২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গাজীপুরে ঈদের আমেজ না কাটতেই নির্বাচনী প্রচার শুরু

-

ঈদের আমেজ না কাটতেই সোমবার হতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনী প্রচারণার প্রথমদিনে প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে আনুষ্ঠাণিকভাবে নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ শুরু করেছেন। দিনভর পথসভা, বৈঠক ও গনসংযোগের মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সকাল হতেই শুরু হয়েছে প্রার্থীদের সমর্থনে মাইকিং। গত ১৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের নির্দেশে নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করায় প্রায় এক মাস ১২ দিন পর সোমবার থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় দফায় আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা। তবে ভেঙ্গে যাওয়া নির্বাচনের মাঠ এখনো জমাতে পারছেন না প্রার্থীরা।
শিল্পাঞ্চল হওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে লোকজন গাজীপুরে এসে অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং এখানকার বিভিন্ন মিল কারখানায় চাকুরি করেন। এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক লোকজন এ সিটি কর্পোরেশনের ভোটার। রবিবার সরকারী ছুটি শেষ হলেও সোমবার পর্যন্ত প্রায় সবক’টি মিল কারখানা বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানা প্রতিষ্ঠাণের কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। তারা ছুটি কাটিয়ে ফিরে না আসায় এখনও পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিরাজ করছে ঈদের ছুটির আমেজ। ফলে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা ও নির্জীব। তাই অনেকটা খালি মাঠেই শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রচারণা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রার্থীরা পবিত্র রমজান মাসে ইফতার মাহফিল আয়োজন করে ঝিমিয়ে পড়তে থাকা কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করেছেন।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার প্রথমদিনেই সোমবার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থী ১৪ দলীয় জোটের আওয়ামীলীগ মনোনীত (নৌকা) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ও ২০ দলীয় জোটের বিএনপি মনোনীত (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনী প্রচারণা ও জনসংযোগে জোরেসোরে নেমে পড়েন। নির্বাচনে সমান পাল্লা দিয়ে অন্য প্রার্থীরাও তাদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের পদচারণায় সরব হয়ে উঠছে গাজীপুর।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ২০ দলীয় জোট মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার প্রচারণার প্রথম দিন সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নিজ বাসভবনে কশিমপুর অঞ্চলের নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ পুনর্মিলনী ও সাবেক কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার গ্রেফতার হওয়ায় তার অনুপস্থিতিতে নির্বাচনী ঝুঁকি মোকাবেলার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ২০ দলীয় জোটের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক শিল্পপতি সোহরাব হোসেন, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কর, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির রাজুসহ কাশিমপুর অঞ্চলের বিএনপি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। সভায় কাশিমপুর অঞ্চলের নেতারা বেলেন, শওকত চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে এলাকার নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় চক্রবর্তী ফাঁড়ির পুলিশ দিয়ে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শণ করা হচ্ছে। সভায় নেতারা বলেন, যারা ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদেরকে ঘরে বসিয়ে রাখতে চান তারা আহমকের রাজ্যে বাস করেন। এক শওকত গ্রেফতার হয়েছে, কিন্তু হাজারো শওকত প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে হাসান সরকার বিকেলে নগরির কাউলতিয়া ও সন্ধ্যায় বাসন অঞ্চলে গণসংযোগ করেন। এসময় কাউলতিয়া সালনা বাজারে স্থানীয় বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন হাসান উদ্দিন সরকার। এসময় তার সাথে ছিলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কালিয়াকৈর পৌর চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কাউলতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকির, কুতুব উদ্দিন চেয়ারম্যান, সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, অ্যাডভোকেট সুলতান উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান, হুমায়ুন কবির রাজিব, শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

হাসান সরকার বলেন, বহু রক্ত ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে, গণতন্ত্র মানুষের বাক স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার থাকবে না। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মাত্র ১০ মিনিটের ব্যাপার। কিন্তু তিনি দেশ বিক্রির সমঝোতায় রাজি হবেন না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও বেগম খালেদা জিয়ার জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত আছেন বলে জানান হাসান সরকার।

ফজলুল হক মিলন বক্তৃতায় বলেন, এই নির্বাচন নেতাকর্মীদের জন্য একটি বাছাই পরীক্ষা। যারা ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সাহস ও হিম্মতের কেন্দ্র পাহারা দিবে তাদেরকে আগামীতে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি বলেন, কোন ধরণের কারচুপি হলে কোন কর্মকর্তাকে কেন্দ্র থেকে বের হতে দেয়া হবে না।

এর আগে দুপুরে হাসান সরকার নিজ বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সাক্ষাতকার দেন। এসময় একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম আজ একটি পথসভায় আপনার ও আপনার দলের ভোট চেয়েছেন, এব্যাপারে আপনার প্রািতক্রিয়া কি ?’ জবাবে হাসান সরকার বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ার অতি গুরুত্বপূর্ণ। এটি পোলাপানের (ছেলেদের) চেয়ার নয়, এটি জ্ঞানী ও বয়ষ্ক মানুষের চেয়ার। মেয়র নির্বাচন কোন ছেলে খেলা নয়। সে যে আমার কাছে ভোট চেয়েছে এটি ছেলেমি ছাড়া কিছুই নয়। এটি একটি ফাইজলামি। বয়সের অপরিপক্কতার কারণে সে এসব বলতে পারছে। ‘নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, বিএনপি তাদের বেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্ট্রার মওদুদকে দিয়ে রিটকারীর পক্ষে আবেদন করে নির্বাচন স্থগিত করেছে’ এব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি ? অপর সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে হাসান সরকার বলেন, ‘আমাকে এই প্রশ্ন না করে যদি বলা হতো আপনি পৃথিবীতে কাকে বেশি ঘৃণা করেন ? তখন আমি বলতাম, আমি মিথ্যাবাদীকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। জাহাঙ্গীর যা বলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং আমার কাছে প্রমাণ আছে, নির্বাচন তারা (আ’লীগ) স্থগিত করেছে। তিনি বলেন, মওমুদ সাব একজন পেশাদার আইনজীবী। তিনি যে কারোর পক্ষে রিট করতেই পারেন। তবে তিনি তফসিল ঘোষণারও আগে রিট করেছিলেন, যা আদালত খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে একই মীমাংসিত বিষয় গোপন রেখে আওয়ামীলীগ তাদের দলীয় নেতা দিয়ে রিট করিয়ে নির্বাচন স্থগিত করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ধানের শীষের গণজোয়ার স্থিমিত করে দেওয়া।

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সোমবার নগরির বিভিন্ন ওয়ার্ডে ধানের শীষের পক্ষে পৃথক পৃথক গণসংযোগ করেন। নগরির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি শামসুল আলম তোফা।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ধানের শীষের প্রচারনার লক্ষ্যে ঈদপুনর্মিলনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাজহারুল আলম বলেছেন, গাজীপুর সিটিতে বিএনপির বিজয়, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন এক সূত্রে গাঁথা।

গাজীপুর পৌর বিএনপি সভাপতি মীর হালিমুজ্জামান ননীর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপি সহসভাপতি আফজাল হোসেন কায়সার, আহামদ আলী রুশদী, জেলা বিএনপি যুগ্মসম্পাদক সাখাওয়াৎ হোসেন সবুজ, কাজী মাহবুবুল হক গোলাপ, গাজীপুর পৌর নির্বাচনী সদস্য সচিব এড. মেহেদী হাসান এলিস, পৌর বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন তালুকদার, জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক জবিউল্লাহ জবু, জেলা বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সোহেল, বিএনপি নেতা নুর মোহাম্মদ, ইজ্জত আলী, শরীফ মো. সিদ্দিকী প্রমুখ।

এর আগে শনিবার টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে শরিক হয়ে মুসল্লীদের কাছে দোয়া চেয়ে বক্তৃতায় হাসান সরকার বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়, এটি একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নেতৃত্বের গুনগত মানের ওপর নির্ভর করে ওই সমাজের ভাল-মন্দের দিগগুলি। তাই এই নির্বাচনে আমি আপনাদেরকে সমাজ পরিবর্তনের ডাক দিতে এসেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘একজন ভাল মানুষ একদিকে, আর এক হাজার চোর একদিকে; কার মর্যাদা বেশি ? নিশ্চয় যিনি ভাল মানুষ তার মর্যাদা বেশি। আমি আপনাদের মধ্যে সেই কাঙ্খিত ভালো মানুষটি হতে চাই।’

সমাজ দ্রুত মন্দের দিকে পরিবর্তনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হাসান সরকার বলেন, ‘টঙ্গীর এই কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের মর্যাদাটুকুও আজ আমরা রক্ষা করতে পারি না। এখানে যা শুরু হচ্ছে হয়তো আগামী দিনে আলেমগন এমন ফতোয়া দিতে পারেন যে, এখানে নামাজ পড়া জায়েজ হবে না।’ তিনি মাঠটির মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ কতৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এতো বড় মাঠ কেন রাখা হয়েছিল তা আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না।’
ঈদের জামাতে ঈমামতি করেন পীরে কামেল মুফতি ইউনুস সাহেদী। মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ানকালে তিনি বলেন, হাসান উদ্দিন সরকারের নিয়তের সাথে আমলের মিল আছে। তিনি যে নিয়তে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাতে তিনি পাশ করেছেন। তিনি পরাজয় হলে এটি তাঁর পরাজয় হবে না, এটি হবে আমাদের (জনগণের) পরাজয়।

মুফতি ইউনুস সাহেদী এলাকার মসজিদগুলোর ঈমামদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এই ঈদগাহ ময়দানে যেসব অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয় তাতে পাশের কলেজ মসজিদ, পৌর মসজিদ ও পাইলট মসজিদে নামাজ পড়তেও সমস্যা হয়।
এদিকে ঈদের জামাত ও জানাযা নামাজ শেষে হাসান সরকার শনিবার নিজ বাস ভবনে সাক্ষাত করতে আসা দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্খীদের সাথে ঈদের শুবেচ্ছা বিনিময় করেন।

এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার শনিবার ঈদের নামাজ পড়েন নিজ বাড়ির পাশে টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে পরে তিনি টঙ্গী বাজার আনারকলি রোডে মুক্তিযোদ্ধা কাজী নূর মুহাম্মদের জানাযায় শরিক হন। তিনি রোববার নিজ বাস ভবনে ও গাজীপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও নির্বাচনের ভাঙ্গা মাঠ জমানোর পরিকল্পনা করেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সোমবার সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের বোর্ডবাজার এলাকা হতে গণসংযোগ ও নির্বাচণী প্রচার শুরু করেন। তিনি দিনভর তিনি দলের নেতা কর্মীদের নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ১৪, ১৫, ১৭ নম্বরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং কুশলাদি বিনিময় করে নির্বাচনী প্রচার চালান। নির্বাচনী প্রচারকালে বোর্ডবাজারস্থিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গাছা কমা- কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই পথসভায় গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আজমত উল্লাহ খান, অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল, সাবেক এমপি জেলা ইউনিট কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোজাম্মেল হক, ডেপুটি কমান্ডার মোহর আলী, আব্দুর রউফ নয়নসহ জাতীয় পার্টিও একাধিক নেতা বক্তব্য রাখেন।

এসময় মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিগত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মিথ্যাচার এবং প্রপাগান্ডা করেছে। মিথ্যাচার করে নৌকাকে নয় গাজীপুর বাসীকে তারা পরাজিত করেছে। গত পাঁচ বছর গাজীপুরবাসীকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রেখেছে। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরকে আধুনিক নগর হিসাবে গড়ে তুলতে একটি ইউনিয়ন থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করেছেন। আমি রাজধানীয় ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে একটি অত্যাধুনিক শহর হিসাবে গড়তে চাই। গাজীপুরের উন্নয়ন মানে বাংলাদেশের উন্নয়ন। আপনারা নৌকাকে সমর্থন ও ভোট দিলে তা সম্ভব হবে। নৌকাকে বিজয়ী করতে আওয়ামীলীগের কর্মীকে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে মা-বোনদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হবে। আমি সকলের সহযোগীতা নিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করতে চাই।

বিকেলে গণসংযোগকালে মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের এম এ রাজ্জাক মাষ্টার দাখিল মাদ্রাসা, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোগড়া মধ্যপাড়া প্রাইমারি স্কুল মাঠে এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসন স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত পৃথক পথসভায় বক্তব্য রাখেন।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয় গত ৩১ মার্চ। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী ১৫ মে এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট গত ৬ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেয়। এতে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচনী সকল প্রকার কার্যক্রম। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন। শুনানী শেষে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নির্বাচন অনুষ্ঠাণ করার আদেশ দেন উচ্চ আদালতে। উচ্চ আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে দ্বিতীয় দফায় ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী প্রার্থীরা ১৮ জুন হতে এ নির্বাচনে আনুষ্ঠাণিক প্রচার প্রচারণা শুরু করেন।

উল্লেখ্য, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ৬জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫লাখ ৬৭হাজার ৮০১।


আরো সংবাদ



premium cement