২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে তীব্র যানজট

নাব্যতা সঙ্কটে লৌহজং বিকল্প চ্যানেল খনন করছে বিআইডব্লিউটিএ। ছবি - নয়া দিগন্ত।

ভরা বর্ষা মৌসুমে আসন্ন ঈদুল ফিতর পড়ায় শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরিহ সকল নৌযানে নিরাপদে যাত্রী পারাপার নিয়ে চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার কারনে মাঝেমাঝেই বন্ধ থাকছে নৌযান। বৈরী আবহাওয়া, কালবৈশাখী ঝড় ও তীব্র স্রোতের কারনে যাত্রী পারাপারে ফেরিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে কর্ত্তৃপক্ষ। স্রোতের গতিবেগ বাড়ায় ফেরিসহ নৌযান পারাপারে বাড়তি সময় লাগছে। ফলে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। নাব্যতা সংকট মাথায় রেখে লৌহজং টার্নিং এ বিকল্প চ্যানেল খনন শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। চলমান লঞ্চ ও স্পীডবোটগুলো জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ব্যবহারে আগের মতোই উদাসীন থাকায় ঝূকি বেড়েছে। ঘাটে অনুষ্ঠিত সভা ও খোদ নৌ পরিবহন মন্ত্রী পরিদর্শনে এসে বর্ষা মৌসুমে নৌযান পারাপার নিয়ে শংকার কথা জানিয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন।

সরেজমিন বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি সহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার সাথে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট হয়ে দক্ষিনাঞ্চলের স্বল্প দূরত্বর কারনে প্রতি বছরই দেশের রেকর্ড সংখ্যক যাত্রীদের ঢল নামে এ রুটে। কাওড়াকান্দি ঘাটটি কাঠালবাড়িতে স্থানান্তরের পর নৌপথে ৬ কিলোমিটার দূরত্ব কমায় এ রুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার এমনিতেই বেড়েছে। আসন্ন ঈদে এ সংখ্যা আরো কয়েকগুন বেড়ে আগের যে কোন ঈদের চেয়েও ভীড় আরো বাড়বে বলে ধারনা করছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা। নৌ রুটটিতে ১৯ টি ফেরি, ৮৭ টি লঞ্চ ও প্রায় ২শতাধিক স্পীডবোট চলায় ও উভয় পাড় থেকে সড়ক পথে অসংখ্য যানবাহন থাকায় রুটটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই অন্যান্য বারের মতো এবারও ব্যাপক প্রস্তূতিও নিয়েছে জেলা প্রশাসন। থাকবে ভ্রাম্যমান আদালত, পুলিশ, র‌্যাবসহ বিপুল পরিমান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এ দিকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে ভরা বর্ষা মৌসুম চলায় পদ্মায় পানি বেড়ে স্রোতের গতিবেগ বাড়ায় নৌযান পারাপারে বাড়তি সময় লাগছে। স্রোতের সাথে পলি ভেসে আসায় লৌহজং টার্নিং এ দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। সামনে সংকট প্রকট হওয়ার শংকায় বিকল্প চ্যানেল খনন শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। ফেরি, লঞ্চ, স্পীডবোট পারাপারে সময় বেশি লাগায় বেড়েছে জ্বালানি ব্যয়। পদ্মা নদী উত্তাল হয়ে উঠায় ঝূকি বেড়েছে। লঞ্চ ও স্পীডবোটগুলোতে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম চোখেও পড়েনি। তবে অন্যান্য যে কোন বারের তুলনায় এ ঈদে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌছাতে প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করার আশ্বাস দিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান কাঁঠালবাড়ি ঘাট পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি এবারের ঈদ বর্ষা মৌসুমে হওয়ায় বিশেষ প্রস্তুতির কথা জানান।

এ রুট ব্যাবহারকারী যাত্রী মোসাঃ জাকিয়া সুলতানা টপি বলেন, ঈদের সময় লঞ্চে ও স্পীডবোটে যাত্রী চাপ বেশি হয়। এবারের ঈদ বর্ষা মৌসুমে হলেও কিন্তু লঞ্চ ও স্পীডবোটগুলোতে পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসনের এ বিষয়ে নজরদারী প্রয়োজন।

কেটাইপ ফেরি কুমিল্লার মাস্টার ইনচার্জ ফারুক হোসেন বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে স্রোতের গতিবেগও বাড়ছে। ফলে ফেরি পারাপারে আগের চেয়ে বাড়তি সময় ও জ্বলানি ব্যয় হচ্ছে। আর স্রোতের সাথে পলি ভেসে এসে লৌহজং টার্নিংসহ কয়েকটি পয়েন্টে নাব্যতা সংকট দেখা দিচ্ছে। দ্রুত গতিতে বিকল্প চ্যানেল তৈরি করা না হলে ঈদের সময় ফেরি পারাপারে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আঃ সালাম বলেন, আসন্ন ঈদে নির্বিঘ্নে যাত্রী পারাপারে আমাদের পর্যাপ্ত ফেরি সার্ভিসে থাকবে। নদীতে স্রোত বেশি থাকলে মাঝ নদী থেকে শক্তিশালী আইটি জাহাজ দিয়ে ফেরি পারাপার করা হবে। আর নাব্যতা সংকটের কারনে ঈদকে সামনে রেখে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বিকল্প চ্যানেল তৈরির কাজ চলছে।

বিআইডব্লিউটিএ কাঁঠালবাড়ি টার্মিনাল ইন্সপেক্টর আক্তার হোসেন বলেন, আসন্ন ঈদে নির্বিঘ্নে যাত্রী পারাপারে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোন লঞ্চ ও স্পীডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে দেওয়া হবে না। পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম নিশ্চিত করা হবে।

কাঁঠালবাড়ি ঘাট ট্রাফিক ইন্সপেক্টর উত্তম কুমার শর্মা বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তায় ঘাট এলাকায় পর্যাপ্ত আইন শৃংখলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই ঘাট এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব, নৌপুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পর্যাপ্ত আইন শৃংখলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। আবহাওয়া খারাপ হলে লঞ্চ, স্পীডবোট বন্ধ রেখে ফেরিতে যাত্রী পারাপার করা হবে। কোথাও কোন যাত্রী হয়রানী হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি বলেন, যেহেতু ঈদ বর্ষায় তাই যাত্রীরা যাতে নিরাপদে ও স্বাচ্ছ্যন্দে বাড়িতে গিয়ে ঈদ করতে পারে তার জন্য আমরা সবাই সতর্ক। আমাদের নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়, বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন সবাইকে আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক করেছি। ঈদের আগে পরে দুই ভাগেই যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো আমরা।


আরো সংবাদ



premium cement