১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সকাল হলেই ভোট॥ নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা গাজীপুর

-

রাত পোহালেই কাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নতুন মেয়র কে হচ্ছেন তার চুলচেরা বিশ্লেষণ ও হিসেব নিকেশ করেই ভোটাররা আজ নিজেদের প্রার্থী নির্বাচন করবেন।
সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার বিকেলের মধ্যেই নির্বাচন সামগ্রী ভোট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো সিটি কর্পোরেশন এলাকা। নির্বাচনী এলাকায় টহল দিচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ভোট গ্রহণের দিন মঙ্গলবার নির্বাচনী এলাকার সকল অফিস, মিল-কারখানা, স্কুল কলেজসহ প্রতিষ্ঠাণ সমূহ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে গত কয়েকদিনের মতো সোমবারেও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার দাবী করেছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধানের শীষ প্রতীকের কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে এবং বিনা কারণে গ্রেফতার করছে। এতে ভোটারদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে মঙ্গলবার। এটি এ সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন। এর আগে ২০১৩ সালে এ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক এম.এ. মান্নান নির্বাচিত হন।
অধ্যাপক মান্নান মেয়র পদে নির্বাচিত হলেও সরকারের রোষানলে পড়ে গত ৫বছরের অধিকাংশ সময় তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন। দ্বিতীয় বারের মতো এ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মোট ৪২৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠাণ উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
সোমবার বিকেলের মধ্যেই সকল কেন্দ্রের জন্য ব্যালট পেপার, সীল, কালিসহ প্রয়োজনীয় সকল নির্বাচন সামগ্রী ভোট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। রাতের মধ্যেই ভোট প্রদানের জন্য উপযোগী করে তোলা হয় কেন্দ্রসহ ভোটকক্ষ গুলো। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠাণ উপলক্ষে যাতে কোন নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন ও আনসারসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১৬ হাজার সদস্যকে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে চলে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী রবিবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। এখনো পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। তবে একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া যায়।
বিশেষ করে মেয়র পদে সরকারদলীয় প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে আচরণ বিধি ভঙ্গের একাধিক অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি মনোনীত অপর মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। এছাড়াও গত কয়েকদিনের মতো তিনি সোমবারেও দাবী করেছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধানের শীষ প্রতীকের কর্মী সমর্থকদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে এবং বিনা কারণে গ্রেফতার ও মারধর করছে।
গ্রেফতারকৃতদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারছেন না তাদের স্বজনরা।এতে ভোটারদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং লেবেল প্লেয়িং নির্বাচন অনুষ্ঠাণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবী জানান। তিনি গ্রেফতারকৃতদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের পূর্বেই মুক্তি দেওয়ার আহবান জানান।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মাজহারুল আলম জানান, নির্বাচনের এক দিন আগে গাজীপুরে ব্যাপক ধড়পাকড় শুরু হয়েছে। এতে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। রবিবার রাতে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতদের কারোর বিরুদ্ধেই কোন মামলা নেই এবং রাতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারাও মুখোশ পড়ে পুলিশের এই গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেয়।
বিশেষ করে ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মী-সমর্থকদের তালিকা ধরে টার্গেট গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। এতে নেতাকর্মীরা ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। লাগাতার পুলিশী হামলা ও হয়রানিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিএনপি তথা ২০দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের অসহায় পরিবার। নেতাকর্মীদের বাড়ির গেট ও দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পুলিশ গ্রেফতার করছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা নাই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনৈতিক মিথ্যা মামলার আসামী হলেও বর্তমানে জামিনে আছেন। পুলিশের গ্রেফতার অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে। ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের এই গ্রেফতার অভিযানে গাজীপুর ডিবি পুলিশের সঙ্গে জেলার সকল থানা ও পাশ^বর্তী জেলা সমূহের পুলিশ নামানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কারোর অবস্থান এখনো জানানো হচ্ছে না।

তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারনা রবিাবর রাত ১২টায় শেষ হয়। সোমবার প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিয়ে ভোটের কর্মকৌশল নিয়ে কর্মব্যস্ত দিন পার করেছেন। এদিন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সকাল থেকেই মালেকের বাড়ি ছয়দানা এলাকায় প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নির্বাচনী দাপ্তরিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন।
মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪২৫ কেন্দ্রের ২৭৬১ টি বুথে ৫ সহ¯্রাধিক পোলিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করবে। সেইসব কর্মীদেরসহ সকল কেন্দ্র কমিটি, কেন্দ্রের ভিতরে ও বাহিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া ইশতেহার, লিফলেট, ব্যাচ, পোষ্টার ও নির্বাচনী উপকরণ কেন্দ্র কমিটির কাছে পৌছে দেওয়াসহ সকল কর্মকান্ড তিনি তদারকি করেন।


নির্বাচনে থাকছে ৬শ’ র‌্যাব সদস্য
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনীকাজে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৫৭টি ওয়ার্ডে র‌্যাবের ৫৭টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার রাতে র‌্যাব-১ এর গাজীপুরের পোড়াবাড়ী ক্যাম্প থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাব জানায়, র‌্যাব-১ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে মঙ্গলবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী কাজে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ৫৭টি ওয়ার্ডেও প্রতিটি ওয়াডেং একটি করে র‌্যাবের মোট ৫৭টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে।
ওই নির্বাচনে নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব-১ মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী কাজে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
র‌্যাবের মোট ৬০০ জন সদস্য নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। র‌্যাবের প্রতিটি টহল দলে আটজন করে জনবল থাকবে। প্রতি ৪ ওয়ার্ডে একজন করে মোট ১৪ জন অফিসার নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। সার্বক্ষণিক তদারকি কাজে নিয়োজিত থাকবেন র‌্যাব-১ উত্তরার অধিনায়ক মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম।
এছাড়া চারটি ডগ স্কোয়াড ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও থাকবে বলে জানান।

ইভিএম-এ আগ্রহ কম
২৬জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে ৬টি ভোট কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। এজন্য মঙ্গলবার হতে ইভিএম ভোটিং প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ শুরু করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ৪৮জনের একটি প্রশিক্ষিত টিম এ কাজ শুরু করেন। নির্বাচনের আগের দিন ২৫জুন সকাল ১০টা হতে সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রসমূহের ভোটারদের সম্পৃক্ত করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কারিগরি টিমের সমন্বয়ে মক ভোট শুরু হয়েছে। চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে ওইসব কেন্দ্রে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভোটারদের উপলস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। জেলা শহরের রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৬জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। স্থানীয় ভোটার মমতাজ বেগম জানান, আমাদের কাছে এ পদ্ধতিটি ঝামেলাযুক্ত মনে হয়।

নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এলাকার পরিবেশ, কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো ও যাতায়ত ব্যবস্থা এবং এলাকাবাসির শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ৬টি ভোট কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ায় ইভিএম ভোটিং প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ শুরু করা হয়। ১৯জুন (মঙ্গলবার) থেকে ২৪জুন পর্যন্ত ওই ৬টি কেন্দ্রের আওতায় ১২টি জনসমাগম স্থানে জনসচেতনতা ও ভোটিং শিক্ষা প্রদান এবং প্রদর্শনীর কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ২৪জুন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৬টি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং কর্মকর্তাদের ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

সর্বশেষ ২৫জুন (অর্থাৎ ভোট গ্রহণের আগের দিন) সকাল ১০টা হতে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রসমূহের ভোটারদের সম্পৃক্ত করে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কারিগরি টিমের সমন্বয়ে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ভোটার-২৪৮০), চাপুলিয়া মফিজউদ্দিন খান উচ্চবিদ্যালয় (ভোটার-২৫৫২), পশ্চিম জয়দেবপুরের মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার-২৫৬২), মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার-২৮২৭), রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ ( ভোটার-১৯২৭) ও রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার-২০৭৭) এ ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো ও যাতায়ত ব্যবস্থা, এলাকার পরিবেশ এবং এলাকাবাসির শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ কেন্দ্রগুলো নির্বাচন করা হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে ৪৮জনের একটি প্রশিক্ষিত টিম ইভিএম ভোটিং শিক্ষা প্রদানের কাজ শুরু করেছেন।

প্রতি কেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং এবং প্রতি বুথে একজন করে সহকারি প্রিজাইডিং এবং দুইজন করে পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা মঙ্গলবার নিরবিচ্ছন্নভাবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করবেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সুসম্পন্ন। ১৪ সহ¯্রাধিক পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া ৬৩জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১৯জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। বিশৃঙ্খলা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তারপরও কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা কোন অহেতুক গুজবের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, জেলা গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মত কোন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীন একটি করে ভ্রাম্যমান আদালত থাকছে। আর তিনটি ওয়ার্ড মিলে থাকছেন একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব,আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের সাথে থাকবে পুলিশের টহল দল ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা।সব মিলিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার সদস্য।

এছাড়া ভোট কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টিসহ মিথ্যা ভোটার সেজে ভোট প্রদানের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২ বছরের সাজা দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বলে জানান গাজীপুরের জেলা প্রশাসক।

মেয়র প্রার্থী -৭
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপির মো: হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্য জোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)।
অফিস, কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ ছুটি ॥
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন মঙ্গলবার নির্বাচনী এলাকার সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস, মিল-কারখানা, স্কুল কলেজসহ প্রতিষ্ঠাণ সমূহ ছুটি ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার ব্যাংক সমূহও এদিন বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব স্ব ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ভোট গ্রহণের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকমূহের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ সকল শাখা মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয় গত ৩১ মার্চ। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ১৫ মে এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট গত ৬ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেয়। এতে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচনী সকল প্রকার কার্যক্রম। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন। শুনানী শেষে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নির্বাচন অনুষ্ঠাণ করার আদেশ দেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে দ্বিতীয় দফায় ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ৬জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫লাখ ৬৭হাজার ৮০১। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এবার ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৫টি। এরমধ্যে মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ২৭৬১টি, মোট অস্থায়ী মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১টি এবং মোট অস্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ২৩৫টি।


আরো সংবাদ



premium cement