২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজীপুরে শেষ দিনের প্রচারণা 

-

আর মাত্র একদিন পরেই মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোট গ্রহণ। শেষ মুর্হুতে সবত্রই চলছে ভোটের হিসেব-নিকেশ। কে হতে যাচ্ছেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মেয়র তা নিয়ে রীমিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।
প্রচারণার শেষ দিনে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটারদের মন পেতে অলিগলিতে ঘুরছেন তারা। নির্বাচনকে ঘিরে হোটেল-রেস্তোরা থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় চলছে নির্বাচনী চুলচেরা বিশ্লেষন।
রাজধানী ঢাকার গাঁ ঘেষে অবস্থিত দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্জল এই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নানা কারনেই তাৎপর্যপূর্ণ। ভৌগলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কারনে এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আলাদা তাৎপর্য বহন করে। গাজীপুরে ভোটের হিসেবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র অবস্থান কাছাকাছি । এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল গুলোর অবস্থান অনেক পরে।
এবারের গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন মূলত বিএনপি ও আওয়ামীলীগের মাঝেই মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে। বিগত সিটি নির্বাচনের বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামীলীগ প্রার্থী এডভোকেট আজমতউল্লাহ খানকে পরাজিত করে। তবে এবার নির্বাচনের বিএনপি’ ও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীর বিজয়ে ভোটকেন্দ্রে বিএনপি’র ভোটারদের উপস্থিতি একটি অন্যতম ফ্যাক্টর হয়ে দারাতে পারে। খুলনার নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এবং বিগত কয়েকদিনের বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের গ্রেফতার এবং সরকারী দলের মেয়র প্রার্থী ও কর্মীদের নির্বাচনী আচরনবিধী লঙ্ঘনের কারনে বিএনপি’র নেতা কর্মীরা নির্বাচনকে নিজেদের জন্য ঝুঁকিপূর্ন বলে মনে করেছেন। ইতোমধ্যেই বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ঘোষনা দিয়েছেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিএনপি ও ২০দলের জোটের পক্ষের নেতা কর্মী সমর্থরা কেন্দ্রে উপস্থিত না হলে ফলাফল ভিন্ন রকম হবে। অপরদিকে আওয়ামীলীগের জনপ্রিয় ও তরুন মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের কারনে ভোটের হিসাব ভিন্ন হতে পারে। বিশেষ করে তরুন ভোটারদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যাতা বেশী। শিক্ষাবৃত্তি ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলম তরুন ভোটারদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তাবে তার জন্য আওয়ামীলীগের জেলার সিনিয়র নেতাদের সাথে রেখে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ভোটের বৈতরনী পার হওয়ার মূল চ্যালেঞ্জ। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দলে জুনিয়র ও সিনিয়র যে দ্বন্দ ও গ্রুপিং তৈরী হয়েছিল তা নিরসন করে দলের নেতাকর্মীদের মাঝের দুরত্ব কমিয়ে আনতে পারলে ভোটের রাজনীতিতে জাহঙ্গীরের জন্য ভালো করা সম্ভব হবে। অবশ্য দলীয় নেতাকর্মীদের দাবী ,দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গাজীপুরের আওয়ামীলীগ সকল ভেদাভেদ ভুলে সম্মিলিতভাবে তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করছে। সকল হিসেব নিকেষ শেষে মঙ্গলবারই ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটেই নির্বাচিত হবে গাজীপুর মহানগরের দ্বিতীয় মেয়র। ভোটাররাই তাদের পছন্দের প্রার্থীকেই বিজয়ী করবে।

এদিকে পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। অন্যদিকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভোটের সুষ্ঠূ পরিবেশ চেয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। অপরদিকে কাউন্সিলর প্রার্থীরা দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। তবে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠাণের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে ২৯ প্লাটুন বিজিবিসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন ও আনসার বাহিনীর সদস্য গাজীপুরে অবস্থান নিয়েছেন।


গণসংযোগ

বিএনপি॥
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিনে ধানের শীষ প্রতীকে ২০ দলীয় জোট মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার একদিকে প্রচারণা ও অন্যদিকে পুলিশী হয়রাণীর শিকার দলীয় নেতাকর্মীদের খোজ খবর নিতে ব্যস্থ সময় কাটান। নগরির বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য অভিযোগ নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের তিনি সকাল সাড়ে ১০ পর্যন্ত নিজ বাস ভবনে এবং বেলা ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত গাজীপুর জেলা বিএনপি অফিসে সময় দেন। এসময় তিনি নেতাকর্মীদের অভিযোগ শুনেন এবং পুলিশ ও সরকারি দলের সকল ভয় ভীতি উপেক্ষা করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের দিন কেন্দ্র পাহাড়া দেওয়ার জন্য সকল নেতাকর্মীর প্রতি আহবান জানান। তিনি পরে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গী বাজারসহ আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসব গণসংযোগে জেলা ও টঙ্গী থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা তার সাথে ছিলেন। পথসভায় হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, নির্যাতিত মজলুম গণমানুষের বদ দোয়ায় ও অভিশাপে এবার নৌকা তলিয়ে যাবে। ন্যুনতম সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত বলেও তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
রোদ-বৃষ্টি, ঝড় ও সকল ভয়ভীত উপেক্ষা করে মঙ্গলবার যথাসময়ে সকলকে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে সীল মারার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

এদিকে প্রচারণার শেষ দিনে শনিবার ধানের শীষের মিছিলে মিছিলে মুখরিত ছিল এলাকা। শনিবার নগরির প্রতিটি ওয়ার্ডে ধানের শেিষর পক্ষে আলাদা মিছিল বের হয়। সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে এসব মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সরাফত হোসেনের নেতৃত্বে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে রোববার ধানের শীষের পক্ষে একটি বিশাল মিছিল বের হয়।

আওয়ামীলীগ ॥ আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন রবিবার গণসংযোগ ও বৈঠক করে ব্যস্তদিন কাটিয়েছেন। এদিন সকালে তিনি নগরীর সালনা এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করে দিনের কর্মসূচি শুরু করেন। পওে তিনি চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ি, বাসন, জয়দেবপুর, শিববাড়ি, গাছা, বোর্ডাজার, টঙ্গীর মিলগেইট এলাকায় গণসংযোগ করেন। দুপুরে তিনি ছয়দানা এলাকার নিজ বাসায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলণে বক্তব্য রাখেন।

পথসভায় বক্তব্য কালে মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত নির্বাচনে এ সিটির মেয়র পদে বিএনপি নির্বাচিত হলেও গত ৫ বছরে এলাকার কোন উন্নয়ন হয়নি। গাজীপুরের মানুষ আর অনুন্নয়ের পথে থাকতে চান না। এবার উন্নয়নের পক্ষে গাজীপুরের মানুষ ভোট দেবেন। তাই এ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে একটি জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সকল ভোটারকে আগামী ২৬ জুন এ নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহবান জানান।

এসময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমণ¦য়ক ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আজমত উল্লাহ খানসহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামী আন্দোলন॥
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা প্রিন্সিপাল নাসির উদ্দিন প্রচারণার শেষ দিন ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। সর্বশেষ প্রচারণার দিন প্রিন্সিপাল নাসির উদ্দিন এর সাথে মাঠে ছিলেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ইসলামী আন্দলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দীন সাহেব। এছাড়াও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের আওয়াজ নিয়ে মাঠে ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে "ইসলামী সাংস্কৃতিক জোট" এর একটি টীম ও জাতীয় শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন "কলরব" এর পরিচালক বদরুজ্জামান এর নেতৃত্বে অন্য একটি টীম।

নিরাপত্তা ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছেন নির্বাচন কমিশন। নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নির্বাচনে সার্বিক নিরাত্তার জন্য বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রায় ১১ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন উপলক্ষে ইতোমধ্যে পুরো নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রায় ১১ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। পোশাক ছাড়াও বিপুল পরিমাণ পুলিশ সাদা পোশাকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচন উপলক্ষে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা জানান, বিজিবি সদস্যরা বুধবার পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে আরও বিজিবি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে মোতায়েন করা হবে। এ সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতি দুইটিতে এক প্লাটুন করে মোট ২৯ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে এই নির্বাচনে। ২০ থেকে ৩০ জন বিজিবি সদস্য নিয়ে এ বাহিনীর এক একটি প্লাটুন গঠিত হয় বলে কর্মকর্তারা জানান।

গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রট সঞ্জীব কুমার দেবনাথ বলেন, ২৯ প্লাটুন বিজিবির মধ্যে কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর এলাকায় ৭ প্লাটুন, টঙ্গী এলাকায় ১০ প্লাটুন এবং জয়দেবপুর, বাসন চান্দনা চৌরাস্তা ও কাউলতিয়া এলাকায় ১২ প্লাটুন দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১১ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নওগাঁয় ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় শিক্ষকের কারাদণ্ড চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার আশা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা মেট্রোরেলের জন্য ৫ বছরে ৫৭ হাজার কোটি টাকা চায় সড়ক বিভাগ সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতির অভিযোগ শ্রমিক নেতাদের সাজেকে ট্রাক উল্টে নিহত ৬ জাজিরায় আ’লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ জেল থেকে বেরিয়ে ফের শিশুপর্নোতে জড়ালেন শিশুসাহিত্যিক টিপু ঢাকাসহ জেলায় জেলায় ইসতিসকার নামাজে বৃষ্টি চেয়ে দোয়া হজ ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধকতা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

সকল