অধ্যাপিকা ডা: ওয়ানাইজা রহমান
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮,মঙ্গলবার, ১৭:৫৭
শীতের পাঁচটি সাধারণ সমস্যা
শীতে পায়ের গোড়ালি ফেটে গেলে : আমদের দেশে শীতকালে অনেকেই এ সমস্যায় ভোগেন।
কী করবেন : প্রতিদিন পায়ের গোড়ালি কয়েক ফোঁটা অ্যাক্রোফ্লেবিন সলিউশন মেশানো পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখবেন।
এ ছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে পা ভিজিয়ে ভালো করে মুছে ভ্যাসলিন মাখার অভ্যাস করে নিন।
উপরের ব্যবস্থামতো কাজ না হলে একজন চর্মবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
কী করবেন না : খালি পায়ে হাঁটাচলা করবেন না, এতে করে ফাটা জায়গায় নোঙরা ঢুকে আরো খারাপ হবে। তাই পা সবসময় পরিষ্কার ও শুকনা রাখবেন।
শীতে ত্বক ফেটে গেলে : শীতের শুরু থেকে দেখা যায় অনেকের ত্বক ফেটে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে গরম আসা পর্যন্তও এর রেশ থেকে যায়।
জাতীয় সমস্যাকে Xerovin বলে। ত্বকে সেবাম নামক একপ্রকার তেলজাতীয় পদার্থের অভাবে এ সমস্যা হয়ে থাকে।
ত্বক ফাটলে কী করবেন : শীতকালে সারা শরীরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সস্তায় ভালো ফল পাওয়ার জন্য ময়েশ্চারাইজার হিসেবে গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন।
গ্লিসারিনের অতিরিক্ত আঠাভাব আলতোভাবে ভিজে তোয়ালে দিয়ে চেপে মুছে নিতে পারেন।
এ ছাড়াও কসমেটিকসের দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির নামীদামি ময়েশ্চারাইজার পাওয়া যায়। মনে রাখবেন, গোসল বা হাতমুখ ধুয়ে মোছার পরপর যে ভিজে ভাবটা ত্বকে থাকে; সেই সময়ই ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
প্রচুর শাকসবজিসহ পুষ্টিকর খাবার খাবেন এবং বেশি করে পানি খাবেন।
কী করবেন না : শুকনা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার মাখবেন না, এতে তেমন কোনো লাভ হবে না।
গ্লিসারিনের আঠা ভাব তোলার জন্য তোয়ালে দিয়ে ঘষা দিয়ে মুছবেন না, এতে করে সব গ্লিসারিন উঠে যাবে।
শরীর ঘেমে দুর্গন্ধ হলে কী করবেন : প্রতিদিন গোসল করুন অথবা শাওয়ার নিন। শরীরচর্চার পর অবশ্যই গোসল করতে হবে, যাতে শরীরের ঘাম শুকিয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি না করে।
বগল কামিয়ে নিন। এতে করে লোমে ঘাম আটকে থাকবে না।
খুব বেশি ঘাম হলে ডিওডোরেন্ট বা ঘাম নিরোধক জিনিস ব্যবহার করা উচিত।
এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল সোপ যেমন Lever-2000 Soap অথবা কার্বলিক সোপ কুচকি ইত্যাদি স্থানে এন্টিসেপটিক ক্রিম ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য কমিয়ে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করা যায়।
অন্তর্বাস ও অন্যান্য কাপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলুন।
গরমের সময় স্বস্তিকর ঢিলা পোশাক পরুন।
অন্তর্বাস সুতি হলে ভালো, এতে ত্বকে বাতাস চলাচল ভালো হয়।
কী করবেন না : সিনথেটিক ও টাইটফিটিং পোশাক পরবেন না।
ঘামে ভেজা কাপড় বাতাসে শুকিয়ে তা আবার ব্যবহার করবেন না।
পারফিউম ও সুগন্ধি পাউডার যত কম ব্যবহার করবেন, ততই ভালো। কারণ এগুলো ঘাম ও ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিশে ভ্যাপসা গন্ধের সৃষ্টি করে।
রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে হলে : রোদ ত্বকের ক্ষতি করে। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির মাধ্যমে ত্বকের যেসব ক্ষতি হয় তার মধ্যে ত্বক কালো হয়ে যাওয়া, মেছতার দাগ বৃদ্ধি পাওয়া, মুখে তিলা পড়া, ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়া এবং কুঁচকে যাওয়া অন্যতম।
এ সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা পেতে হলে কী করবেন : মুখে যেন রোদ কম লাগে সেদিকে নজর দিতে হবে। এর জন্য দিনের বেলায় রাস্তায় চলাচলের সময় ছাতা ব্যবহার করবেন, রিকশায় করে যাওয়ার সময় হুড তুলে দেবেন। চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। সূর্যের আলোতে বেরোনোর সময় মুখে ও শরীরে উন্মুক্ত স্থানে নিউট্রেজেনা সান ব্লক SPFIS রাখবেন।
রাতের বেলা মুখে Collagen Elastin cream অথবা ভিটামিন-ই ক্রিম ব্যবহার করবেন।
কী করবেন না : রোদে বেশি বের হবেন না।
নিভিয়া ক্রিম ও আফটার শেভ লোশন দিয়ে রোদের সংস্পর্শে না যাওয়াই ভালো।
শরীরে ও মুখে তেল মেখে রোদে বেরোবেন না।
পানির সংস্পর্শে হাতের চামড়া বেশি কুঁচকে থাকলে কী করবেন
প্রতিবার হাত ভেজানোর পর হাত সাথে সাথে মুছে ফেলবেন। হাত পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই সেখানে ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহার করবেন। ময়েশ্চারাইজার হিসেবে গ্লিসারিনও ভালো কাজ করে।
কী করবেন না : পারতপক্ষে বারবার হাত ভেজাবেন না।
দীর্ঘসময় পানিতে হাত ভিজিয়ে রাখবেন না এবং সবসময় হাত সাবান দিয়ে ধুবেন না।
লেখিকা : অধ্যাপিকা, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা।