২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য ওআইসির একপেশে ভূমিকা কাম্য নয়

-

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলছে এখন চরম অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল তাদের অন্য মিত্র দেশগুলোকে সাথে নিয়ে নতুন নতুন ষড়যন্ত্রতত্ত্বের মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে মুছে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। এই লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কথিত শান্তিচুক্তির জিগির তুলেছেন। তার শান্তিচুক্তি নামক ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ইতোমধ্যেই ফাঁস হয়ে গেছে। এই ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ট্রাম্প মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিলে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার হুমকি দিচ্ছেন। এদিকে সম্প্রতি সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর, গোলান মালভূমির ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতির নিন্দা জানানো হয়। সম্মেলনে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুআগলু একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া কোনো শান্তিচুক্তি ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
সৌদি আরবের মক্কায় যখন উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্মেলন এবং ওআইসির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল, ঠিক তখনই মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইলে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠনে অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সেপ্টেম্বরে নতুন করে পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নতুন জোট সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পর দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। জাতীয় নির্বাচনের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দেশটিতে আরেকটি নতুন নির্বাচনের পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছে। গত ৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ইসরাইলের নির্বাচনে পার্লামেন্ট নেসেটের ১২০টি আসনের মধ্যে নেতা নিয়াহুর লিকুদ পার্টি ৩৫ আসনে জয় লাভ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৬১টি আসন। নেতানিয়াহুর সামনে পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসে গিয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সরকার গঠনে তিনি ব্যর্থ হন। এর পরই নতুন আইন প্রণেতারা পার্লামেন্টে ভেঙে দেয়ার পক্ষে ভোট দেন। ইসরাইলের ইতিহাসে এই প্রথম একজন মনোনীত প্রধানমন্ত্রী সরকার গঠনে ব্যর্থ হলেন।
নেতানিয়াহু তার ডানপন্থী ব্লকের কট্টরপন্থী ইহুদিদের সাথে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর পুরনো দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি করতে না পারার কারণে জোট গঠনে ব্যর্থ হন। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও রাজনৈতিক কৌশলে তিনি নির্বাচনে জয়ী হন। নেতানিয়াহু এখন তার বিরোধীপক্ষকে বোঝানোর জন্য আরো সময় পাবেন এবং আগামীতেও তারই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও রমজানের শেষ শুক্রবার তথা জুমাতুল বিদায় ‘আল কুদস দিবস’ পালিত হয়েছে মুসলিম বিশ্বে। ১৯৬৭ সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধে মুসলমানদের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস ইহুদিদের দখলে চলে যায়। বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান। রাসূলে করিম সা: মসজিদে আকসা থেকেই মেরাজে গমন করেছিলেন।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে এসেছিলেন। ১৯৪৮ সালে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা ও ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার পর ওই পবিত্র ভূমিও ইহুদিদের দখলে চলে যায়। এর পর থেকে ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের আবাসভূমি ও আল কুদস উদ্ধারের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় গোটা ফিলিস্তিনই এখন ইহুদিদের দখলে। অবৈধ বসতি স্থাপন করে ইঙ্গ-মার্কিন মদদে ও পৃষ্ঠপোষকতায় তারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে। গাজা ও পশ্চিমতীরে তারা পাখি শিকারের মতো প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিদের গুলি করে হত্যা করছে।
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে ১ জুন সমাপ্ত হওয়া ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানানো হয়। সম্মেলনে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী এবং গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের অংশ হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির নিন্দা জানানো হয়। সম্মেলনে ইরান উপস্থিত ছিল না। সৌদি বাদশাহ ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলে জ্বালানি রফতানিতে হুমকি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন। ৫৭ সদস্যের শীর্ষ সম্মেলন থেকে সম্মেলন শেষে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে ইরানের সাথে চলমান দ্বন্দ্বে সদস্য রাষ্ট্রগুলো সৌদি আরবের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এদিকে যৌথ বিবৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তেহরান অভিযোগ করেছে, সৌদি আরব ওআইসিতে বিভক্তির বীজ বপন করেছে।
২০১৮ সালের ১৫ মে ছিল ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্বের ৭০ বছর। এই দখলদারিত্বের প্রতিবাদ জানাতে গিয়েও অসংখ্য ফিলিস্তিনি শাহাদতবরণ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরাইল ফিলিস্তিনি মুসলমানদের দাবার ঘুঁটির মতো ব্যবহার করছে। তাদের নির্বিচারে হত্যা করছে। নতুন করে কথিত শান্তিচুক্তির নামে ফিলিস্তিনের অস্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে মুছে দেয়ার নীলনকশা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আফসোস! মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য ও বিবাদের সুযোগ নিচ্ছে আমেরিকা ও ইসরাইল। এ ক্ষেত্রে ওআইসির একপেশে ভূমিকা কাম্য নয়। আল কুদসের মুক্তি ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতির কোনো বিকল্প নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement