১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার সমাধান নেই

-

সব নাগরিকের কাছে বন্দুক থাকলে সন্ত্রাসবাদ ও অপরাধের মোকাবেলা করা সহজ হয়। গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন যুক্তি তুলে ধরে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। দেশটিতে প্রতি ১০০ জনের কাছে ১২১টি বন্দুক থাকে। সাধারণ মানুষের কাছে বেশি আগ্নেয়াস্ত্র আছে এমন দেশের তালিকায় শীর্ষে এই দেশ। দেশটিতে বন্দুক, পিস্তলসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও সরঞ্জাম প্রায় অবাধে কেনা যায়।
মার্কিন সংবিধানের একটি ধারাকে আঁকড়ে ধরে ওই অধিকারের প্রবক্তারা যে কোনো রকম অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করে চলেছে। এ ব্যবসার সাথে যুক্ত সংগঠন ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন শক্তিশালী লবি হিসেবে এতকাল বন্দুক নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় উদ্যোগ ব্যর্থ করে এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টরাও তাদের চাপের মুখে অসহায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংগঠন ও তাদের মূল্যবোধের জোরালো প্রবক্তা। আর এসবের ফল দেশটিতে ঘন ঘন বন্দুক হামলা।
বেসরকারি সংস্থা গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্য মতে, চলতি বছর দেশটিতে ২৪৭টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে স্কুলে গোলাগুলির ঘটনাই বেশি। সর্বশেষ এই হামলার ঘটনা ঘটেছে গত ৪ আগস্ট রোববার। ওই দিন দুটি রাজ্যে পৃথক বন্দুক হামলায় মারা গেছে অন্তত ৩০ জন। যাদের মধ্যে একজন বন্দুকধারী।
রোববার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ১টায় দেশটির ওহিও রাজ্যের ডেটন এলাকায় বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হামলায় অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছে। নিহত হয়েছে হামলাকারীও। এর কয়েক ঘণ্টা আগে শনিবার বেলা ১১টায় দেশটির টেক্সাস রাজ্যের এলপাসো শহরের একটি শপিংমলে আরেক বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। এ হামলায় অন্তত ২৬ জন আহত হয়েছে।
এ বছর শুধু স্কুলেই বন্দুক হামলা হয়েছে ৯৪টি
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে গোলাগুলির ঘটনায় শুধু এ বছরেই অন্তত ১১৩ জন হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। স্কুলে বন্দুক হামলার ঘটনায় প্রতি বছরে নিহতদের সংখ্যার তালিকা তৈরির উদ্দেশ্যে করা এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
২০১৮ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে কাজ করা পত্রিকা ‘এডুকেশন উইক’ স্কুলে গোলাগুলির ঘটনার তালিকা তৈরি করা শুরু করে। তখন থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৩টি ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে তারা, যেসব ক্ষেত্রে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে বছরে প্রায় ১৮০ দিন স্কুল খোলা থাকে। অর্থাৎ গত বছর গড়ে প্রতি আট দিনে একটি করে হামলা হয়েছে কোনো না কোনো স্কুলে।
স্কুলে গোলাগুলির ঘটনা পর্যালোচনা করা আরেকটি গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত হিসাব করলে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে ২০১৮ সালে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা সংস্থা এবং ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি, যারা ভিন্ন পদ্ধতিতে স্কুলে বন্দুক হামলার ঘটনা লিপিবদ্ধ করে। তারা বলছে, এ বছরে স্কুলে বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে ৯৪টি।
আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ক আইনের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক
যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র বহন এবং এর ব্যবহারসংক্রান্ত আইনে কড়াকড়ি আরোপ করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছে বেশ কয়েকটি সংস্থা। তবে এর পাশাপাশি, স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার পক্ষে কথা বলার লোকও কিন্তু কম নেই। স্কুলে গোলাগুলির ঘটনাগুলো বিশ্বের বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমের অন্যতম প্রধান শিরোনাম হিসেবে জায়গা পেলেও এর মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা রয়ে গেছে লোকচক্ষুর আড়ালেই।
যেমন গত মাসে ভার্জিনিয়া রাজ্যের একটি প্রাথমিক স্কুল থেকে সন্তানকে আনতে গেলে একজন অভিভাবকের পায়ে গুলি লাগার ঘটনা ঘটে। অন্য আরেকজন অভিভাবকের পকেটে থাকা বন্দুক থেকে ভুলক্রমে গুলি বের হয়ে ওই অভিভাবকের পায়ে গুলি লাগায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
অথবা মার্চে ম্যারিল্যান্ডের একটি স্কুলে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের গুলিতে দু’জন কিশোরের আহত হওয়ার ঘটনা। যেখানে ধরা পড়ার পরপর অভিযুক্ত কিশোর হাতের বন্দুক ব্যবহার করে আত্মহত্যা করে এবং পরবর্তীতে আহত দু’জনের মধ্যে একজন ১৬ বছর বয়সী কিশোরী মারা যায়। স্কুলে গোলাগুলির ঘটনার বিষয়ে পরিসংখ্যান বা সংখ্যায় হেরফেরের অন্যতম প্রধান কারণ গোলাগুলির ঘটনার সংজ্ঞায়নের বৈপরীত্য।
সংখ্যার হিসাবে সবচেয়ে খারাপ বছর ২০১৮
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে ৯৪টি। যা যেকোনো বছরে হওয়া বন্দুক হামলার ঘটনার চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৬ সালে হওয়া ৫৯টি হামলার ঘটনা। এই হিসাবে স্কুলে বন্দুক হামলায় মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনার ক্ষেত্রেও সবচেয়ে খারাপ বছর ২০১৮। এ বছরে এ রকম ঘটনায় মোট হতাহতের সংখ্যা ১৬৩ জন। এর আগে ১৯৮৬ সালে সর্বোচ্চ ৯৭ জন হতাহত হয়েছিল। সত্তরের দশকে প্রতি বছরে এ ধরনের ঘটনায় গড়ে হতাহতের সংখ্যা ছিল ৩৫ এর নিচে। যেখানে এ বছর তা বেড়েছে তার প্রায় পাঁচগুণ।
সমাধানের নিশ্চয়তা নেই
বন্দুক হামলা বা গোলাগুলির ঘটনা কিভাবে মোকাবেলা করা উচিত, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা একত্র হয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। আগ্নেয়াস্ত্রের বিপক্ষে যেমন একদল সোচ্চার। তেমনি নিরাপত্তা রক্ষার্থে আরো বেশি বন্দুক রাখার পক্ষেও প্রচারণা চালাচ্ছে আরেকটি দল। দুই পক্ষই বিভিন্ন ধরনের যুক্তি উপস্থাপন করে নিজেদের জন্য জনসমর্থনের চেষ্টা করছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, কোন পন্থা অবলম্বন করলে গোলাগুলি ও হামলা বন্ধ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি কোনো পক্ষই।


আরো সংবাদ



premium cement