২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন জনসন না করবিন?

-

যুক্তরাজ্যের আগামী নির্বাচনে কোন দল জয় লাভ করবে? কনজারভেটিভ না লেবার পার্টি? কে হচ্ছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী, করবিন না জনসন?
সম্প্রতি টিভি বিতর্কে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টির দুই শীর্ষ নেতা। আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৯ নভেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আইটিভি এ বিতর্কের আয়োজন করে। এতে অংশ নেন কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসন ও লেবার নেতা জেরেমি করবিন। স্বাস্থ্যসেবা, স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যৎ এবং রাজপরিবার নিয়েও কথা বলেন দুই নেতা। তবে বিতর্কের বেশির ভাগ সময়জুড়েই ছিল ব্রেক্সিট ইস্যু।
আগামী ৬ ডিসেম্বর সাউথহ্যাম্পটনে দুই নেতার মুখোমুখি বিতর্কের আয়োজন করেছে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তবে আগের বিতর্কে কোন নেতা বিজয়ী হয়েছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। জরিপ প্রতিষ্ঠান ইউগভের তাৎক্ষণিক জরিপেও দর্শকদের মধ্যে এ ব্যাপারে বিভক্তি ছিল লক্ষ্যণীয়। ইউগভ বলছে, বেশির ভাগ লেবার ভোটারদের মতেÑ করবিন জিতেছেন। বিপরীতে কনজারভেটিভদের মতে, জনসনই বিতর্কে জয়ী হয়েছেন।
বিতর্কে অংশ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের চূড়ান্ত বিচ্ছেদ নিয়ে বিদ্যমান ‘জাতীয় দুর্ভোগের ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বরিস জনসন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ইইউর সাথে তার সমঝোতা চুক্তি পার্লামেন্টে পাস করে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন তিনি। জবাবে লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেন, তার দল ব্রেক্সিটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার জনগণের হাতে তুলে দিতে চায়। এ জন্য জনসনের করা চুক্তিটি ছিঁড়ে ফেলে ইইউর সাথে নতুন একটি চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি করবেন। সেই চুক্তির ব্যাপারে জনগণের সমর্থন আদায়ে নতুন আরেকটি গণভোট দেয়ারও অঙ্গীকার করেন লেবার নেতা।
স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে প্রায় অর্ধেক আসনের অধিকারী রাজনৈতিক দল দ্য স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) সমর্থন পেতে লেবার পার্টি স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা নিয়ে আরেকটি গণভোটে রাজি হতে পারে বলে দাবি করেন বরিস জনসন। তবে তার দল স্কটিশদের সমর্থন পাওয়ার জন্য এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না বলে জানান জনসন। এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে এসএনপির সাথে জোট গঠনের প্রয়োজন তার দলের নেই বলে জানান করবিন।
জনসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবাকে যুক্তরাষ্ট্র ও বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করে দেয়ার অপচেষ্টার অভিযোগ তোলেন করবিন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একাধিক গোপন বৈঠকের বিবরণ তুলে ধরে লেবার নেতা বলেন, কনজারভেটিভ সরকার ব্রিটিশ স্বাস্থ্যসেবায় মার্কিন পণ্যসামগ্রীর পরিপূর্ণ প্রবেশাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে জনসন বলেন, তার সরকার কিংবা তার দলের কোনো সরকার কোনো অবস্থাতেই জাতীয় স্বাস্থ্যসেবাকে বাণিজ্যিক দরকষাকষির টেবিলে তুলবে না।
যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্রসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে করবিন বলেন, ‘এর কিছুটা উন্নতি ঘটানো দরকার’। তবে বরিস জনসন বলেন, ‘রাজপরিবার নিন্দার ঊর্ধ্বে।’
যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী প্রচারণায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে উঠছে অভিবাসন। বিশেষ করে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে প্রধান রাজনৈতিক শিবিরগুলো। এ পরিকল্পনার মূলে রয়েছে যুক্তরাজ্যমুখী অভিবাসনের স্রোত কিভাবে সামাল দেয়া যায়; তা নির্ধারণ করা।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভি পার্টি সামগ্রিকভাবে অভিবাসী কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে বিদেশী নাগরিকদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার মতো পয়েন্টভিত্তিক অভিবাসন নীতি চালুর পরিকল্পনার কথা বলছে দলটি। অন্য দিকে বিরোধী দল লেবার পার্টি বলছে, গত সেপ্টেম্বরে দলীয় সম্মেলনে অভিবাসীসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবে বর্তমানে প্রচলিত ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবাধ চলাচলের মতো একটি নীতি গ্রহণ করা হবে। যার ব্যাপ্তি ইইউর গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্য দেশের নাগরিকরাও পাবে।
লেবার পার্টির এই প্রস্তাবের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। কড়া ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, এর ফলে যুক্তরাজ্যের দিকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে দলে দলে মানুষ ছুটে আসবে। লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডায়ান অ্যাবোটকে লেখা চিঠিতে প্যাটেল লেখেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনাদের সম্মেলনে পাস হওয়া নীতি নিয়ে আমার গভীর উদ্বেগ রয়েছে। এর ফলে আমাদের সরকারি সেবার ওপর বিপুল আসতে পারে। ওই নীতি পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্রের নীতি বিরুদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রীতি প্যাটেলের চিঠি ইস্যুতে টুইটারে মন্তব্য করেছেন ডায়ান অ্যাবোট। তিনি বলেন, লেবার পার্টি অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা রক্ষা ও সম্প্রসারণে প্রতিশ্রুতিশীল। রক্ষণশীলরা ইইউর ৩০ লাখ মানুষের কাছ থেকে সেই অধিকার কেড়ে নেবে। আমরা তা বজায় রাখব। তিনি বলেন, রক্ষণশীলরা পরিবার ভেঙে দেবে আর আমরা তা জোড়া লাগাব।
ব্রিটেনে সাম্প্রতিক সব প্রচারণাতেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল অভিবাসন ও দেশটিতে প্রবেশ করতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ইস্যুটি। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোটের সময়েও অন্যতম বড় ফ্যাক্টর ছিল এই ইস্যু। আগের রক্ষণশীল থেরেসা মে সরকার মোট অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে কয়েক বছরও তা পূরণ করতে পারেনি তারা। তবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আমলে ওই নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে দলটি।
এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল রক্ষণশীল দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছেন, সামগ্রিকভাবে আমরা অভিবাসীর সংখ্যা কমালেও বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকের মতো অতি দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য আমরা আরো বেশি উদার ও নমনীয় হবো। মানুষ যদি রক্ষণশীল দলকে ভোট দেয় আর আমরা একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে ইইউ ছাড়তে পারি, তাহলেই কেবল এটি বাস্তবায়ন সম্ভব।
রক্ষণশীল দল বলছে, আগামী মাসের নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করলে তারা অভিবাসীদের জন্য পয়েন্টভিত্তিক নিয়ম চালু করবে। ইংরেজি ভাষাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দক্ষতার ভিত্তিতে এসব পয়েন্ট নির্ধারিত হবে। এর মাধ্যমে তারা সারা বিশ্ব থেকে সবচেয়ে মেধাবী ও যোগ্যদের নিজ দেশে প্রবেশের সুযোগ দিতে চায়।
তবে লেবার পার্টির ডায়ান অ্যাবোট একে রক্ষণশীল দলের আরেকটি ‘ফেক নিউজ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের সমাজের ক্ষতি হয়েছে সরকারি সেবা কমানোয় ইইউ নাগরিকেরা কাজের জন্য আসায় নয়।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়া (ব্রেক্সিট) নিয়ে দ্বিতীয়বার গণভোট হলে নিরপেক্ষ থাকবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। ভোটের ফলাফল বিশ্বাসযোগ্য রাখতে এবং দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে নিরপেক্ষ থাকবেন বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন তিনি। তবে এই ইস্যুতে দলের অবস্থান বিশেষ সম্মেলনে নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছেন ৭০ বছর বয়সী এই নেতা।
২০১৬ সালে এক গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দেয় যুক্তরাজ্যের ভোটাররা।
ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউর সাথে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের শর্ত নির্দিষ্ট করে কয়েক দফায় তৈরি হয় ব্রেক্সিট চুক্তি। তবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এসব চুক্তি অনুমোদন করেনি। ফলে আগামী ১২ ডিসেম্বর দেশটিতে অনুষ্ঠিত হবে নতুন সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন।
রক্ষণশীল দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে সম্মত হওয়া চুক্তি বজায় রেখে আগামী বছরের জানুয়ারিতেই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে চান। অপর দিকে, বিরোধী দল লেবার পার্টি ইইউর সাথে নতুন চুক্তি করতে দরকষাকষি করতে চায়। এ ছাড়া আগামী বছর তার ওপর গণভোট আয়োজনেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দলটি।
গত ২২ নভেম্বর বিবিসি টিভিতে সম্প্রচারিত এক প্রশ্নোত্তর পর্বে জেরেমি করবিন বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হবো, যদি আমি তা হই তাহলে ইইউ ও ব্রেক্সিট নিয়ে অন্তহীন বিতর্ক চলতে দেয়ার চেয়ে ওই সময় আমি নিরপেক্ষ অবস্থান নেবো। তাতে আমাদের জনগোষ্ঠী ও দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে বিশ্বাসযোগ্যভাবে (গণভোটের) ফলাফল প্রকাশ করতে পারব।


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায় বরিশালে সালাতুল ইসতিসকার আদায় অর্ধ শতাব্দীতে ভ্যাকসিন সাড়ে ১৫ কোটি লোকের জীবন বাঁচিয়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল্লাহর রহমত কামনায় সকলকে সিজদাহ অবনত হতে হবে-মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন

সকল