২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

৮ বছরের শিশুর উপর নির্মম নির্যাতন : স্বামী-স্ত্রী আটক

শিশু নির্যাতন
আটককৃত স্বামী-স্ত্রী ও ডানে নির্যাতিত শিশু - ছবি : নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জে ৮ বছরের গৃহপরিচারিকাকে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার বিকালে এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। নির্যাতিত গৃহপরিচারিকা মাহি আক্তারকে মাহির বাবা-মা না থাকায় পাশের ফ্লাটের ভাড়াটিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। আটক করা হয়েছে গৃহকর্তা আতাউল্লাহ খোকন ও তার স্ত্রী উর্মি আক্তারকে।

আতাউল্লাহ খোকন কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার কাশিপুর গ্রামের মৃত আঃ হাকিম মিয়ার ছেলে।

মামলার বাদী জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, ফতুল্লার পূর্ব ইসদাইর আনন্দনগর এলাকার শহীদুল্লাহর বাড়ির ভাড়াটিয়া আতাউল্লাহ খোকন ও উর্মি আক্তারের বাসায় ৩ মাস ধরে পিতৃ-মাতৃহীন শিশু মাহিকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজে নেয়। এরপর থেকে শিশুটি বাসায় প্রায় সময় কান্নাকাটি করত। শুক্রবার রাতে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে ওই দম্পতির বাসায় গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে শিশুটির হাতে ও মুখে বর্বর নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পায়। তখন শিশুটিকে জিজ্ঞাস করলে সে জানায়, তাকে অহেতুক খুন্তি গরম করে হাতে ও শরীরে ছ্যাকা দিতো। কথায় কথায় মারধর করতো। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে তার হাতে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাকা দেয়ায় তার ডান হাতের চামড়া উঠে যায়। শুক্রবারও সেই ক্ষত হাতে ছ্যাকা দেয়া হয়।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদের জানান, শিশুটিকে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। শিশুটি অনাথ। তার কোনো আত্মীয়-স্বজন না পাওয়ায় প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ওই বাড়ির প্রতিবেশী জাকির বাদী হয়ে নির্যাতনের বিষয়গুলো উল্লেখ করে মামলা করেছেন। শিশুটি পুলিশের হেফাজতে আছে। আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন :
২০১৭ সালে ৩৮৪৫ শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক, ০৯ জানুয়ারি ২০১৮
গত বছর গড়ে প্রতি মাসে ২৮টি শিশু হত্যা এবং ৪৯টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গত বছরের সার্বিক শিশু অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

এ ছাড়া সারা দেশে গত বছরে সার্বিক শিশু অধিকার পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক বলে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এসবের মূলে বিচারহীনতা এবং বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা অব্যাহত হওয়ার কারণ বলে ফোরামের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। রিপোর্ট তুলে ধরেন ফোরামের পরিচালক আবদুস সহিদ। এতে বলা হয় গত বছরে ১২ মাসের জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সংবাদ পর্যালোচনা করে এসব তথ্য তৈরি করা হয়।

এতে বলা হয়, বছরটিতে তিন হাজার ৮৪৫টি শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যাদের মধ্যে এক হাজার ৭১০টি শিশু বিভিন্ন ধরনের অপমৃত্যুর শিকার হয়েছে এবং ৮৯৪টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম জাতীয়পর্যায়ে শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন ২৬৯টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ১৯৯০ সালে জাতিসঙ্ঘ শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে ‘স্টেট অব চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।

এসব তথ্যে দেখা যায়, হয় ২০১৬ সালে তিন হাজার ৫৮৯টি শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, যাদের মধ্যে এক হাজার ৪৪১ শিশু অপমৃত্যুর এবং ৬৮৬টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। অর্থাৎ ২০১৭ সালে সামগ্রিকভাবে শিশু নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে ৭.১৩%, যার মধ্যে শিশু অপমৃত্যু এবং যৌন নির্যাতন বেড়েছে যথাক্রমে ১৮.৬৭% এবং ৩০.৩২%।

২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে শিশু হত্যা এবং ধর্ষণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০১৭ সালে ৩৩৯টি শিশু হত্যা এবং ৫৯৩টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে, যা ২০১৬ সালের চেয়ে যথাক্রমে ২৮% এবং ৩৩% বেশি। সেই সাথে বেড়েছে গণধর্ষণ, প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণ, বখাটেদের মারধর-কুপিয়ে জখম করা এবং গোপনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা।

তবে ২০১৭ সালে ২০১৬ সালের তুলনায় কিছুটা কমেছে বাবা-মায়ের হাতে শিশু হত্যা (-২২%), শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক নির্যাতন (-৫৫%) এবং কথিত চুরির অপরাধে দরিদ্র শিশুদের নির্যাতন (-৩৮%)।


আরো সংবাদ



premium cement