের আমজাদ আলী। তিনি ‘অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি’ তার মেয়ে সাথী খাতুনের বলে শনাক্ত করেন। সেই লাশ উদ্ধার ও দাফনের ১১ দিন পর সেই সাথী খাতুনকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। ‘পরকীয়া প্রেমিকের’ ধর্মপিতার বাড়ি সদর উপজেলার জলকর গ্রামের আজিজ লস্করের বাড়ি থেকে রোববার সকালে পুলিশ তাকে জীবিত উদ্ধার করেছে।

চৌগাছার নয়ড়া গ্রামের আমজাদ আলীর মেয়ে সাথী খাতুন চৌগাছার চাঁদপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী। তাদের এহসান নামে ছয় বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

সাথীর ভাই বিপ্লব হোসেন বলেন, সাথী গত ১৪ জুলাই ‘বাইরে কাজে যাচ্ছি, বিকেলে ফিরে আসবো’ বলে স্বামীর বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান ছিল না। সাথী নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা আমজাদ আলী বাদি হয়ে চৌগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন।

গত ২৯ আগস্ট রাতে যশোরে সরকারি সিটি কলেজ এলাকা থেকে লাশ উদ্ধারের খবরে পর দিন ৩০ আগস্ট যশোর কোতোয়ালি থানায় ছুটে যান চৌগাছার নয়ড়া গ্রামের আমজাদ আলী। তিনি ‘অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি’ তার মেয়ে সাথী খাতুনের বলে শনাক্ত করেন। বিপ্লব হোসেন দাবি করেন, তার বাবা লাশ দেখে হতবিহ্বল হয়ে তাৎক্ষণিক লাশটি তার বোনের বলে শনাক্ত করেছিলেন। কিন্তু পরে এ নিয়ে তদন্ত হলে তিনি জানতে পারেন তার ভুল হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া সাথী খাতুন বলেন, ‘স্বামীর নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে ১৪ জুলাই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে যশোরে চলে আসি। শহরের নিউ মার্কেটে বাস থেকে নেমে এক ঘণ্টা বসেছিলাম। ‘একপর্যায়ে সদরের ফতেপুর ইউনিয়নের জলকর গ্রামে যাই। যাওয়ার পথে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ভেঙে পানিতে ফেলে দিই। এরপর ওই গ্রামের আজিজ লস্করের বাড়িতে আশ্রয় নিই। গত ৭ সেপ্টেম্বর আজিজ লস্কর পত্রিকার পাতায় আমার মৃত্যুর সংবাদ দেখেন। তারপর থেকে তিনি আমাকে আর আশ্রয় দিতে রাজি হননি।’

‘এরপর ৭ সেপ্টেম্বর বাড়িতে আব্বার মোবাইল নম্বরে (মুখস্থ ছিল) কল করি। পুলিশকেও বিষয়টা জানাই। পুলিশ আজ উদ্ধার করেছে।’ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলছেন, ‘মেয়েটির সাথে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সময়ে একাধিক ছেলের সম্পর্ক ছিল। তদন্ত করতে গিয়ে পরিবারের লোকজন জানালো গত ১৬ মার্চ সাথী খাতুন ভারতে গিয়েছিল চিকিৎসার জন্য। এক মাস ১১ দিন পর চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরেন। তবে সাথী একাই গিয়েছিলেন ভারতে।’

‘বিষয়টি আমার সন্দেহ হয়। এরপর সাথীর পাসপোর্ট বইটি যাচাই করি। এতে দেখা যায় সাথী ১৬-২৪ মার্চ ভারতে ছিলেন। কিন্তু পরিবারের লোকজন বলছেন ১ মাস ১১ দিন। তাহলে বাকি দিন কোথায় ছিলেন?’

‘ভারতে থাকাকালীন সাথী ভারতের একজনের মোবাইল নম্বর থেকে কথা বলেছিলেন। সেই নম্বরও জোগাড় করি। কথা বলে জানতে পারি, সাথী ভারতে প্রবেশ করার এক ঘণ্টা আগে মালেশিয়া প্রবাসী চাঁদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মান্নু ওপারে (ভারতে) হাজির হন। পরে চিকিৎসা শেষে ২৪ মার্চ সাথী ও মান্নু দেশে আসেন।’ ২৪ মার্চ থেকে এক মাসের বেশি সময় সাথী ও মান্নু যশোর সদর উপজেলার জলকর গ্রামের আজিজ লস্করের বাড়িতে অবস্থান করেন।’

তাহলে যে লাশ দাফন করা হয়েছে, সেটি কার? এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিরুজ্জামান বলেন, ‘ধরে নিয়েছিলাম ওই লাশটি সাথীর। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে আসল রহস্য উন্মোচন হয়েছে। এবার ওই লাশটি আসলে কার, সেই রহস্য উদঘাটনে কাজ করব।


আরো সংবাদ



premium cement