২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিক্ষোভে উত্তাল ইরাক সমাধান কোন পথে?

-

মার্কিন আগ্রাসনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ইরাকে এখন সরকারবিরোধী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ তুঙ্গে। দিনের পর দিন সরকারবিরোধী আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যকার সংঘর্ষে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা শতাধিক। আহত হয়েছে আরো চার হাজার। বেকারত্ব, নি¤œ জীবনযাত্রার মান ও পরিষেবা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজনৈতিক কোনো দল বা ব্যক্তির সমর্থন ছাড়াই রাজপথে নেমে আসে কয়েক হাজার মানুষ। এদের বেশির ভাগই তরুণ-যুবক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে কারফিউ জারি করা হয় এবং বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্টারনেট সেবা। প্রধানমন্ত্রী আদিল আবদুল মাহদি বিক্ষোভকারীদের দাবি মানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ও কারফিউ উপেক্ষা করে পুনরায় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসে। রয়টার্স জানায়, শনিবার বিক্ষোভকারীরা রাজধানীর তাহরির স্কায়ারে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে বহু লোক হতাহত হয়।
ইরাকে তরুণ যুবকদের বেকারত্ব ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের বৃহত্তম তেল রিজার্ভকারী দেশটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি এবং খাবার পানির সঙ্কট দেখা দেয়ায় জনগণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় ইরাক বরাবরই সামনের সারিতে রয়েছে। ২০১৫ সালে দেশটির সর্বোচ্চ অডিট বোর্ডের এক হিসাবে দেখা যায়, প্রতি বছর দেশ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের অবৈধ তহবিল বিদেশে পাচার হয়ে যায়। এক জরিপে দেখা গেছে, কারবালার ৮৯ শতাংশ ব্যবসায়ীকে তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়। ইরান সমর্থিত আধা সামরিক উপদলগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে লাভবান হচ্ছে। নির্মাণকাজের চুক্তি করতে গিয়ে তারা অর্থ নিচ্ছে। তেল সরবরাহ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। এখন যে বিক্ষোভ চলছে, সেটা শিয়াদের বিরুদ্ধে সুন্নিদের কোনো বিক্ষোভ নয়। বিক্ষোভকারীরা প্রধানত শিয়া। তারা তাদের শিয়া নেতাদের বিরুদ্ধেই রাস্তায় নেমে এসেছে। তারা স্লোগান দিচ্ছেÑ ‘ইরান বেরিয়ে যাও।’
লেবানন, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? এক কথায় বললে বলতে হবে ইরানি হস্তক্ষেপ। এ তিনটি দেশেই যে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরাজমান তার পেছনে ইরান বড় ফ্যাক্টর। লেবাননের রাজনৈতিক শূন্যতা এবং গৃহযুদ্ধের প্রতি তেহরানের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ইরানের প্রত্যক্ষ সহায়তায় হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সরকারের পতন যখন অত্যাসন্ন তখন ইরান সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। এখন ইরান সিরিয়ার ক্ষমতায় একজন অংশীদার। ইয়েমেনের কথায় আসা যাক। আরব বসন্তের প্রেক্ষাপটে সেখানে আলী আব্দুল্লাহ সালেহর সরকারের পতন ঘটলে আন্তর্জাতিক চুক্তি উপেক্ষা করে একটি গোষ্ঠীগত সম্প্রদায় ক্ষমতা দখল করে। তাদের সাথে ইরানের সংশ্লিষ্টতা ছিল। তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এখন ইরাকের হয়তো তেহরানের ভিকটিমে পরিণত হওয়ার পালা। ইরান হয়তো বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ইরাকে তাদের বশংবদ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে আমেরিকাকে চাপে ফেলার কৌশল নিতে পারে। শিয়া নেতা মোকতাদা আল সদর সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তার উপদলও এখন ক্ষমতাসীন সরকারের অংশ। তাই তাকেও এই সঙ্কটের দায়ভার নিতে হবে। ২০০৫ পরবর্তীকালে সরকারে সদরের অনুগত রাজনৈতিক নেতারাও অংশীদার ছিলেন। কিন্তু এই সরকার ছিল অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত।
তবে এটা মনে রাখতে হবে, ইরাকের বর্তমান সঙ্কটের জন্য কেবল ইরানই একমাত্র সমস্যা নয়। ইরাকের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভালো নয়। আগ্রাসী আমেরিকা কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে ইরাক দখল করে ইরাকের ইতিহাস ঐতিহ্য সব কিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখানে এখন নিরাপত্তা ও মানুষের জীবনযাপনের ন্যূনতম গ্যারান্টি নেই। সব ক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কিছু উপদল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শোষণ করে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেছে। ফলে দুর্নীতি দেশটিতে অপ্রতিরোধ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গোষ্ঠীতন্ত্র তথা শিয়া-সুন্নি বিভাজনও দেশটির একটি বড় সমস্যা।
ইরাকি জনগণ আমেরিকা এবং ইরান দুই দেশেরই হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকতে চায়। তার আগে মার্কিন সমর্থিত শিয়া প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবদিকে পুনর্নির্বাচিত করেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবদুল মাহদির ভাগ্যে কী আছে জানি না। তবে অনেকের আশঙ্কা, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে ইরান সমর্থিতরাই প্রধানমন্ত্রীর পদ দখল করে নিতে পারেন। ইরাকি জনগণকে স্বাধীনভাবে তাদের নেতৃত্ব বেছে নিতে দেয়া উচিত। তাহলেই হয়তো সেখানে শান্তি ফিরে আসতে পারে। হ


আরো সংবাদ



premium cement