২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আবারো উত্তপ্ত ভেনিজুয়েলা

-

ভেনিজুয়েলার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ও বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুয়াইদোর মধ্যকার বিরোধ আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা অর্থনৈতিক সঙ্কটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে এখন সমস্যার যেন কোনো শেষ নেই। চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হচ্ছে মানুষ। এ জন্য অনেকেই পালিয়ে যাচ্ছে আশপাশের দেশে। ১২ লক্ষাধিক মানুষ ভেনিজুয়েলা থেকে পাশের দেশ কলম্বিয়ায় পালিয়ে গেছে। সেখানে তারা চরম কষ্টে জীবন যাপন করেছে।
আর এসব নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়েই চলছে ভেনিজুয়েলার বর্তমান অবস্থা। এতসব সমস্যার মধ্যেই গেল কয়েক দিন আগে ভেনিজুয়েলায় এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের খবর চাউর হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পক্ষেই অবস্থান নিলেও কিছু সেনাসদস্য বিরোধীদলীয় নেতা গুয়াইদোর পক্ষে অভ্যুত্থান করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে।
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে গুয়াইদোর এই সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কয়েক মাস আগেই মাদুরোকে অবৈধ উল্লেখ করে নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদো। তারপর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে।
এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেব প্রেসিডেন্ট মাদুরো গেল দেশটির সান কার্লোসে একটি সামরিক মহড়ার আয়োজন করেন। মহড়ায় সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও পাঁচ হাজারের বেশি সৈন্য অংশ নেয়। এই মহড়াটি ছিল মূলত বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদোর বিরুদ্ধে একটি শক্তি প্রদর্শন। এ ছাড়া, ভেনিজুয়েলার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাজধানী কারাকাসের রাজপথে নেমেছেন মাদুরো। বিরোধীদলীয় নেতা গুইদোর ডাকা অভ্যুত্থানের চেষ্টা নস্যাতের পর সেনাসদস্যদের সাথে নিয়ে হাজির হন মাদুরো।
এক ভিডিও বার্তায় আকস্মিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন গুইদো। ভিডিওতে তার সাথে বেশ কয়েকজন সামরিক সদস্যকেও দেখা যায়। এই অভ্যুত্থানে সমর্থন ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। পরে ওই অভ্যুত্থান চেষ্টা নস্যাতের দাবি করেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। এরপরই রাজধানী কারাকাসে সামরিক সেনাদের সাথে উপস্থিত হন মাদুরো। টুইটারে প্রকাশিত লাইভে দেখা যায় মাদুরো সেনাদের উদ্দেশে এক বক্তব্যে বলিভারিয়ান ন্যাশনাল আর্মড ফোর্সকে (এফএএনবি) ভেনিজুয়েলার সংবিধান, শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পুরো পৃথিবীর সামনে এফএএনবিকে এখন একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যে, যারা মার্কিন ডলারের কাছে নিজেদের বিক্রি করে দেয় ওইসব নেতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে লড়তে ভেনিজুয়েলায় সাংবিধানিক, নৈতিক, সংযোজক এবং সংযুক্ত সেনাবাহিনী রয়েছে।
অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পর গুয়াইদো ভেনিজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানোর কথা বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তার নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ ব্যর্থ হওয়ার পরই এমন কথা জানালেন তিনি। গুয়াইদো জানিয়েছেন, তিনি মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সব অপশনই বিবেচনা করবেন। এর মধ্যে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপও রয়েছে।
নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ আর অর্থনৈতিক সঙ্কটের বিরুদ্ধে এ বছরের শুরুতে ভেনিজুয়েলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের সুযোগে ২৩ জানুয়ারি নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন বিরোধীদলীয় নেতা জুয়ান গুইদো। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে অবৈধ দাবি করে নিজেকে বৈধ অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন তিনি।
তা ছাড়া, প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে হটাতে ভেনিজুয়েলার ‘ইতিহাসে সবচেয়ে বড়’ সরকারবিরোধী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদো। তাকে সমর্থন দেয়ার জন্য সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানালেও সশস্ত্র বাহিনীর নেতারা এখন পর্যন্ত মাদুরোর প্রতিই অনুগতই আছেন।
কিন্তু এই পর্যায়ে এসে গুইদো এরে চেয়ে বেশি আর কী করতে পারবেন তা পরিষ্কার নয়। ভেনিজুয়েলার বিরোধী দল প্রায়ই মাদুরোবিরোধী বিশাল প্রতিবাদের আয়োজন করে, কিন্তু গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কট ও মুদ্রাস্ফীতি থাকার পরও তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে না। এ দিকে, গুইদো নিজেকে ‘অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণার পর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় অনেকেই হতাশ।হ

 


আরো সংবাদ



premium cement