২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দাবি আদায়ে রাজপথে হংকংয়ের লাখো জনতা

-

হংকং গণচীনের দু’টি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের একটি। অপর অঞ্চলটি হলো ম্যাকাও। ২৬০টিরও বেশি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে গঠিত এ অঞ্চলটি পার্ল নদীর বদ্বীপের পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর উত্তরে চীনের কুয়াংতুং প্রদেশ এবং পূর্ব, পশ্চিম আর দক্ষিণে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত। হংকংয়ের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী।
বিশ্বের অন্যতম প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হংকং দীর্ঘ সময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার পর লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষে চীনকে ফিরিয়ে দেয়া হয় ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই। অন্তত ৫০ বছর স্থায়ী হবে এমন একটি ফর্মুলা, যা ‘এক দেশ দুই নীতি’ নামে পরিচিত। এই নীতি অনুযায়ী বেইজিংয়ের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব থাকলেও হংকংকে বহুলাংশেই এককভাবে চলতে দেয়া হবে। এর প্রতিষ্ঠানগুলো অক্ষুণœ থাকবে, তেমনি থাকবে নাগরিক অধিকার। হংকংয়ের আলাদা বিশেষত্ব হলো, এটি হবে চীনের অংশ অথচ চীন থেকে আলাদা।
সেই হংকংয়ের রাজপথ আবারো লাখো মানুষের দখলে। ৯ জুন ‘বন্দী প্রত্যর্পণ বিল’ প্রস্তাব করার পর থেকেই হংকংয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। চীনের প্রস্তাব করা এ বিলটি নিয়ে সংসদে বিতর্ক হওয়ার কথা ছিল। আইনটি পাস হলে চীন, তাইওয়ান ও ম্যাকাওয়ে আদালত আদেশের মাধ্যমে কোনো অভিযুক্তকে সেসব দেশে ফেরত পাঠাতে পারবে হংকং।
বিক্ষোভে ও সংঘর্ষের মধ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে বিলটি পাসের উদ্যোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দেন হংকংয়ের প্রশাসক ক্যারি লাম। কিন্তু সর্বশেষ বিলটি পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। বলা হচ্ছে, ১৯৯৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে শহরের দায়িত্ব চীনের কাছে হস্তান্তরের পর প্রস্তাবিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভটিই ছিল সবচেয়ে বড়।
হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল অবধি অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দিয়েছে দেশটি। প্রসঙ্গত, গত বছরের এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত এ বিলটি তৈরি করা হয়। তাইওয়ানে ছুটি কাটানোর সময় অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে হংকংয়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু তাইওয়ানের সাথে হংকংয়ের বন্দী বিনিময়ের কোনো চুক্তি না থাকায় সেই ব্যক্তিকে এখন তাইপেতে বিচারের জন্য পাঠানো যাচ্ছে না।
প্রস্তাবিত বিলে এ রকম পরিস্থিতিতে সন্দেহভাজন অপরাধীকে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম করা হয়েছে। কিন্তু চীন এই আইনের সুবিধা নিয়ে হংকংয়ের বাসিন্দাদের ওপর খবরদারি বাড়াতে পারে বলে সন্দেহ থাকায় বিষয়টি সেখানে এক রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দা ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
পাশাপাশি তাইওয়ানও জানিয়েছে যে, সন্দেহভাজন সেই খুনের মামলার আসামিকে ফেরত নিতে চায় না তারা। কেননা এটি এমন এক উদাহরণ সৃষ্টি করবে, যা চীন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারে। তবে হংকংয়ের সরকার বলছে, এমন চুক্তি পাস না হলে শহরটি পলাতক অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হতে পারে। কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, এই আইন পাস হলে স্বায়ত্তশাসিত হংকংয়ের ওপর বেইজিংয়ের কর্তৃত্ব আরো বাড়বে।
এরই মধ্যে হংকংয়ে লাখো মানুষের উত্তাল বিক্ষোভের মুখে ক্ষমা চাইলেন হংকংয়ের প্রশাসক ক্যারি লাম। এর আগে বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল স্থগিতের ঘোষণা দেন তিনি। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা এ বিল পুরোপুরি বাতিল করা এবং লামের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে।
লাখ লাখ বিক্ষোভকারী কালো পোশাক পরে রাস্তায় নেমে নেতা ক্যারি লামের পদত্যাগের দাবি করে এবং বিতর্কিত বিল পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানায়। এ পরিস্থিতিতেই এক বিবৃতিতে হংকংয়ের জনগণের কাছে ক্ষমা চান ক্যারি লাম। সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, বিলটি নিয়ে সরকারের কার্যক্রম সমাজে বিতর্ক এবং বিরোধ সৃষ্টি করেছে। এতে জনমনে হতাশা ও ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘লাম হংকংয়ের জনগণের কাছে এর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। সমাজে সমালোচনাকে সৎ সাহস ও বিনয়ী মনোভাব নিয়ে গ্রহণ করে নেয়া এবং আরো ভালোভাবে জনগণের সেবা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।’ বিচারের জন্য বাসিন্দাদের চীনের মূল ভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে হংকং সরকারের প্রত্যর্পণ বিল পাসের পরিকল্পনা নিয়ে হংকংয়ে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখা দিয়েছে। গণ-আন্দোলনের মুখে হংকং সরকার ওই পরিকল্পনা স্থগিতের ঘোষণা দিলেও বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা হংকংয়ের ওপর বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় উদ্বেগ জানিয়েছে।
চীনের মূল ভূখণ্ডে নেই এমন স্বাধীনতা হংকংয়ের জনগণ এখনো উপভোগ করছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, তা হুমকির মুখে। এমন প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রত্যর্পণ বিলটি পাস হলে হংকং পরিণত হবে আরেকটি চীনা নগরে। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল