২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আফগানিস্তানে হেরে যাচ্ছে আমেরিকা

-

নাইন-ইলেভেন হামলার পর ২০০১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে শুরু হওয়া আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালে। তবে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা অব্যাহত রাখলেও দেশটির বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান।
আফগানিস্তানে এক সময় হতাহতের ঘটনা সংবাদের শিরোনামে উঠে এলেও এখন সেগুলো খুব স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ, আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত সামরিক বাহিনী অবস্থান নেয়ায় টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে তালেবান ও অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো। দৃশ্যত এই যুদ্ধের কোনো শেষ নেই। কেননা এটি ক্রমাগত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে।
সহিংসতা কি আরো খারাপ রূপ নিয়েছে?
২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত আফগানিস্তান কখনোই এতটা অনিরাপদ ছিল না। যেমনটা এখন হয়েছে। ১৮ বছর আগে তালেবান শাসনের অবসানের আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানের বেশির ভাগ স্থান তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের যুদ্ধ ইতোমধ্যে মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে এ সঙ্ঘাত শুধু তীব্র থেকে তীব্রতর হয়নিÑ সেইসাথে আরো জটিল হয়ে পড়েছে। এখনকার হামলাগুলো যেমন বড়, তেমনই বিস্তৃত এবং মারাত্মক।
তালেবান এবং মার্কিন ও ন্যাটো সমর্থিত আফগান সরকার দু’পক্ষই এখন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
তালেবানদের কোনো স্থান থেকে সরিয়ে দেয়া হলে তারা যাওয়ার সময় নিজেদের অস্ত্র ও যানবাহন নিয়ে যায়। হেলমান্দ এবং কান্দাহারের মতো প্রদেশগুলোর বেশ বড় অংশ বর্তমানে তালেবান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে অনেক শহর ও গ্রাম।
ট্রাম্পের কৌশল কী কোনো পার্থক্য আনতে পেরেছে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আফগানিস্তানের জন্য যে নতুন কৌশল উন্মোচন করেছেন, তার দুই বছর পেরিয়ে গেছে। সেখানে তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ‘জয়ের জন্য লড়বে’। এই অচলাবস্থার অবসানে এবং তালেবানদের শান্তির পথে ফেরাতে সর্বোপরি তাদের আফগানিস্তান সরকারের সাথে আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে ট্রাম্প প্রশাসন তালেবানের ওপর চারটি উপায়ে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে। সেগুলো হলো- সর্বাধিক সামরিক চাপ, তালেবানদের আর্থিক উৎসগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা, তালেবানের যুদ্ধের বৈধতা নিয়ে জনসমুক্ষে বিশেষ করে ধর্মীয় দলগুলোর কাছে প্রশ্ন তোলা, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে থাকা আফগান তালেবানদের ধরতে ও তাদের বহিষ্কার করতে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
এই প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রয়াসগুলো ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে তালেবান। সেইসাথে দেশজুড়ে প্রাণঘাতী হামলা বা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে, তালেবানদের লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তালেবানের মাদকের আখড়ায় বোমা হামলা সত্ত্বেও, তারা আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েনি। বরং তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা গেছে, তাদের সম্পদ আরো বেড়েছে। সৌদি আরব ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ইসলামি চিন্তাবিদরা বিভিন্ন সভার আয়োজন করেছেন। মূলত যখন আফগানিস্তানে সহিংসতার ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছিল তখন তালেবানকে আহ্বান জানানো হয় যেন তারা আফগানিস্তান সরকারের সাথে শান্তি আলোচনা যোগ দেয়। তবে তালেবানরা অস্বীকৃতি জানায়। তাদের মতে এটি ওয়াশিংটনের যুদ্ধকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণের জন্য ‘আমেরিকান প্রক্রিয়ার’ একটি অংশ। ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি ত্রাণ ও নিরাপত্তা সহায়তা স্থগিত করে দিয়েছে। তবে তালেবানকে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইসলামাবাদ। তারা জানায় আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য তারা সাহায্য করতে প্রস্তুত আছে। তবে পাকিস্তানের আফগান কৌশল নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আভাস দেখা দিয়েছে।
যুদ্ধ কিভাবে চলছে?
আফগানিস্তানের সঙ্ঘাতের তীব্র আকার ধারণ করার পেছনে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দায়ী করা হয়েছে :
একপেশে আচরণ : উভয় পক্ষই নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের অবরোধ প্রত্যাহারের চেষ্টা করছে। প্রত্যেকটি পক্ষই চাইছে তাদের প্রভাব বাড়িয়ে আরো এলাকা দখলে নিতে।
মার্কিন যুদ্ধনীতি : ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযান শুরুর পর তাদের কৌশলের কার্যকারিতা এবং যুদ্ধনীতির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার তালেবান যোদ্ধা নিহত, আহত না হয় আটক হয়েছে। কিন্তু তাদের অভিযানে সেই দুর্বলতার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকার ধারণা করেছিল যে আফগানিস্তানে প্রায় ১৫ হাজার উগ্রবাদী রয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসলামিক স্টেট : আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ইসলামিক স্টেটের খোরসান শাখার উত্থান, গোষ্ঠীটির সহিংসতা ও নৃশংসতার মাত্রা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। নতুন গ্রুপটি কয়েকটি মারাত্মক হামলা চালানোর দাবি করেছে। যেসব হামলার বেশির ভাগ লক্ষ্যবস্তু ছিল শহরের বেসামরিক মানুষ।
শান্তি আলোচনা : শান্তি আলোচনার ধারণাটি গতি পাওয়ার পর তালেবানরা তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে আলোচনার টেবিলে শক্তিশালী অবস্থান থেকে কথা বলতে চায়। তালেবানকে সমর্থনের অভিযোগ : মার্কিন ও আফগান কর্মকর্তারা পাকিস্তান, রাশিয়া ও ইরান, এই তিনটি দেশের বিরুদ্ধে তালেবানকে সমর্থনের অভিযোগ এনেছে। যদিও ওই তিন দেশ তা অস্বীকার করে। ওই তিন দেশের ওপর অভিযোগের বাড়তি চাপের কারণে আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আফগানিস্তানের সৈন্যরা কি সামাল দিতে পারবে?
তালেবান সহিংসতা উচ্চমাত্রায় চলে যাওয়ায় আফগান নিরাপত্তা বাহিনী এখন চাপের মধ্যে আছে, অনেক ক্ষেত্রে, ভীত-সন্ত্রস্তও। তালেবানদের বিস্তার রোধে আফগান বাহিনী কঠোর সংগ্রাম করছে। কিন্তু এ কারণে তাদের হতাহতের হার বিপজ্জনক হারে বেড়েই যাচ্ছে। সামনে তা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আফগান বাহিনীতে দৃঢ় এবং অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্বের অভাব, সময়মতো রসদ সরবরাহ এবং দুর্নীতি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এ ছাড়া, কাবুলের রাজনৈতিক ও সরকারি নেতাদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব, সরকার পরিচালনা সেই সাথে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর দুই বিরোধী দল মিলে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠন করলেও তারা প্রকৃতপক্ষে একতাবদ্ধ নয়। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও, কাবুল সরকার বিভিন্ন বিষয়ে অভ্যন্তরীণভাবে দ্বিধাবিভক্ত রয়ে গেছে।
শান্তি আলোচনার ব্যাপারে কী হবে?
সব পক্ষ এখন মনে করে যে, আফগানিস্তান যুদ্ধ কেবল সামরিক উপায়ে সমাধান করা যাবে না। এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করার জন্য ধীরে ধীরে সব দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। দলগুলো বলছে যে তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চায়। গত বছর জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দিনব্যাপী যুদ্ধবিরতির পর সুযোগের একটি জানালা খুলে যায়। এরপর জুলাই মাসে কাতারে মার্কিন কর্মকর্তা এবং তালেবান প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। গত সাত বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো দুই পক্ষ আলোচনার টেবিলে মুখোমুখি হয়েছিল। গত মার্চে আবার কাতারে বৈঠক হয়েছে। ১৬ দিনের এই বৈঠকেও তালেবান-যুক্তরাষ্ট্র কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।
তবে এটি স্বীকার করতেই হয় যে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর কঠোর অভিযান সত্ত্বেও, কোনো পক্ষই যুদ্ধ জয়ী হতে পারেনি। কিন্তু শান্তি আলোচনার জন্য দল এবং কাঠামোর বিন্যাস নিয়ে এখনো ব্যাপক মতানৈক্য আছে। অর্থপূর্ণ অগ্রগতির জন্য এবং বিশ্বাসের ভিত্তি নির্মাণের জন্য সবপক্ষেরই আপস করার মতো নমনীয় মনোভাব রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া, অন্য চ্যালেঞ্জটি হলোÑ আঞ্চলিক পক্ষগুলোর মধ্যে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা। আফগানিস্তান এবং বৃহত্তর অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব হবে, যখন বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সমাধান খোঁজা হবে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি থাকবে পাকিস্তান, রাশিয়া, ইরান, চীন, ভারত এবং সৌদি আরব। তবে শেষ পর্যন্ত এই সংলাপ আফগানিস্তানের দুই পক্ষের মধ্যেই হবে এবং সেটাই নির্ধারণ করবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। বিবিসি ও ইকোনমিস্ট অবলম্বনে হ


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল