২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরান, রাশিয়া ও চীনের সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ

-

ইরান, চীন ও রাশিয়া উত্তর ভারত মহাসাগর এবং ওমান সাগরে কয়েক দিন আগে চার দিনব্যাপী সামরিক মহড়া সম্পন্ন করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে যখন নৌপ্রভাব বা নৌহামলা ভালোভাবে বিস্তার লাভ করেছে, তখন উপসাগরীয় এলাকার জন্যও সেটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠতে পারে। উল্লেখ্য, উপসাগরীয় এলাকার সঙ্কটজনক পানিসীমায় জাহাজগুলোকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গত মাসে নৌমহড়া দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য। গত জুলাই মাসে হরমুজ প্রণালীতে যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী জাহাজে ইরানের হামলা এবং ওই এলাকার তেল ট্যাঙ্কারগুলোর ওপর বেশ কয়েকবার হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ওই উদ্যোগ নেয়া হয়। যুক্তরাজ্যের প্রধান পরিবহন চোক পয়েন্ট উপসাগরীয় এলাকা থেকে উন্মুক্ত মহাসাগর পর্যন্ত একমাত্র সমুদ্রপথে মালামাল পরিবহন করে থাকে। এই সমুদ্রপথে বিশ্বের মোট জ্বালানি তেলের এক-পঞ্চমাংশ, এক-চতুর্থাংশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্ধেক বাণিজ্য হয়ে থাকে।
আঞ্চলিক পানিসীমায় ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খলার জন্য ওয়াশিংটন তেহরানকে দায়ী করেছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জোরদার করার মাধ্যমে তাদের বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রভাব হ্রাস করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন নেভাল ফোর্সে ছয়টিরও অধিক দেশ অংশগ্রহণ করলেও ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ এতে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তেহরানের সাথে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় দেশগুলো আমেরিকার ওপর অসন্তুষ্ট।
এ দিকে ইরানের সাথে ছয় বৃহৎ শক্তির পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাশিয়া ও চীন উপসাগরীয় এলাকায় একটি নতুন সামষ্টিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা গঠন করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তারা ওই অঞ্চলে একটি বেসামরিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং নন-রিজন্যাল স্টেটগুলোর স্থায়ী সেনা মোতায়েন বাতিল করারও প্রস্তাব দিয়েছে। একই সময়ে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরানের বন্দরগুলোতে রাশিয়া ও চীনের নৌজাহাজের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
কৌশলগত এই বিরোধপূর্ণ অবস্থান তথা শত্রুতার পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে বেইজিং, মস্কো ও তেহরান অপারেশন মেরিন সিকিউরিটি বেল্ট জয়েন্ট নেভাল ড্রিল বা নৌমহড়া শুরু করে। ইরানের নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল হোসেইন খানজাদি বলেন, ‘এই নৌমহড়ার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে একটি বার্তা দেয়া হচ্ছে’ এবং তিন দেশ যে সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি কৌশলগত পর্যায়ে উপনীতি হয়েছে তারই ইঙ্গিত বহন করছে। চলতি মাসের প্রথমার্ধে ইরানি নৌবাহিনীপ্রধান ডেস্ট্রয়ার এবং সাবমেরিন উৎপাদনসহ চীন ও রাশিয়ার সাথে সহযোগিতা আরো জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
২০২০ সালের প্রথম দিকে নজর দিলে ইরান, রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার উষ্ণ সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে হয়। কারণ বিশেষভাবে ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে এবং তিনি দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রেসিডেন্ট হলে তাদের সবার জন্য অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাবে। এখানে উল্লেখ করা যায়, মস্কো ও বেইজিং সেমি-রেগুলার ওয়্যার গেইমে অংশ নিয়ে আসছে। গত গ্রীষ্মে তারা রাশিয়ার অতিপূর্বে ট্রান্সবাইকাল অঞ্চলে তিন লাখ সৈন্য নিয়ে মহড়ায় অংশ নিয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement