১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্পের নতুন খেলা

-

মুসলামান ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব অনেক আগে থেকেই জটিল খেলা খেলছে। বর্তমানে এই খেলায় নতুন করে জ্বালানির সঞ্চার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ট্রাম্প যে নতুন খেলা শুরু করেছেন সেটাকে বলা হচ্ছে ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’। এতে দেখা গেছে, ইসরাইলি আধিপত্য বজায় রেখে ‘নতুন ফিলিস্তিন’ নামের একটি রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যে রাষ্ট্রটির ওপর থাকবে ইসরাইলের সব ধরনের প্রভাব। রাষ্ট্রটির থাকবে না কোনো সেনাবাহিনী। চলতি রমজান মাসের পর জুনের শুরুতে চুক্তিটি প্রকাশ করার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। ইসরাইল ঘনিষ্ঠ ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও মার্কিন প্রশাসনের প্রস্তাবিত শর্তগুলো প্রাধান্য পেয়েছে চুক্তিতে।
এই চুক্তির শর্ত দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে এই চুক্তির ভেতরের উদ্দেশ্য কী। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের জন্য চরম অবমাননাকর এই চুক্তির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ত্রিপক্ষীয় এই চুক্তি অনুযায়ী অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, যেটির নাম হবে ‘দ্য নিউ প্যালেস্টাইন’ বা ‘নতুন ফিলিস্তিন’। তবে পশ্চিম তীরে স্থাপিত ইসরাইলের ইহুদি বসতিগুলো এ রাষ্ট্রের বাইরে থাকবে। এ বসতিগুলো ইসরাইলের অংশ থাকবে।
সেই চুক্তি অনুযায়ী আগামী তিন বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেবে ইসরাইল। জেরুসালেমে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নাগরিক হবেন তবে জেরুসালেম পৌরসভা ও ভূখণ্ডের মালিক হবে ইসরাইল। নবগঠিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র জেরুসালেমের শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব পালনের জন্য ইসরাইলকে কর দিতে বাধ্য থাকবে।
এ ছাড়া পবিত্র স্থানগুলোর অবস্থা আগের মতোই থাকবে এবং ইসরাইলি ইহুদিরা ফিলিস্তিনিদের কোনো জমি কিনতে পারবে না, ফিলিস্তিনিরাও পারবে না ইহুদিদের জমি কিনতে। ‘নতুন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্রকে বিমানবন্দর, শিল্প কারখানা ও কৃষিব্যবস্থা স্থাপনের প্রস্তাব দেবে মিসর। তবে সেসব জমিতে (মিসরীয় বিনিয়োগকৃত) কোনো ফিলিস্তিনি বসবাস করতে পারবে না।
ইসরাইলি ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করতে একটি মহাসড়ক নির্মিত হবে। এই তহবিলের প্রধান দাতা হবে চীন। তারা ব্যয়ের অর্ধেক বহন করবে। বাকি অর্ধেক দেবে দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ফাঁস হওয়া নথিতে আরো দাবি করা হয়েছে, ‘নতুন প্যালেস্টাইন’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য আগামী পাঁচ বছর এ চুক্তিকে স্পন্সর করবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উপসাগারীয় আরব দেশগুলো। এই কাজে প্রতি বছর ব্যয় হবে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। যার ৭০ শতাংশ বহন করবে উপসাগরীয় দেশগুলো। বাকি ২০ শতাংশ দেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ১০ শতাংশ দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
‘নতুন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্র কোনো সেনাবাহিনী গঠন করতে পারবে না। তবে তাদের একটি পুলিশ বাহিনী থাকবে। ইসরাইলের সাথে রাষ্ট্রটির একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে, যার অধীনে ইসরাইল এই ‘নতুন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার বিষয়টি দেখভাল করবে।
চুক্তি সম্পাদনের পর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস তাদের সব অস্ত্র মিসরের কাছে হস্তান্তর করবে। বিনিময়ে হামাসের নেতাদের ক্ষতিপূরণ ও বেতন দেবে আরব দেশগুলো। ‘নতুন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্র গঠনের এক বছরের মধ্যে সেখানে নির্বাচন হবে।
গাজা উপত্যকা, মিসর ও ইসরাইলের মধ্যকার সব সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে জনগণ ও মালামাল পরিবহনের জন্য। ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। জর্দানের সাথে দুটি সীমান্ত ক্রসিং থাকবে, যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ‘নতুন ফিলিস্তিনের’ হাতে। তবে জর্দান ভ্যালি থাকবে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণেই।
এ ছাড়া, যদি হামাস কিংবা অন্য কোনো ফিলিস্তিনি পক্ষ চুক্তি মানতে রাজি না হয় তবে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিকে দেয়া অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেবে। অন্য রাষ্ট্রগুলোকেও চাপ দেবে সহায়তা বন্ধের জন্য। তবে যদি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস চুক্তিতে রাজি হয় কিন্তু হামাস কিংবা ফাতাহ মানতে না চায় তবে গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে শুরু হবে হামলা। অন্য দিকে, যদি ইসরাইল এই চুক্তি মানতে না চায় তবে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেবে।
মূলত এই চুক্তি ঘোষণার পর থেকে ক্রমেই আরব অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ছে। জনসাধারণের মাঝে ধীরে ধীরে এই চুক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা হচ্ছে। আরবরা এমন চুক্তি কোনো অবস্থাতেই মেনে নেবে বলে মনে হচ্ছে না। এসব এলাকায় ব্যাপক আকারে এই চুক্তির বিপক্ষে জনসমর্থন গড়ে উঠছে।
সবার কাছে মোটামুটি এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ কোনো শান্তি পরিকল্পনা নয়, এই চুক্তি কোনো সময় শান্তির পক্ষে যাবেও না, যেমনটা বলছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জ্যারেড কুশনার।
এ চুক্তি মূলত আমেরিকার সুবিশাল গোপন পরিকল্পনার অংশ যা বাস্তবায়ন করা গেলে এ অঞ্চলে ইসরাইল সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হতে পারবে ও ফিলিস্তিনের বাকি অংশ দখল করতে পারবে।
এটাকে নতুন সাইকস-পিকট পরিকল্পনার অংশ মনে করা হচ্ছে, যার বাস্তবায়নে রয়েছেন কুশনার। যার উদ্দেশ্য আরব দেশগুলোকে আরো দুর্বল ও বিভক্ত করে দেয়া।
আর এসব কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ আরব নেতাদের বিপক্ষে চলে যাচ্ছেন। ইসরাইলের সাথে আরব নেতাদের সুসম্পর্কও জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলছে। ফিলিস্তিন ইসুতে অবহেলা ছিল জনগণের অভিযোগের অন্যতম কারণ। ট্রাম্পের পরিকল্পনার মোকাবেলায় আরবদের ঐক্যবদ্ধ হওয়াই হচ্ছে সর্বোত্তম কার্যকর হাতিয়ার বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের জনগণ। তারা মনে করছেন, ফিলিস্তিনিসহ আরব জনগণকে নেতৃত্ব দিতে হবে। হ


আরো সংবাদ



premium cement