জসিম উদ্দিন রানা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭,রবিবার, ২১:৫১
সরকারি কোনো সাহায্য নেই বললেই চলে। ৩৭টি ফেডারেশনের মতো বার্ষিক যা বরাদ্দ থাকে সেটি দিয়ে কোনো রকমে ক্লিনারের বেতনাদি দেয়া যায়। অবকাঠামো দিক বলতে আহামরি কিছু নেই। দেশের বাইরে একমাত্র নাইজেরিয়া ছাড়া কোনো রকম প্র্যাকটিস ম্যাচও খেলতে পারে না তারা। যেতে হয় দূর-দূরান্তে। বছরে তিনটি পুরুষ ও মহিলা প্রাদেশিক লিগ হয়। সেখানে পাঁচটি করে ক্ল¬াব অংশ নেয়। ডাবল লিগের মাসব্যাপী এ খেলায় হকি প্লেয়ারদের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক থাকে মাত্র ৮০০ ডলার। তাও শীর্ষ দুইটি ক্লাব মাত্র হাতে গোনা তিন চারজনকেই দিয়ে থাকে। নীল টার্ফে এই প্রথম খেলল তারা।
গতকাল বিকেলে স্থানীয় একটি হোটেলে একান্ত আলাপচারিতায় জানা গেল ঘানা হকি দলের অনেক খুঁটিনাটি। আলোচনায় অংশ নিলেন দলটির ম্যানেজার স্টেফি টেনকোরাং, কোচ উইনফ্রেড স্যাককি ও অধিনায়ক সালিয়া সালবিনি। ওয়ার্ল্ড লিগ রাউন্ড টু পর্বে খেলতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসেছে ঘানা দলটি। তারা রয়েছে ‘বি’ গ্রুপে। বাংলাদেশের আমন্ত্রণে একটু আগে ভাগেই ঢাকার মাটিতে পা রেখেছে তারা। উদ্দেশ্য তিনটি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলা। সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত এ ঘানার কাছেই প্রথম ফ্রেন্ডলি ম্যাচে বাংলাদেশ হারল ০-২ গোলে।
অধিনায়ক সালবিনি, কোচ উইনফ্রেড ও ম্যানেজার টেনকোরাং জানালেন, ‘আমরা শুধুই মনের টানে হকি খেলি। সরকারের দৃষ্টি শুধু ফুটবলকে ঘিরে। তারা যদি ফুটবলের দশ ভাগের এক ভাগও সহযোগিতা করত তাহলে আমরা আরো উন্নতি করতে পারতাম। নিজেদের ইচ্ছা ও স্পন্সরের সহযোগিতায় আমরা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিই। হকি প্রফেশনালিজম বলতে কিছুই নেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করতে। ১৯৬১ সালে ঘানাতে হকির জন্ম হলেও ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ড কাপে খেলতে পেরেছি। এরপর অলিম্পিকে কোয়ালিফাইং পর্যন্তই পৌঁছা। টপকাতে পারিনি। ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডে চার জাতির টুর্নামেন্টে (নেদারল্যান্ড, ঘানা, পর্তুগাল ও ত্রিনিদাদ টোবাগো) রানার্স আপ হতে পেরেছি। ২০০৯ সালে ন্যাশনস কাপে (সাউথ আফ্রিকা, ঘানা, নাইজেরিয়া ও মিসর) তৃতীয়, ২০১১ সালে জিম্বাবুয়েতে অলিম্পিক কোয়ালিফাইংয়ে ৯টি দেশের মধ্যে তৃতীয় হওয়াতে অলিম্পিকে খেলা হলো না। এবার আশা করছি, ভালো কিছু করব।’
ঘানার এ দলটির পাঁচজন খেলোয়াড় দেশের বাইরে বিভিন্ন লিগে খেলে থাকেন। তন্মধ্যে সালবিনি ও আকাবা বেলজিয়ামে খেলেছেন। এখনো খেলছেন বৎসিও জনি ও বাহ শাদরাক। তারা দু’জনেই ইতালি লিগে খেলেন। এই বাহ শাদরাক বাংলাদেশের বিপক্ষে দু’টি গোল করেন। আর মাইকেল বাইদেন খেলেন সাউথ আফ্রিকায়। নিজেদের খেলা নিয়ে কোচ, ম্যানেজার ও অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা এই প্রথম নীল টার্ফে খেললাম। এ জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিতেই পারি। অচেনা পরিবেশ, অচেনা মাঠ। কোনো ধারণাই ছিল না বাংলাদেশ সম্বন্ধে। তার ওপর নীল টার্ফের অনুভূতিটা ছিল ভিন্ন। আমরা খেলার চেয়ে বেশি পর্যবেক্ষণ করেছি। আমাদের গ্রুপে চীন, মিসর ও শ্রীলঙ্কা প্রতিপক্ষ। মিসরের সাথে খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাকিদের সাথেও আশা করছি ভালো একটা কিছু হবে। ৫৬ বছর পর বিশ্বকাপে খেলার একটি সুযোগ রয়েছে। সহজে হাতছাড়া করতে চাইব না। দলের সবাই আলোচনা করেছি। জানি কষ্টসাধ্য। তারপরও এটি করতে পারলে সরকার দৃষ্টি দিতে বাধ্য হবে।’
বাংলাদেশের খেলা নিয়ে কিছু বলতে চাইলেন না কোচ। শুধু স্পিড ও মার্কিংয়ের কথাই বেরিয়ে এলো তার মুখ থেকে। ‘অচেনা দল হিসেবে প্রথমে অ্যাটাকে না গিয়ে ৮-১০ মিনিট পর্যবেক্ষণ করলে ভালো হতো। পর্যবেক্ষণ না করাতেই মার্কিং করতে পারেনি। তোমাদের ১২ থেকে ১৩টি ইন্ডিভিজুয়াল পাসিং আমাদের খেলোয়াড়েরা ধরে ফেলেছে। তবে তোমাদের কয়েকজন ভালো প্লেয়ার আছে। তারা একা না খেলে আদান প্রদানে আরো ভূমিকা রাখতে পারত।’