২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জিপিএ ৫ পেয়েও কাকলীর পরিবারে কান্না

মায়ের সাথে কাকলী - ছবি : নয়া দিগন্ত

চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উপজেলার একমাত্র জিপিএ ৫ ধারী কাকলী আক্তার। কিন্তু তাদের বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ে মা-মেয়ের কান্নার রোল। মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন তো দূরে থাক দিনমজুর বাবা মসজিদ থেকে আনা একটি মাত্র জিলাপি তুলে দিলো মেধাবী মেয়েটিকে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের জিপিএ ৫ পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থী কাকলী আক্তারের মিষ্টি কেনার সামর্থ্যহীন পরিবারটিতে জিপিএ ৫ অর্জনের কোনো আনন্দ লাগেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় বিনা খরচে লেখাপড়া করে জিপিএ ৫ অর্জন করলেও বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির বদলে চরম হতাশায় নিমজ্জিত কাকলীর পরিবারে এখন লেখাপড়া চালানো নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

সরেজমিন জানা যায়, চলতি বছর এইচএসসির ফলাফলে জেলার শিবচর উপজেলার পাঁচটি কলেজের মধ্যে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ ৮৮.৫৯ ভাগ উত্তীর্ণ হয়ে শীর্ষস্থান দখল করে উপজেলার একমাত্র জিপিএ ৫ অর্জনধারী ওই কলেজের মেধাবী ছাত্রী কাকলী। দফায় দফায় পদ্মা নদী ভাঙনের শিকার কাকলীর নিঃস্ব পরিবারটি উপজেলার পাচ্চরে একচালার একটি খুপড়ি ঘরে বাস করে। পাঁচ ভাইবোনের সংসারে বাবা হারুন মাদবর দিনমজুর ও মা তাসলিমা বেগম সংসার দেখাশোনা করেন কষ্টেসৃষ্টে। ছোট সময় থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী কাকলী এসএসসিতে পাচ্চর বালিকা বিদ্যালয় থেকে জীবন সংগ্রাম করে জিপিএ ৫ অর্জন করে। পরে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় ভর্তি ফি ছাড়াই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ কর্তৃৃপক্ষ কাকলীকে পড়ার সুযোগ দেন। 

পাশের বাড়ির সাবেক ইউপি সদস্য বলেন, এই পরিবেশে থেকে কাকলীর এই ফলাফল সত্যিই অবিশ^াস্য। এত ভালো রেজাল্ট করেও ওদের বাড়িতে আনন্দ নেই বরং যেন শোক। ভালো জায়গায় ভর্তি তো দূরে থাক ওদের ঢাকায় যাওয়ার ভাড়াও নেই।

কাকলীর মা তাসলিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, যেখানে ভাত জোটানোই কষ্টকর সেখানে আমাগো সামর্থ্য নেই ওরে পড়ানোর। ও নিজে কষ্ট কইরা এই পর্যন্ত আইছে। 
বাবা হারুন মাদবর বলেন, একদিন কাজ না করলে সংসারই চলে না। ও পড়ছে নিজেরডা দিয়াই। এহন ভালো জায়গায় পড়তে চায়। আমরা কেমনে কি করমু। 

অদম্য কাকলী আক্তার বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, কলেজ ও স্কুলের স্যারদের সহযোগিতায় অনেক কষ্ট করেই পড়ছি। আমার খুব পড়ার ইচ্ছা। কিন্তু আমার মা-বাবা তো পারে না। তাই জানি না কি আছে ভাগ্যে। তবে আমি পড়তে চাই।

পাচ্চর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুল হক বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে আমাদের এমপি লিটন চৌধুরী ও তার বোনের দেয়া বৃত্তির টাকা এবং কলেজটির সহযোগিতায় অতি দরিদ্র কাকলী লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পেরেছে। সবার সহযোগিতা পেয়ে ও নিজেকে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। ওর মতো মেধাবীদের আরো এগিয়ে যেতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। 

ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ মো: হাফিজুর রহমান বলেন, কাকলী অদম্য মেধাবীদের মধ্যেও সেরা। ও এই উপজেলার এবারের একমাত্র জিপিএ ৫ প্রাপ্ত। কাকলী আক্তার অদম্য মেধাবী তার পাশে আমরা শুরু থেকেই ছিলাম। সবাই তার জন্য এগিয়ে এলে ও অনেক এগিয়ে যাবে। কাকলী আক্তারকে সহযোগিতার জন্য ওদের নিজেদের মোবাইলে ০১৯৮৮৩৭১৬৫৮ অথবা অধ্যক্ষর নাম্বারে ০১৭১৬৩৭৭২৯৬ যোগাযোগ করতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement