১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নীল নদ নিয়ে মিসর-ইথিওপিয়া বিরোধ কোন পথে?

-

নীল নদের ওপর বিশাল জল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাঁধ তৈরি নিয়ে মিসর এবং ইথিওপিয়ার মধ্যে যে বিরোধ চলছে, তা সমাধানে এ বছর ওয়াশিংটনে আবার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
গত বছর দীর্ঘ আলোচনার পর নীল নদ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তাতেও অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ইথিওপিয়ার পরিকল্পিত এই বাঁধটি নির্মিত হলে সেটা হবে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎকেন্দ্র। ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে নীল নদের উৎস নদী ব্লু নীলে ২০১১ সালে বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু করে ইথিওপিয়া, যেখান থেকে নীল নদের ৮৫ শতাংশ পানি প্রবাহিত হয়। তবে বিশাল এই বাঁধ নিয়ে মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে বিরোধ শুরু হয়েছে, যার মধ্যে পড়েছে সুদান। অনেকের আশঙ্কা, এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারে। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই বিতর্কের মূল কেন্দ্রে রয়েছে বিশাল একটি বাঁধ যা নিয়ে মিসরের আশঙ্কা যে, এর ফলে ইথিওপিয়া নদীটির পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে।
জলবিদ্যুৎকেন্দ্র কোনো নদীর পানি সরিয়ে ফেলে না, তবে এর ফলে নদীটির স্রোত প্রবাহের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের জলাধার, যা অনেকটা লন্ডনের সমান এবং ৭৪ বিলিয়ন কিউবিক মিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন, সেটা ভরতে সময় যত বেশি লাগবে, নদীটির প্রবাহের ওপর ততই কম প্রভাব পড়বে। ছয় বছর ধরে সেটি করতে চায় ইথিওপিয়া। কিন্তু মিসর চায়, এর চেয়েও বেশি সময় ধরে যেন সেটি করা হয়, ফলে নদীর পানি প্রবাহের ওপর হঠাৎ করে কোনো প্রভাব পড়বে না, বিশেষ করে জলাধার ভরার সময়ে। মিসর, সুদান এবং ইথিওপিয়া মিলে চার বছর ধরে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে এখন মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইথিওপিয়ার পানিসম্পদ ও জ্বালানিমন্ত্রী বেকেলে সেলেশি অভিযোগ করেছেন, কোনো চুক্তিতে পৌঁছানোর ইচ্ছা নেই মিসরের। তবে মিসরের পানিসম্পদমন্ত্রী মোহামেদ আবদেল আতেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, আলোচনায় সবগুলো পক্ষ সব বিষয়ে স্বচ্ছতা অর্জন করেছে, যার মধ্যে বাঁধের পানি ভরাটের মতো বিষয়ও রয়েছে।
মিসর কেন এত ক্ষুব্ধ?
পানির জন্য নীল নদের ওপর ৯০ ভাগ নির্ভর করে মিসর। ঐতিহাসিকভাবেই মনে করা হয়, নীল নদের স্থিতিশীল পানিপ্রবাহ থাকাটা মিসরের টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে নীল নদের পানিকে পবিত্র বলে মনে করা হয়। ১৯২৯ সালের একটি চুক্তি (পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালের আরেকটি চুক্তিতে) মিসর এবং সুদানকে নীল নদের পানির প্রায় সমস্ত অধিকার দেয়া হয়। ঔপনিবেশিক আমলের সেসব নথিপত্রে নদীটির উজানে যে প্রকল্প পানি প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে, সেখানে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়। কিন্তু কোনো নথিপত্রেই চুক্তির বাইরে থাকা দেশগুলোকে অংশ করা হয়নি, যার মধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়াও, যাদের ব্লু নীলের পানি নীল নদে অনেক বেশি অবদান রাখে। ইথিওপিয়া বলছে, শতবর্ষ পুরনো ওসব চুক্তি মানতে তারা বাধ্য নয় এবং ২০১১ সালে আরব জাগরণের পরপরই তারা বাঁধের কাজকর্ম শুরু করে।
কিন্তু মিসরের আসল চিন্তা হলো, নীল নদে যদি পানিপ্রবাহ কমে যায়, তাহলে সেটি লেক নাসেরকে প্রভাবিত করবে। যার ফলে মিসরের আসওয়ান বাঁধে পানির প্রবাহ কমে যাবে, যেখান থেকে মিসরের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। মিসরের আরো আশঙ্কা, ইথিওপিয়ার বাঁধের কারণে নীল নদের পানিপ্রবাহ কমে যাবে, যা দেশটির নাগরিকদের পানির প্রধান উৎস। নীল নদের পানির প্রবাহ যদি অনেক কমে যায়, তাহলে সেটি দেশটির নদীপথে পরিবহন ব্যবস্থাকেও হুমকির মুখে ফেলবে এবং কৃষকদের কৃষি ও পশুপালনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রায় ৪০০ কোটি ডলার খরচ করে বাঁধটি নির্মাণ করতে চাইছে ইথিওপিয়া। এটি নির্মাণ শেষ হলে প্রায় ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইথিওপিয়ায় বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। দেশটির ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে বাস করে। এই বাঁধ থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে, তা দেশটির নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত হয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকেও রফতানি করা যাবে। নিজেদের সক্ষমতার একটি প্রতীক হিসেবেও এই বাঁধকে দেখতে চায় ইথিওপিয়া। এই বাঁধ নির্মাণে বাইরের অর্থায়ন নিচ্ছে না দেশটি। সরকারি বন্ড এবং প্রাইভেট ফান্ড থেকে বাঁধটি তৈরি করা হচ্ছে। ফলে এই বাঁধের ব্যাপারে অন্য দেশের কথা বলাকে অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ বলে মনে করছে ইথিওপিয়া। প্রতিবেশী সুদান, দক্ষিণ সুদান, কেনিয়া, জিবুতি এবং ইরিত্রিয়া এই বাঁধ থেকে উপকৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর অনেক দেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। সুদানের জন্য একটি সুবিধা হলো, এই বাঁধের কারণে সেখানকার নদীর পানিপ্রবাহ সারা বছর ধরে একই রকম থাকবে। কারণ সাধারণত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে পানিপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে অনেক সময় বন্যা দেখা দেয়।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই বিতর্কের সমাধান না হলে দেশগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। ২০১৩ সালে গোপন ভিডিওতে দেখা যায়, বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে ইথিওপিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কিছু বৈরী পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করছেন মিসরের রাজনীতিকরা। মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসি বলেছেন, নীল নদের পানি নিয়ে তাদের অধিকার রক্ষায় মিসর সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর গত বছরের অক্টোবরে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ বলেছেন, কোনো শক্তিই ইথিওপিয়াকে বাঁধ নির্মাণ থেকে দমাতে পারবে না। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ গত বছর সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বাঁধ নিয়ে দেশগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এতে জড়িয়ে পড়া থেকে বোঝা যায় যে, পরিস্থিতি কতখানি গুরুতর এবং অচলাবস্থা ভাঙা কতটা জরুরি। এই অচলাবস্থা কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চেয়েছে মিসর, যা প্রথমে মানতে চায়নি ইথিওপিয়া। তবে পরে রাজি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দুটি দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হলে সেটি লাখ লাখ মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এর ফলে সুয়েজ খাল, হর্ন অব আফ্রিকার মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
(বিবিসি অবলম্বনে)


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল