২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নগরকান্দায় স্কুলছাত্র অন্তর হত্যা : ৫ আসামির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

হত্যা
আসামিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ইনসেটে নিহত অন্তর - ছবি : নয়া দিগন্ত

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদি পাগলপাড়া গ্রামে স্কুলছাত্র আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ আসামির বাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার পর থেকে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, রাতে অন্তরের লাশ উদ্ধারের পরপরই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে গ্রামবাসী। এরপর তারা একে একে আসামি মাহবুব আলম, হেলাল শেখ, ওবায়দুর মাতুব্বর, মাহবুব আলম ও আশরাফ শেখের বসতবাড়িসহ ৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বলে জানা গেছে।

এঘটনার পর পাগলপাড়া গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহত অন্তর তালমা নাজিম উদ্দিন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র এবং গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ছেলে।

গত ৭ জুন রাতে তারাবীহ নামাজ পড়তে বাসা হতে বের হলে তাকে অপহরণ করা হয়। ওই রাতেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ মাটিতে পুঁতে রাখা হয়।

এরপর ১৪ জুন রাতে হত্যাকারীরা মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

আরো পড়ুন :

মাটি খুঁড়ে মিললো অপহৃত স্কুলছাত্র অন্তরের লাশ
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের তালমা নাজিম উদ্দিন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তরের (১৪) লাশ মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে কোনাগ্রামে চকের মধ্যে আখ ক্ষেতে পুঁতে রাখা অবস্থায় অন্তরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্কুলছাত্র অন্তরকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

নিহত অন্তর তালমার পাগলপাড়া গ্রামের গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ছেলে। এ ঘটনায় এলাকায় শোক ও ক্ষোভের ছায়া নেমে এসেছে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো: জাকির হোসেন খান জানান, গত ৭ জুন রাতে তারাবীহ নামাজ পড়তে বাসা হতে বের হলে অপহরণ করা হয় অন্তরকে। অপহরণের পর ওই রাতেই অর্থাৎ ৮ জুন রাতেই গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে অন্তরকে হত্যা করা হয়। পরে পাগলপাড়া গ্রামের রাস্তার পাশে খাদে মাথা নিচ দিকে দিয়ে লম্বা করে পুঁতে রাখে অন্তরকে।

একই গ্রামের মোবারক মাষ্টারের ছেলে খোকন মাতুব্বরের (২৮) সাথে চাচাতো ভাই আনোয়ারের স্ত্রীর পরকীয়া দেখে ফেলায় অন্তরকে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ সুপার জানান।

এদিকে, অন্তরকে হত্যার পর খুনিরা অপহৃত অন্তরকে ফেরত দেয়ার কথা বলে অন্তরের পরিবারের নিকট থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পুলিশের উপস্থিতিতে মুক্তিপণের ওই টাকা খুনিদের হাতে তুলে দেয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এ মামলার তদন্ত নতুন মোড় নেয়।

জানা গেছে, অন্তরের মোবাইল সিমের সূত্র ধরে মঙ্গলবার বিকেলে পাগলপাড়া গ্রামের হাবিব বেপারীর ছেলে আলম বেপারী (২৯) ও তার ভাই জুবায়ের বেপারী (২৪) কে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের ফরিদপুর ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে এনে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা লাশ পুঁতে রাখার কথা স্বীকার করে। তাদের দেখানো জায়গা থেকেই অন্তরের লাশ উদ্ধার করা হয়।

সূত্র জানায়, অন্তরকে ফেরত দেয়ার নাম করে তার পরিবারের নিকট থেকে আরো টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্য ছিলো আটককৃতদের। মঙ্গলবার বিকেলে অন্তরের এক কাকী আলম ও জুবায়েরদের দোকানে গিয়ে বলে, যদি অন্তরকে ফেরত পেতাম তাহলে ৫ লাখ কেনো ১০ লাখ টাকা হলেও দিতাম। একথা শুনে লোভ জাগে অপহরণকারীদের।

অন্তরের কাকির মুখে এ কথা জেনে মুক্তিপণ চাওয়ার জন্য অন্তরের মোবাইলের বন্ধ সিমটি চালু করে অপহরণকারীরা। আগে থেকেই পুলিশ এব্যাপারে সতর্ক ছিলো। বন্ধ সিমটি চালু দেখতে পেয়ে লোকেশন সনাক্ত করে অপরাধীদের সাথে সাথেই আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তাদের নিকট থেকে অন্তরের ব্যবহৃত সিমটিও উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, আটক আলম এলাকায় বেকার হিসেবে পরিচিত। আর তার ভাই জুবায়ের রাজেন্দ্র কলেজের অনার্সের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র।

নগরকান্দা থানা সূত্রে জানা গেছে, অন্তরকে অপহরণের ঘটনায় তার মা জান্নাতি বেগম ১৬ জনকে আসামি করে নগরকান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আলম ও জুবায়েরকে আসামি করা হয়নি। তবে ওই মামলায় পুলিশ একই গ্রামের মোবারক মাষ্টারের ছেলে খোকন মাতুব্বর (২৮), আলতা মাতুব্বরের ছেলে কামাল মাতুব্বর ও আক্তার মাতুব্বরের ছেলে সুজকে (২৭) আটক করে। স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত দুই সহোদরের নির্দেশে তারা থানায় এলে পুলিশ তাদের আটক করে। আটককৃত সকলেই ওই দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে রাজনীতিতে জড়িত বলে জানা গেছে। তাদের অনুমতি ছাড়া তারা কোন কাজই করে না বলে নিহতের পরিবার জানায়।

প্রসঙ্গত, গত ৭ জুন তারাবি নামাজ পরতে গিয়ে নিখোঁজ হন তালমা নাজিম উদ্দিন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ছেলে অন্তর। এর পরে ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অন্তরের মাকে মোবাইল করে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। ১৪ জুন রাতে অপহরণকারীদের বলা জায়গায় মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকাও দেয় অন্তরের মা। কিন্তু এর পরেও ছেলের মুক্তি মেলেনি। মুক্তিপণ দিয়েও সন্তানকে ফিরে না পেয়ে বিলনালিয়ার মোবারক মাষ্টারের ছেলে খোকন মাতুব্বরকে (৩৫) প্রধান আসামি করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন জান্নাতি বেগম।

এ ব্যাপারে গত ২৩ জুন দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রথম পাতায় ‘পুলিশের সামনে মুক্তিপণ নিলো অপহরণকারীরা’ শীর্ষক একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়।


আরো সংবাদ



premium cement