গান্টেজ না নেতানিয়াহু
- মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
- ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
পাঁচ মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত ইসরাইলের দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনের পর দেশটিতে আবার রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এপ্রিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যেমন দু’টি প্রধান রাজনৈতিক দল চরম ডানপন্থী লিকুদ এবং মধ্য ডানপন্থী ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট প্রায় সমান সংখ্যক আসন পেয়েছিল এবারো ফলাফল প্রায় সে রকম। এপ্রিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মতো এবারো পলিটিক্যাল কিং মেকার হচ্ছেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিবারম্যানের কট্টর ইহুদিবাদী দল ‘ইসরায়েল বেইতেনু’। গত নির্বাচনের পর লিবারম্যান নেতানিয়াহুর কোয়ালিশনে যোগদানে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই নেতানিয়াহু সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
লিবারম্যান এবার শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবেন, সে ব্যাপারে আভাস দেয়া কঠিন হলেও বলা যায় তিনি লিকুদ ও ব্লু অ্যান্ড হোয়াইটের সমন্বয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ‘ইউনিটি সরকার’ গঠন করার চেষ্টা করবেন। তবে লিকুদ পার্টি যদি নেতানিয়াহুকে প্রধানমন্ত্রী করতে চায় তাতে তিনি রাজি নন। নেতানিয়াহুকে ছাড়া লিকুদ পার্টির সাথে তিনি শর্ত সাপেক্ষে হয়তো কোয়ালিশনে সম্মত হবেন। তবে তার প্রধান লক্ষ্য হলো ধর্মভিত্তিক গোড়া দলগুলোকে ক্ষমতাসীন কোয়ালিশনের বাইরে রাখা এবং বর্তমানে গোড়া বা ধর্ম মতে দৃঢ়বিশ্বাসী ইহুদি যুবকদের সেনাবাহিনীতে যোগদানে বাধ্য করতে আইন প্রণয়ন করা।
ব্লু অ্যান্ড হোয়াইটের নেতৃত্বে মধ্য-ডান কোয়ালিশন সরকার গঠনের আরেকটি পথ আছে। সেটি হলোÑ লিকুদ পার্টিকে কোয়ালিশনের বাইরে রাখতে হবে। ফিলিস্তিনিদের জয়েন্ট লিস্ট এ ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। ইসরাইলের ইতিহাসে এবারই প্রথম তারা এ ধরনের একটি সরকারে যোগদান করার প্রস্তাব দিয়েছে। ফিলিস্তিনি জয়েন্ট লিস্ট ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে তাদের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করে ১৩টি আসন লাভের মাধ্যমে এবার তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইসরাইলি রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনায় অবশ্যই এটা একটি বড় ধরনের ট্র্যাজেডি। ইসরাইলি সংবিধানে দেশটির ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সমান অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। গত বছর নেসেটে যে আইন পাস করা হয়েছে তাতে সেখানে ফিলিস্তিনিরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছেন। আইনে শুধু ইহুদিদের অধিকার ও স্বাধিকারের কথা বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনি আইন প্রণেতারা মনে করেন এই আইনে ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক ক্ষমতা অনেক নিচে নেমে গেছে। তাদের মর্যাদাহীন ও হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। জয়েন্টলিস্ট নেতা ওদেহ বলেন, ব্লু অ্যান্ড হোয়াইটের সাথে কোয়ালিশন করতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে শর্ত এই যে, ইসরাইলে ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গণ্য করা যাবে না। ডান দলের আরব ভূমি সংযুক্তি করণের প্রচেষ্টাও তারা সমর্থন করে না।
লিবারম্যানের গ্র্যান্ড কোয়ালিশন হলে সেটা হবে মধ্য-ডান থেকে চরম ডান। লেবার ও ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের মতো বেশির ভাগ মধ্য-বাম পার্টি হয় এটা বয়কট করবে অথবা আরাম আয়েশের জন্য বামপন্থীদের সাথে লীন হয়ে যাবে। কিন্তু এই দু’টি বড় পার্টি কোয়ালিশন সরকার গঠন করলে অশান্তিই বাড়বে। কারণ নির্বাচনের আগে কয়েক মাস ধরে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়েছে। এ ধরনের সরকারের ব্যাপারে লিবারম্যানের যুক্তি হলো : সকল নাগরিকের প্রতি আমার বক্তব্য হলোÑ আমাদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন জরুরি অবস্থায় রয়েছে। তাই রাষ্ট্রকে অবশ্যই উদার হতে হবে।
এবার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতানিয়াহুর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট লিকুদ পার্টির সাথে কোয়ালিশন করলেও তারা নেতানিয়াহুকে সাথে রাখতে রাজি না। গান্টেজ বলেছেন, বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিনি কোয়ালিশন অংশীদার করতে চান না। ইসরাইলি রাজনীতিবিদরা অবশ্য অতীতে এ ধরনের কথা বলে তা থেকে পরে সরে এলেও গার্ন্টেজ সম্ভবত এবার এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবেন না।
এবারের নির্বাচনে একটি লক্ষণীয় বিষয় ছিল নেতানিয়াহু ছাড়া অন্য কোনো নেতা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাতের বিষয়টি এবং তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ উসকে দেয়াকে পুঁজি করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাননি। ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টি এবার আসন পেয়েছে ৩১টি। কিন্তু সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ন্যূনতম ৬১টি আসন। ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট পার্টির আসন সংখ্যা হচ্ছে ৩৩টি। লিকুদ এবং ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট দু’দলই এখন সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ছোট ছোট দলগুলোর সমর্থন আদায়ে মরিয়া। এবারের নির্বাচনেও অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রিভলিন প্রধান দই দলের নেতা বেনি গান্টেজ এবং বেনিয়ামিনকে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, চলতি বছর ইসরাইলের তৃতীয় নির্বাচন ঠেকাতে তিনি করণীয় সব কিছু করবেন। ফিলিস্তিনি জয়েন্ট লিস্টের নেতা আইয়ান ওদেহ প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন, তারা নেতানিয়াহুকে আর ক্ষমতায় দেখতে চান না। জয়েন্টলিস্ট ছাড়াও গান্টেজকে ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন এবং লেবার পার্টিও সমর্থন দিয়েছে।
বেনি গান্টেজ ও নেতানিয়াহু এখন তাকিয়ে আছেন এবারের নির্বাচনের কিং মেকার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিবারম্যানের দিকে। শেষ পর্যন্ত ইসরাইলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়Ñ তা দেখার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।