২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ম্যালকম এক্স আমার যে অনুরোধ রাখেননি Ñ আহমদ তুতুনজি

-

আন্তর্জাতিক ইসলামী চিন্তাবিদ ড. আহমদ তুতুনজি স্মৃতিচারণমূলক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সদ্য হজ ফেরত ম্যালকম এক্স (Malcom X) তার তাজা ঈমানের কারণে আমার যে অনুরোধ রাখেননি।’ ম্যালকম এক্স ছিলেন আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ বা কালো মুসলিম নেতা। তার মুসলিম নাম হাজী মালিক শাহবাজ। তিনি ১৯৬৪ সালের এপ্রিলে পবিত্র হজ পালনে মক্কা যান। তার বৈমাত্রেয় বোন Ella Little Collins-এর আর্থিক সহযোগিতায় তিনি হজ সম্পন্ন করেন। সম্প্রতি ইস্তাম্বুলে এক সম্মেলনে যোগ দিতে এলে তার এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। গত অক্টোবর মাসের শুরুতে CIS দেশগুলোর International Islamic Intellectual Thought in The CIS Country : Past, Present and The Way Forward শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ড. আহমদ তুতুনজি। এতে সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. উমর হাসান কাসুলি। সেক্রেটারি জেনারেল, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইনস্টিটিউট অব থট, ভার্জিনিয়া, ইউএসএ (IIIT)। ড. আহমদ তুতুনজি পেশাগতভাবে একজন পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে তিনি মুসলিম গবেষকদের কাছে এখন একজন চলমান থিংক ট্যাংকার। সাক্ষাতকালে ড. তুতুনজির সাথে তার জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে কথা হয়। এর মধ্যে ম্যালকম মার্শালের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলোÑ

১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ম্যালকম এক্স আমেরিকান কালো মুসলিমদের বৃহৎ সংগঠন নেশন অব ইসলামের দ্বিতীয় কমান্ডার ইন-চিফ ছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি নেশন অব ইসলাম ত্যাগ করেন এবং পরিপূর্ণ সুন্নি মুসলিম হয়ে ওঠেন। আলিজাহ মুহাম্মদের নেশন অব ইসলামের তিনি অসাধারণ পপুলার বক্তা ছিলেন।
১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বরে হজ থেকে ফিরে আসেনÑ এক নতুন ম্যালকম এক্স, এক নয়া হাজী মালিক শাহাবাজ। ইসলামের সাম্য, ভাতৃত্ব, বর্ণগোত্রহীন সাদা-কালো মানুষের লাখো ইহরাম পোশাকের মিছিল তার অন্তরে ঈমানের পরশ লাগে। পবিত্র মক্কায় হাজীদের আন্তর্জাতিক মিলনমেলায় ম্যালকম এক্সের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তিনি ইসলামের বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধের স্বাদ আস্বাদন করেন।
হজ থেকে ফিরে আসা ম্যালকম এক্স তথা হাজী মালিক শাহবাজ আমেরিকায় শুরু করেন এক নতুন অধ্যায়। তিনি তার আগের সংগঠন নেশন অব ইসলামের ভুলগুলোর সমালোচনা শুরু করেন। পরিণামে তার সাবেক সংগঠনের লোকেরা তার প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। দিনে দিনে অবস্থা যখন ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তখন আমি ও আমার বন্ধু আহমদ সাদিক উসমান (আমরা উভয় তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত এবং MSA-এর ছাত্রনেতা ছিলাম) ব্যক্তিগতভাবে ম্যালকম এক্সের সাথে সাক্ষাৎ করি।
আমরা তাকে বোঝানোর চেষ্ট করি, আপনি হজ পালন করে ইসলামের পরিপূর্ণ ভ্রাতৃত্বের ধারণা নিয়ে এসেছেন। এটা ভালো কথা। আপনি মেহেরবানী করে আপনার পূর্বসূরি আলিজাহ মুহাম্মদ ও তার অনুসারী নেশন অব ইসলামের সমালোচনা বন্ধ করুন। নেশন অব ইসলামে এক মিলিয়ন কালো মুসলিম রয়েছে। আপনি তাদের বাদ দিয়ে আমেরিকান অবশিষ্ট ২২ মিলিয়ন (বেসরকারি হিসাবে ৩০ মিলিয়ন) কালো মানুষের কাছে ইসলামের সঠিক দাওয়াত পৌঁছে দিন। আপনি যদি তা না করেন, তা হলে নেশন অব ইসলামের লোকেরা আপনার বিপুল জনপ্রিয়তায় আপনাকে হত্যাও করতে পারে।
ম্যালকম এক্স আমাদের ওই অনুরোধ রাখেননি। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আলিজাহ মুহাম্মদের নেশন অব ইসলামে এক মিলিয়ন কালো মুসলিম রয়েছে। আমার ডাকে ওইখানে প্রায় অর্ধেক (পাঁচ লাখ) কালো মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তারা ভুল ইসলামের দাওয়াত পেয়েছেন, সেটা আমারই কারণে। তাদের ভুল সংশোধন না করা পর্যন্ত আমি থামব না। পিছু হটব না। আমার ঈমান আমাকে এটা করার অনুমতি দেয় না।’
ম্যালকম এক্স তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। পরিণামে যা হওয়ার তাই ঘটেছে। আমরা তার সাথে সাক্ষাতের মাত্র চার দিন পর চারজন বন্দুকধারী আততায়ী ১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ম্যালকম এক্সকে হত্যা করে। ওই দিন ওই সময় তিনি নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের এক অডিটোরিয়ামে বক্তব্য রাখছিলেন।
আমরা ম্যালকম এক্সকে হিকমাহ বা কৌশল অবলম্বন করতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি তার সদ্য হজ ফেরত তরতাজা ঈমানের কারণে আমাদের অনুরোধ রাখেননি।
ম্যালকম এক্স তার হজ অভিজ্ঞতায় আমাদের বলেছেন, যখন তিনি সাদা কাপড়ের ইহরামের পোশাকে আচ্ছাদিত হলেন, তখন তার ভেতরের সব ময়লা দূর হয়ে যায়। তার অন্তর ধবধবে সাদা। আর বায়তুল্লাহর চার পাশে লাখো বনি আদম শ্বেত কাপড়ের ইহরামে তাওয়াফ করছেন, সায়ি করছেন। আরাফায় ও মিনায় সাদা ইহরামে সাদা পোশাকের মিছিল চলছে তো চলছেই। সবাই একই কাতারে। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘যখন আমি কাবার চত্বরে সালাত আদায় করি, তখন আমি দেখি কালো মানুষের পায়ের কাছে পেছনের সারির সাদা মানুষগুলো রাব্বুল আলামিনের দরবারে সিজদাহ করছে। এটা ছিল আমার জীবনের কল্পনাতীত ঘটনা যা আমার জন্মভূমি আমেরিকায় নেই। কাবার চত্বরে আমির-ফকির, রাজা-প্রজা, ধনী-গরিব সবাই একই কাতারে। সবাই মাটিতে কপাল রেখে এক ও অদ্বিতীয় লা-শরিক আল্লাহ সুবহানু তায়ালার আনুগত্য করছে। সবাই লাব্বাইক ধ্বনিতে তার বড়ত্ব ঘোষণা করছে। কারো প্রতি কারো হিংসা নেই, বিদ্বেষ নেই, ক্ষোভ নেই, সবাই সমান। এমন অভিজ্ঞতা আর আবেগ নিয়েই তিনি আমেরিকায় ফিরে আসেন। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। যে অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে তার শাহাদাতের মধ্য দিয়ে। হ


আরো সংবাদ



premium cement
চায়ের সাথে চেতনানাশক খাইয়ে স্বর্ণালঙ্কার চুরি ঈশ্বরগঞ্জে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার ফারজানাকে সংবর্ধনা যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে‘ভিত্তিহীন' তথ্য ব্যবহারের অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের মোদির মুসলিমবিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় সংখ্যালঘু নেতাকে বহিষ্কার ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের নতুন কনসাল জেনারেল সেহেলী সাবরীন চান্দিনায় পানিতে ডুবে একই পরিবারের দুই শিশু মৃত্যু কেএনএফ সম্পৃক্ততা : গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতা সম্পর্কে যা জানা গেছে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ শ্রমজীবি মানুষের মাঝে ক্যাপ, পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর পশ্চিম নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রীর ২৭ স্থানে স্বামীর ধারালো অস্ত্রের আঘাত

সকল