২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেক্সিট নিয়ে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ

-

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়া বা ব্রেক্সিট নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তার শেষ কী হবে তা নিয়ে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চুক্তি হোক বা না হোক, ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে মরিয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। অন্য দিকে চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট চাইছে না ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। এখন পার্লামেন্টের হাতে যে সময় আছে তার মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলছে ইইউ।
এমনই সব সমস্যার মধ্যেই ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রক্রিয়ামাফিক ব্রেক্সিট শেষ করতে চুক্তির বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিল ব্রিটেন। গত বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতাদের সাথে এক বৈঠকের আগে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা চুক্তির বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছান বলে জানান বরিস জনসন। কিন্তু এ ‘বিচ্ছেদ’ চুক্তিটি ব্রিটিশ এমপিরা ব্যর্থ করে দেন।
গত জুলাইয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই ইইউর সাথে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রয়োজনে ‘চুক্তিহীন ব্রেক্সিট’ করার কথাই জোর দিয়ে বলেছেন। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে তা উভয়পক্ষের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তাই জনসনের ওই পথে হাঁটা আটকাতে ব্রিটিশ এমপিরা নতুন একটি আইন পাস করেছেন। এখন এমপিদের অনুমোদন আদায় ছাড়া জনসন ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে পারবেন না।
এই আইনের অংশ হিসেবে ব্রেক্সিট বিলম্বিত করার অনুরোধ জানিয়ে ইইউকে স্বাক্ষরবিহীন একটি চিঠি পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন বরিস। পাশাপাশি নিজের সই করা আরেকটি চিঠিতে তিনি এটাও লিখেছেন, ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেয়া হবে একটি ‘ভুল’ পদক্ষেপ। নিজের করা ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টের ভোটে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার পর ইইউয়ের কাছে এসব চিঠি পাঠান জনসন।
এর আগে বরিস জনসন জানিয়েছিলেন, ব্রেক্সিটের জন্য নির্ধারিত ৩১ অক্টোবরের চূড়ান্ত সীমা পেছানোর জন্য ‘মরে গেলেও তিনি কোনো অনুরোধ করতে পারবেন না’। তার মতে, সময় আরো বাড়ালে যুক্তরাজ্য ও ইইউ অংশীদারদের স্বার্থ এবং উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে চলতি বছরের গত মে মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি সরে দাঁড়ানোর পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসন। নির্বাচিত হওয়ার পর আগামী ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটেরও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-ও ইইউর সাথে বিচ্ছেদ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। তা সত্ত্বেও তিন-তিনবার তিনি পার্লামেন্টে তা অনুমোদন করতে ব্যর্থ হন। বরিস জনসন পর পর দুই বার চেষ্টা করেও এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি করাতে ব্যর্থ হলেন। গেল সোমবার সংসদের স্পিকার জন বার্কো একই অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের জন্য একই প্রস্তাব পেশ করার অনুমতি দেননি। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার নির্ধারিত তারিখের সপ্তাহখানেক আগেও গোটা ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া আগের মতোই অস্পষ্ট রয়ে গেল।
এ অবস্থায় জনসন বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংসদের নিম্ন কক্ষে বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শেষ করার মরিয়া উদ্যোগ নিয়েছেন। তারপর উচ্চ কক্ষের সম্মতির প্রয়োজন হবে। গত শনিবার সংসদে বিরোধীরা সবার আগে ব্রেক্সিট কার্যকর করার আইনিপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। জনসনের সরকার ঠিক সেই কাজই করতে চলেছে। কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীরা সেই প্রক্রিয়ায় বাধা না দিলে এবং ঠিক সময়ে সব আইন অনুমোদন করা সম্ভব হলে বিরোধীরা সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন করবেন, সরকার এমনটাই আশা করছে।
বিরোধীরা অবশ্য এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না। তবে একইসঙ্গে জনসনের প্রতিপক্ষরা সংসদে এমন কিছু উদ্যোগ নিতে চাইছে, যার ফলে সরকার আরো বিপাকে পড়তে পারে। ব্রেক্সিট প্রশ্নে দ্বিতীয় গণভোটসহ আরো কিছু সংশোধনী প্রস্তাব এনে বিরোধীরা সংসদীয় প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। জনসন সংসদের উদ্দেশ্যে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় আর কোনো বিলম্ব না করার আবেদন জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যদি চলতি সপ্তাহে অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার সম্পাদিত চুক্তি পার্লামেন্টে পাস করাতে ব্যর্থ হন তাহলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকরের নির্ধারিত সময় পিছিয়ে দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বর্ধিত সময় শেষ হওয়ার আগে যদি চুক্তিটি পার্লামেন্টের অনুমোদন লাভে সমর্থ হয় তাহলে ১ নভেম্বর অথবা ১৫ ডিসেম্বর নইলে জানুয়ারিতে ব্রেক্সিট কার্যকর করতে পারবে ব্রিটেন। মঙ্গলবারের বরিসের সম্পাদিত চুক্তিটি পার্লামেন্টে পাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওই সময় পার হওয়ায় তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
তবে সব পক্ষ সম্মতি জানালেও ৩১ অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করার জন্য যথেষ্ট সময় আর নেই বলে মনে করছে ইইউ। সে ক্ষেত্রে শুধু প্রক্রিয়াগত কারণে এই তারিখ কিছুকাল পিছিয়ে দেয়া হতে পারে। সে যাই হোক ব্রেক্সিট সমস্যার সমাধান যে খুব শিগগিরই হচ্ছে না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল