২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জিপিএ ৫ বিক্রি : অদ্বৈত রায়ের রাজেন্দ্র কলেজে যোগদানে ক্ষোভ

জিপিএ ৫ বিক্রি : অদ্বৈত রায়ের রাজেন্দ্র কলেজে যোগদানে ক্ষোভ - ছবি : সংগৃহীত

আড়াই লাখ টাকায় জিপিএ-৫ বিক্রি করতে গিয়ে ধরা খাওয়া অদ্বৈত কুমার রায়কে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে বদলি করা হয়েছে। গত সোমবার তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বদলী আদেশ নিয়ে রাজেন্দ্র কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে যোগ দিয়েছেন। আর এ খবর জানার পর তোলপাড় চলছে ফরিদপুরে।

কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও ফরিদপুরের সাধারণ জনতা ও অভিভাবকগণ ফরিদপুরের একটি স্বনামধন্য কলেজে যোগদানের খবরে তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গত দু’দিন ধরে এ নিয়ে চলছে তুমুল নিন্দাবাদ। ফরিদপুরের শিক্ষার মান যাতে বিনষ্ট না হয় সেজন্য অবিলম্বে তারা রাজেন্দ্র কলেজ থেকে অদ্বৈত কুমার রায়কে বদলীর দাবি তুলেছেন।

রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি কলেজের শিক্ষার্থী ও ফরিদপুরের সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বিষয়টি জেনেছেন। তবে এখানে তার কোন হাত নেই। সিদ্ধান্তটা মন্ত্রণালয়ের। বিষয়টি তিনি ডিজিকে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও বদলির আদেশ হয়। এর দীর্ঘদিন পর গত সোমবার তিনি রাজেন্দ্র কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। সূত্র জানায়, ফরিদপুরে এসেই তিনি সরকারী দলের প্রভাবশালীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।

প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, ঢাকা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে থাকাকালে অদ্বৈত কুমার রায় একটি সিন্ডিকেট করে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে জিপিএ-৫ সহ ভিন্ন ভিন্ন সার্টিফিকেট বিক্রিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সচিত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয় দেশের একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে। তাতে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অদ্বৈত রায় সহ চক্রের সদস্যদের কিভাবে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে জিপিএ-৫ সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তার প্রমাণ বেরিয়ে আসে। তবে জিপিএ-৫ বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে অদ্বৈত কুমার এসব ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করেন।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি সাংবাদিক আহম্মদ ফিরোজ রাজেন্দ্র কলেজে অদ্বৈত কুমার রায়ের বদলীর ভবরে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এমন একজন দুর্নীতিবাজকে চাকরী থেকে কেনো বরখাস্ত করা হয়নি সেটিই বুঝতে পারছি না। তাকে কোনভাবেই রাজেন্দ্র কলেজে রাখা যাবে না। তাতে কলেজের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মক বিঘ্নিত হবে।
২০১৩ সালের ২৩ জুন শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক পদে প্রেষণে যোগ দেন অদ্বৈত কুমার। এই যোগদানের পেছনে কলকাঠী নাড়েন শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক একজন এপিএস ও তৎকালীন একজন যুগ্ম-সচিব। ২০১৭ সালে বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ বাগান অদ্বৈত।

আরো পড়ুন :

ফেল থেকে পাস ৭৪১, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯৩১ জন
নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও সমমান ফল পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল। এতে অনেক শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে বেড়েছে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা, পাশাপাশি ফেল থেকে পাসের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ফেল থেকে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীও রয়েছে। গতকাল প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডের সাথে আলাদা আলাদা কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। 

বোর্ডগুলোর প্রাপ্ত তথ্য মতে, চলতি বছর ১০টি শিক্ষা বোর্ডে ২ লাখ ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ৪ লাখ ১৪ হাজার ৫১৬টি পত্রের প্রাপ্ত নম্বর পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করেছিল। এদের মধ্যে থেকে ৪ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯৩১ জন। ফেল করে খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে পাস করেছে ৭৪১ জন। অন্যদের বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাতা দেখায় শিক্ষকদের অনীহা, অবহেলা বাড়ার কারণে প্রতি বছর খাতা চ্যালেঞ্জ করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ করার পরিমাণ বাড়লেও এবার ফল পরিবর্তনের সংখ্যা কমেছে। এ জন্য এবার মডেল পদ্ধতিতে খাতা দেখায় ভুলের পরিমাণ কমেছে। 

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, পরীক্ষকদের মধ্যে খাতা দেখার আগ্রহ ও পদ্ধতি দু’টিই পরিবর্তন হয়েছে। গত দুই বছর ধরে মডেল পদ্ধতিতে খাতা দেখা এবং পরীক্ষকদের খাতা প্রধান পরীক্ষকরা ফের দেখার বাধ্যবাধকতার কারণে খাতায় ভুলের পরিমাণ কমেছে। তিনি বলেন, খাতায় যে চারটি ভুলের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো এবার সেই জায়গায় হাত দেয়া হয়েছে। আস্তে আস্তে খাতা দেখায় শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করেন তিনি। 

বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে এসএসসি ও সমমানের পুনঃনিরীার ফল প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে মোট ১৯৯০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১৯২ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯৫ জন। অন্যদের বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে মোট ৫২৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে, এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৫১ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৮ জন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে মোট ৪৭৩ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৭২ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২০৬ জন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মোট ৪৪২ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৮৮ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৮ জন। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে মোট ২৬০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে, এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৪১ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮০ জন।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে মোট ১৪০ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে, এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে। ১৭ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১ জন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে মোট ৩১৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৬৩ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৯ জন। যশোর শিক্ষা বোর্ডে মোট ২০৫ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৭১ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৭ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে মোট ২৪৮ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১০১ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩২ জন। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে মোট ২৯৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৪৫ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৫ জন। 

যাদের ফল পরবর্তন হয়েছে তারা রেজাল্ট বাড়ার কারণে ফের আবেদন করার দরকার নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, যাদের রেজাল্ট পরিবর্তন হয়েছে তাদের প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী কলেজের ভর্তির মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে আগের রেজাল্টের কারণে কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো কলেজে আবেদন করতে না পারে সে ইচ্ছে করলে নতুন রেজাল্ট দিয়ে আবেদন করতে পারবে। এ জন্য ৫ ও ৬ জুন আবেদন থেকে নতুন করে কোনো কলেজ যোগ করতে চাইলে সেটি করতে পারবে। 

বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কী না, এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না। এসব বিষয় পরীা করেই পুনঃনিরীার ফল দেয়া হয়েছে বলে বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তার মানে কোনো শিক্ষার্থীর খাতা আবার মূল্যায়ন হয় না। এতেই এত শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এটি রীতিমতো তুঘলকি কাণ্ড বলে আখ্যায়িত করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্নপদ্ধতি ও খাতা দেখার নানা ত্রুটির কারণে দিন দিন ফল চ্যালেঞ্জ করার সংখ্যা বাড়ছে। এতে প্রতি বছর অভিভাবক-শিক্ষার্থীর পকেটের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement