২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন

কানাডার বিনিয়োগ করা সব অর্থ জব্দ করেছে সৌদি আরব

মধ্যপ্রাচ্য
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও সৌদি যুবরাজ - ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরব দেশটির ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের’ অভিযোগে কানাডার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। রিয়াদে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের পাশাপাশি অটোয়ায় নিযুক্ত নিজের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠিয়েছে সৌদি সরকার। খবর বিবিসি, সিএনবিসির। 

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সৌদি রাজতন্ত্র তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না এবং কারো দিকনির্দেশনা মেনে নেবে না।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘রাজতন্ত্র ঘোষণা করছে যে, কানাডায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকে পরামর্শের জন্য তলব করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, কানাডার রাষ্ট্রদূতকে সৌদি আরব ত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে এবং সৌদিতে কানাডার বিনিয়োগ করা সব অর্থ জব্দ করা হয়েছে।

রিয়াদে নিযুক্ত কানাডার দূতাবাস সম্প্রতি সৌদি মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অভিযানের ব্যাপারে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিল। ওই দূতাবাস লিঙ্গ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সামার বাদাওয়ি’র গ্রেফতারেরও প্রতিবাদ জানায়।

কানাডার দূতাবাসের এক টুইটার বার্তায় আরো বলা হয়, “আমরা সব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীকে ‘অবিলম্বে মুক্তি’ দেয়ার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।”

এর প্রতিক্রিয়ায় সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “কানাডার বিবৃতিতে ‘অবিলম্বে মুক্তি’ দেয়ার যে বক্তব্য রয়েছে তা অত্যন্ত আপত্তিকর। দু’টি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।”

আরো পড়ুন :
টনি ব্লেয়ারকে ১ কোটি ১৮ লাখ ডলার দিয়েছে সৌদি আরব
সানডে টেলিগ্রাফ ও মিডল ইস্ট আই, ২৪ জুলাই ২০১৮
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ইনিস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ’। সৌদি আরবে আধুনিক সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে ৯০ লাখ পাউন্ড বা ১ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ এধরনের পরামর্শ একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

এবছরের শুরুতেই টনি ব্লেয়ারের প্রতিষ্ঠানটি এ জন্যে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তিও হয় অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৌদি আরব সরকারের ২০৩০ ভিশনে পরামর্শ দেওয়ার জন্যে।

পরামর্শের শুরুতেই টনি ব্লেয়ারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের বৃহৎ জাতীয় তেল প্রতিষ্ঠান আরামকো’র শেয়ার বাজারে ছাড়াসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ বেসরকারিখাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেয়।

প্রথমে টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সৌদি সরকারের একটি চুক্তি হয় ২০১৬ সালে। ওই বছরেই জানুয়ারিতে টনি ব্লেয়ার ওই চুক্তির জন্যে ১০ মিলিয়ন ডলার নেন। এ অর্থ দেওয়া হয় সৌদি রিসার্চ এন্ড মার্কেটিং গ্রুপের পক্ষ থেকে সৌদি সংস্কার সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর জন্যে।

মোট অর্থ হিসেবে ১২ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়। তবে টনি ব্লেয়ারের ইনস্টিটিউটের ওয়েব সাইটে হরহামেশা সৌদি আরব ও ক্রাউন প্রিন্সের প্রশংসা করা হলেও অর্থপ্রাপ্তির ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

তবে ব্লেয়ারের অফিস বলছে এধরনের অর্থপ্রাপ্তির বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। আর অর্থ নেওয়া হয়েছে সৌদি আরবে সংস্কারের জন্যে। যা প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে টনি ব্লেয়ার মধ্যাপ্রাচ্যে বিশেষ দূত হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০১৬ সালে গাজায় শ্রমিকদের জন্যে কাতারের কাছ থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চুক্তি করতে সমর্থ হন।

সেনা প্রত্যাহার করছে মালয়েশিয়া, কী করবে সৌদি আরব?
দি মালয়েশিয়ান ইনসাইট, ২৩ জুন ২০১৮
অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যে। বিশেষ করে সৌদির সাথে মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক অবনতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিকে কঠিন বার্তা দিয়েছে মালয়েশিয়া।

মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ সাবু বলেছেন, সৌদিতে মোতায়েন তার দেশের সেনারা ইয়েমেন যুদ্ধে বা আইএস- এর বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নেয়নি। মালয়েশিয়া সবসময় নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছে। এখানে বিশ্বের প্রধান কোনো শক্তির রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি আনুকূল্য নেই।

তিনি বলেন, কেন আমরা ইয়েমেনের মতো একটি মুসলিম দেশের ওপর হামলায় জড়িত থাকব? এই ধরণের সহিংসতায় কে জড়িত থাকতে চায়? ইয়েমেন সংঘাতে জড়িত হওয়ার কারণে মালয়েশিয়ার ক্লিন ইমেজ ও নিরপেক্ষ নীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে মালয়েশিয়া কখনো রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে কোনো পরাশক্তির পক্ষ নেয়নি। অথচ এই ঘটনা মালয়েশিয়ার ভূমিকাকে মধ্যপ্রাচ্যে কালিমালিপ্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সৌদি আরবে মোতায়েন মালয়েশীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারের কথা বিবেচনা করছে কুয়ালা লামপুর। কুয়ালা লামপুর জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)-এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে। এ জোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছে মালয়েশিয়া।

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ২০১৩ সালের নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছিল সৌদি আরব। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫ হাজার ৭৫৫ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫০ টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল মোহামেদ আপানদি এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এই অর্থ ছিল মূলত সৌদি অনুদান।

মূলত মালয়েশিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রভাব ঠেকাতেই নাজিব রাজাককে এই অর্থ দিয়েছিল সৌদি আরব। তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ অর্থ প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন করেছিলেন।

মালয়েশিয়ার বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি (পিএএস)। এ দলটির উদ্যোক্তারা মুসলিম ব্রাদারহুডের দর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত। ফলে যে কোনওভাবে পিএএস-এর প্রভাব কমাতে নাজিব রাজাকের দ্বারস্থ হয় সৌদি সরকার।

তবে মালয়েশিয়ার গত নির্বাচনে নাজিব রাজাকের দল পরাজিত হয়। আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের প্রধানমন্ত্রী হন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ। নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসেরও কম সময়ের মাথায় সৌদি আরব থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা এলো।


আরো সংবাদ



premium cement