১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেরিসঙ্কটে আটকে থাকা গাড়িতে ১৫ গরুর মৃত্যু

গাড়িতেই দমবন্ধ হয়ে মারা গেল ১৫ গরু - ছবি : সংগৃহীত

শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরিঘাটের শরীয়তপুর অংশের নরসিংহপুর আলুরবাজার ফেরিঘাটে যানজট, খাবার সঙ্কট ও তীব্র গরম ও ফেরি সংকটের কারণে গত তিন দিনে ১৫টি গরু মারা গেছে। তীব্র গরম, যানজট ও খাবার সঙ্কটে কোরবানির পশুগুলো অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। আটকে থাকা বাস যাত্রী, ট্রাক চালক ও ট্রাকের হেলপাররা প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। এক সাথে ২ শতাধিক যানবাহনের চাপ থাকায় খাবার সঙ্কট দিয়েছে ফেরিঘাট এলাকায়। এ সঙ্কট কাটাতে ব্যবসায়ী ও গাড়ি চালকরা সরকারের কাছে এ ঘাটে ফেরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, গত দুই তিন দিন যাবত কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌ রুটে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় ও ডুবোচরের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও মালবাহী ট্রাক শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি পার হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত শুরু করে। কোরবানি উপলক্ষে শত শত গরুর ট্রাক এখন অবস্থান করছে আলু বাজার ফেরিঘাটে।

শরীয়তপুরের নরসিংহপুর আলু বাজার ফেরিঘাটে করবী, কুসুমকলি ও সর্বশেষ আজ শুক্রবার যুক্ত হয়েছে মাওয়া ফেরিঘাট থেকে আসা কেতকি নামক একটি ফেরি। মাত্র এই তিনটি ফেরি দিয়ে গাড়িগুলো পারাপারের কারণে প্রায় ২কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফেরি সঙ্কটের কারণে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ২ শতাধিক ছোট বড় যানবাহন।

শত শত যানবাহন আটকা পড়ায় যাত্রী ও চালকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত আলু বাজার ফেরিঘাট প্রান্তে গরমে ঝিনাইদাহ ও সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রামগামী গরু ব্যবসায়ীদের ১৫টি গরু মারা গেছে। গরু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন প্রচণ্ড তাপদাহ ও খাবার সংকটে অসুস্থ হয়ে গরুগুলো মারা যাচ্ছে। গাড়িচালক ও ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ঘাটে আরো অন্তত ৩টি ফেরি দেয়ার দাবী জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহ থেকে চট্টগ্রামগামী গরু ব্যবসায়ী মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আমার গরু গুলো শুধুমাত্র ফেরি সংকট, তীব্র গরম আর খাবার সঙ্কটের কারণে আমার ৪টি গরু মারা গেল।

সাতক্ষিরা থেকে ফেনিগামী গরুর মালিক মোঃ সালাহউদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, আমরা কয়েক জনে মিলে পশুগুলো নিয়ে সাতক্ষীরা থেকে ফেনী যাচ্ছিলাম, আমাদের ৭টি গরু আমাদের চোখের সামনেই মারা যায়। অথচ আমরা কিছুই করতে পারলাম না। আমরা গরিব মানুষ, এখন আমরা এ ক্ষতি কি ভাবে পোষাব?
শরীয়তপুর আলুর বাজার ফেরিঘাটের বিআইডব্লিউটিসির ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার জানান, আলুর বাজার- হরিণাঘাটে মাত্র দুটি ফেরি ছিল, আজ আরো একটি ফেরি যোগ হয়ে প্রতিদিন এক শ' থেকে এক শ' বিশটি গাড়ি পারাপার হতে পারবে। এতে শিগগিরই চাপ কমে যাবে।

সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মঞ্জুরুল হক আকন্দ বলেন, ফেরিঘাটে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন আছে। বৃহস্পতিবার একটি গরু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। এ ছাড়া গরু মারা যাওয়ার কোনো সংবাদ বা অভিযোগ পাইনি।

আরো পড়ুন :

পাবনা-সিরাজগঞ্জের খামারিরা সরবরাহ করছে দুই লাখ কোরবানির পশু
শফিউল আযম, বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা 

গবাদিপশু সমৃদ্ধ পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের খামারি ও চাষিরা প্রায় দুই লাখ কোরবানির পশু দেশের বিভিন্ন হাটে সরবরাহ করছেন। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এসব গরু-মহিষ মোটাতাজা করা হয়েছে। 
এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পথে ভারত থেকে গরু মহিষ আসছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ভারতীয় গরু, মহিষের আমদানি। এতে দেশি গরু-মহিষের দাম কমে যেতে পারে বলে খামারি ও চাষিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, দু’টি জেলায় প্রায় ২২ হাজার গোখামার গড়ে উঠেছে। গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে গবাদিপশু পালন কার হয়। এ অঞ্চলে গোখামারের পাশাপাশি ১০ সহ¯্রাধিক ব্যবসায়ী ও কৃষকের গোয়ালে প্রায় দুই লাখ গরু-মহিষ প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে।


গত মঙ্গলবার বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুরহাট ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৫০-৬০ হাজার গবাদিপশু আমদানি হয়েছে। মুল হাট ছেড়ে প্রাণ ডেইরির বিশাল চত্বর ইছামতি নদী বণ্যানিয়ন্ত্রন বাঁধের উভয় পাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাব্যাপী ছোট, মাঝারি, বড় আকারের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া আমদানি হয়েছে। হাটের সাথে সড়ক ও নৌপথে সহজ যোগাযোগের ব্যবস্থার কারণে টাংগাইল, ঢাকা, কুমিল্লা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারিরা গরু কেনার জন্য এ হাটে এসেছেন। তারা গবাদিপশু কিনে ঈদের বাজার ধরার জন্য সড়ক ও নৌপথে নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সুযোগে ট্রাক ও নৌকার মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ব্যাপারিরা জানিয়েছেন।

ওমরপুর চরের গরুর ব্যাপারী আমজাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু মহিষ আসছে। যারা বৈধ ব্যবসায়ী তারা সরকারকে রাজস্ব দিয়ে করিডোরের মাধ্যমে পশু আমদানি করছেন। চোরা পথেও প্রচুর ভারতীয় গরু, মহিষ দেশে ঢুকছে। এতে দেশি গরুর দাম কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পাবনার সদর, বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, সুজানগর, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, আটঘড়িয়া, ভাঙ্গুড়া সিরাজগঞ্জের সদর, শাহাজাদপুর, উল্লাপাড়া, তারাশ, বেলকুচি, চৌহালীসহ এ অঞ্চলের খামারি ও চাষিরা জানান, প্রাকৃতিক নিয়মে মোটাতাজা গরুর মধ্যে রয়েছে পাবনা ব্রিড, অষ্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড। তবে এর পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় ব্রিডিং পদ্ধতি যা লোকাল ক্রস ব্রিড নামে পরিচিত। এসব ব্রান্ডের সব গরুই মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় বড় করে বাজারে তোলা হয়। গরু মোটাতাজাকরণ একটি নিয়মিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। বিশেষ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত ইউরিয়া, লালিগুড় ও খড়ের একটি বিশেষ মিকচার আট দিন কোন পাত্রে বন্ধ করে রেখে তা রোদে শুকিয়ে গরু-মহিষকে খাওয়াতে হয়। তিন মাস এটা খাওয়ালে গরু-মহিষ খুব দ্রুত মোটাতাজা হয়ে ওঠে। এই গরুর মাংস মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।

খামারীরা ও চাষিরা জানান, সাধারণত গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, লালি গুর, ভাতের মার, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খোসারী, মাসকালাই, মটরেরভূসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেয়া হয়। গরুর জন্য এটা বিজ্ঞনসম্মত। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে ক্রেতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না। এ ধরনের গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা গরু-মহিষের চাহিদা বেশি, দাম ভাল পাওযা যায়।

খামারীরা জানান, কোরবানির ঈদ সামনে এ অঞ্চলের কিছু কিছু অসাধু মওসুমি ব্যবসায়ী গরুকে মোটাতাজা করতে ব্যবহার করছে নানা ওষুধ। তারা রোগাক্রান্ত গরু অল্প টাকায় কিনে মোটাতাজা করে বেশি লাভে বিক্রি করে। অধিক লাভের আশায় গরু মোটাতাজা করতে ব্যবহার করা হয় ষ্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ওষুধ। এসব ওষুধ বিভিন্ন ফার্মেসি গবাদিপশু চিকিৎসালয়ে পাওয়া যায়। ফার্মেসি ব্যসায়ীরা সহজেই এসব ওষুধ গরু ব্যসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এসব ওষুধ গরুকে খাওয়ালে কয়েক মাসের মধ্যে গরুর শরীর ফুলে মোটা হয়ে যায়। এই গরু দেখতে সুন্দর হয়। এ বছর কৃত্রিম পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণের হার অনেক কমে গেছে। এ বছর পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ খামারী ও চাষি প্রাকৃতিক নিয়মে গরু-মহিষ মোটাতাজা করছেন বলে তারা এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামের খামারী আব্দুল মান্নান জানান, তিনি গত বছর ১২টি গরু বিক্রি ৭৫ হাজার টাকা লাভ করেন। এবার তিনি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ১৮টি গরু মোটাতাজা করেছেন। এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বৈধ ও অবৈধ পথে ভারতীয় গরু, মহিষ আমদানি হওয়ায় এ অঞ্চলের গোখামারি ও চাষিরা লোকসানের মুখে পড়তে পারেন বলে তিনি আশঙ্ক প্রকাশ করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আইসিসি! ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইসফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’

সকল