২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমেরিকা কি ইরাক থেকে সরে যাবে?

-

ইরাকি প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল-মাহদি বলেছেন, মার্কিন বাহিনীর হামলায় নিহত ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি তার আমন্ত্রণে বাগদাদ গিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেছেন, সে দিনই তিনি সোলাইমানির সাথে বৈঠক করার পরিকল্পনা করেছিলেন। অন্য কথায়, সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছিল সে দেশে যে বিদেশী রাষ্ট্রটি তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আর যে দেশটিতে ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এ বক্তব্যকে কোনোভাবে অতিরঞ্জিত হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।
এটি সর্বজনবিদিত যে, জেনারেল সোলাইমানি কিছু দিন ধরে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা উপস্থিতি বিদায় করার চেষ্টা করছিলেন। তার উদ্যোগগুলোর একটি ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছিল মর্মে দাবিও করা হচ্ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিপরীতে ইরাকি সরকারকে চাপ দিয়ে ওই প্রচেষ্টাগুলোকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করেছিল। তবে মার্কিন বাহিনী অপসারণের আগে যে বিলটি ইরাকি সংসদে উত্থাপিত হয়, সেটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
এই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন ইরাকি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। আমাদের দেখার বিষয় হলো যে, ইরাকি সরকার কার্যকরভাবে এটি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয় কি না।
দিন শেষে ইরাক থেকে মার্কিন বাহিনীকে বিদায় করা ইরানের জন্য একটি কৌশলগত লক্ষ্য ছিল। এ লক্ষ্যে কাসেম সোলাইমানি ইরাকি সংসদে শিয়া প্রতিনিধিদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করেছিলেন। সুতরাং বলা যায়, ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া ইরানের কৌশলগত লক্ষ্যের বিপরীত ছিল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি টেকসই হওয়ার বিষয়টি মূলত ইরাকের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর নির্ভরশীল ছিল। আমেরিকা ইরাকের মাধ্যমে হাজার হাজার ট্রাক বোঝাই অস্ত্র কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সন্ত্রাসবাদী উপাদানগুলোতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
ইরাক হয়ে ইরান সিরিয়া ও লেবাননের ভূমিতে প্রবেশের সুযোগ গ্রহণ করে। এ কারণে ইসরাইল ও সৌদিদের জন্য ইরাকে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তারা সম্ভবত জেনারেল সোলাইমানিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে ইরাকি সংসদে একটি বার্তা পাঠাতে চেয়েছিল। তবে এখন মনে হচ্ছেÑ ওই ঘটনার পর মার্কিন সেনারা সে দেশে বেশ কঠিন সময় কাটাচ্ছে।
আসলে ২০০৩ সালে আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করার সময় প্যান্ডোরার বাক্সটি খোলা হয় আর নিজের বানানো জালে নিজেই ধরা পড়ে। এ জাল বা নকশা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র সাদ্দাম সরকারকে পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল, তবে এ কর্মটি দেশটির জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসকে ভেঙে দেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানত তার বিভিন্ন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ইরাকে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে। ১৭ বছর ধরে দেশটিতে সামরিকভাবে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে একটি নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়। বহু বছর ধরে সাদ্দাম হোসেনের হাতে যারা নানা ধরনের ভোগান্তিতে ছিল, সেসব ইরাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ‘ত্রাণকর্তা’ হিসেবে বিবেচনা করেছিল। সেই একই লোকেরা এখন আমেরিকান সেনাদের তাদের দেশ থেকে বিদায় চাইছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তারা ইরাকে নির্মিত মার্কিন ঘাঁটির জন্য ব্যয় করা অর্থের বিলটি না পেলে ইরাকি সংসদের সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন না। ট্রাম্প এখন ইরাককে ডানে-বামে এই বলে হুমকি দিচ্ছেন, ‘ইরাক যদি মার্কিন বাহিনীকে চলে যেতে বলে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সমঝোতার ভিত্তিতে তা না করা হয় তা হলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো এমন চাপ দেয়া হবে, যা তারা আগে কখনো দেখেনি। ইরানের নিষেধাজ্ঞাগুলোর মতোই কিছুটা চেহারা হবে এর।’
ট্রাম্প শুরু থেকেই বলে আসছেন, ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের দেশে ফিরে আসতে হবে। অথচ ট্রাম্পকে নিওকনস এবং ইসরাইলই যৌথভাবে সোলাইমানি হত্যার মাধ্যমে একটি নতুন যুদ্ধের দিকে ট্রিগার টানতে প্ররোচিত করে।
‘আমেরিকা প্রথম’ স্লোগান গ্রহণকারী রিপাবলিকান ভোটাররা ট্রাম্পকে সমর্থন করে যিনি ‘বোকামির যুদ্ধের’ সাথে জড়িত না হওয়ার জন্য গর্ব করে বলতেন যে, করদাতাদের কোটি কোটি ডলার এ জন্য আগে ব্যয় করা হয়েছিল। ট্রাম্প নিজে এর আগে বলেছিলেন, ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ ‘আমেরিকান ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ভুল’ ছিল আর রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশকে অভিশংসিত না করার জন্য ডেমোক্র্যাটদের তিনি তিরস্কার করেছিলেন।
বুশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে ট্রাম্প তার সমালোচনাও করেছিলেন। ভাগ্যের কী পরিহাস; রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ডেমোক্র্যাটদের হাতে অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটরাও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন কংগ্রেসের কর্তৃত্বকে উপেক্ষা করে ইরানের সাথে নতুন যুদ্ধ শুরু করার অভিযোগ তুলেছে। এটি জানা ছিল যে, ট্রাম্প নিওকনদের সাথে হবনব করেননি, তবে এ মুহূর্তে তিনি সেখানেই রয়েছেন যেখানে থাকাটা তারা পছন্দ করেন। ২০০৩ সালে বুশকে ইরাকে নিয়ে গিয়েছিলেন নিওকনরা। এখন তারাই ট্রাম্পকে ইরানের সাথে যুদ্ধ শুরু করার জন্য অভিশপ্ত খেলায় ঠেলে দিয়েছে বলে মনে হয়।

[তুর্কি কলামিস্ট আবদুল্লাহ মুরাদোগ্লুর বিশ্লেষণ অবলম্বনে]
সৎশসসন@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দূত হলেন উসাইন বোল্ট ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৭ বাংলাদেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হিট অ্যালার্ট নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা ভান্ডারিয়ায় পিকআপ চাপায় বৃদ্ধ নিহত হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী! 

সকল