১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতের ক্ষমতায় কে আসছে বিজেপি না কংগ্রেস

-

ভারতের সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এবার সাত ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী এপ্রিল ও মে মাসে মোট সাত ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে’র মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনের মাধ্যমেই গঠিত হবে নতুন লোকসভা। আর নির্বাচনের ভোট গণনা হবে ২৩ মে। সেদিনই জানা যাবে কার হাতে আসবে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসনক্ষমতা। জিততে হলে লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৭২ আসন পেতে হবে।
ভারতে ২৯টি প্রদেশ রয়েছে। ২০১৪ সালের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিজেপি ২৮২ আসনে জয় নিয়ে সরকার গঠন করে। আর কংগ্রেস মাত্র ৪৪ আসন পায়, যা কংগ্রেসের নির্বাচনী ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ফল। আবার গত নির্বাচনে লজ্জাজনক ফলের মধ্যে ভালো দিক হলোÑ দলটি অন্তত ২৬৮ আসনে প্রথম বা দ্বিতীয় ছিল। যার ফলে এটা প্রমাণিত যে, ভারতের প্রায় ৫০ শতাংশ নির্বাচনী আসনে কংগ্রেস এখনো প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তা ছাড়া সর্বভারতীয় দল বলতে কংগ্রেস ও বিজেপি ছাড়া আর কেউ নেই।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে মাঠে আছে কংগ্রেস ও বেশ কিছু আঞ্চলিক দল। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাষার ব্যবহারও লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গেছে।
১৩৩ বছরের পুরনো কংগ্রেস কি ফিরে আসতে পারবে ক্ষমতায়? এটিই এখন বড় প্রশ্ন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে শোচনীয় হার মানতে হয়েছিল তাদের। পরের চার বছর অনেক রাজ্য নির্বাচনেও হেরেছে তারা। তবে গত ডিসেম্বর থেকে দলটি শক্তি পুনরুদ্ধারের দিকে যেতে পারছে বলে মনে হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে জয় পেয়েছে। ২৯ প্রদেশের ভারতে অন্তত ১০-১২টি রাজ্যে বিজেপির সাথে নিশ্চিতভাবেই ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। ভোটের আগে নির্বাচনী মাঠে নিজের কতটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
আর এ জন্য দলটির সভাপতি রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে সদ্য দায়িত্ব নেয়া প্রিয়াঙ্কা গোটা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রতিদিনই দলটির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ছেন। তারা মোদি সরকারে বিভিন্ন ব্যর্থ দিক তুলে ধরছেন। অসাম্প্রদায়িক ভারতের পথ দেখাচ্ছেন। মোদি সরকারের দুর্নীতি ভোটারদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। দুর্নীতি, কৃষি খাতের সঙ্কট ও বেকারত্ব সামনে নিয়ে আসছেন।
অন্য দিকে, নির্বাচনের শুরুতে ভারতের শাসকগোষ্ঠী বিজেপি উন্নয়নের কথা বলে বেড়ালেও এখন তারা সে রাস্তা ছেড়ে আঁকড়ে ধরছে হিন্দুত্ববাদ, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ ও নিরাপত্তার প্রশ্নকে। নির্বাচনী প্রচারে তাই বড় হয়ে উঠছে পুলওয়ামা পরবর্তী বালাকোটের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে উপগ্রহ ধ্বংস করার কৃতিত্ব, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা এবং সর্বোপরি হিন্দুত্ববাদ।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলে আসছেন, কংগ্রেসই এ দেশের শান্তিপ্রিয় হিন্দুদের সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছে। হিন্দুদের তারা অপমান করেছে। হিন্দু জনতা তাই ঠিক করেছে, এই ভোটে কংগ্রেসকে উপযুক্ত শাস্তি দেবে।
তিনি যোগ করেন, ‘হিন্দু টেরর’ বা ‘হিন্দু সন্ত্রাসের’ কথা কংগ্রেসই প্রথম আমদানি করে। অথচ এত দিনে হিন্দু সন্ত্রাসের একটি নমুনাও তারা প্রমাণ করতে পারেনি। এ কারণে হিন্দু জনতা কংগ্রেসের ওপর খ্যাপা। কংগ্রেসকে তারা ক্ষমা করবে না। সেটা তারা ভোটের মাধ্যমেই জবাব দেবে।
মোদি বিভিন্ন জনসভায় বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সামাজিক উন্নয়ন, জনহিতকর প্রকল্প, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেসব উল্লেখযোগ্য অর্জনের কথা বলতে পারতেন সেসব থেকে সরে পাকিস্তান, সন্ত্রাস, নিরাপত্তা ও সেনাসাফল্যকেই তিনি প্রতিটি নির্বাচনী সভায় বড় করে তুলে ধরছেন। জনসভায় সরাসরি জানতে চাইছেন, যে দল দেশের সেনাসাফল্যকে সন্দেহ করে, প্রশ্ন তোলে, জনগণ তাদের ভোট দেবে কি না। কংগ্রেসসহ বিরোধীদের সরাসরি আক্রমণ করে মোদি বলেছেন, এসব দল পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলে।
কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে প্রায় সময়ই চরম ভীতিকর অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়। হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মোদি সরকার গোটা ভারতবাসীকেই বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। উসকানিমূলকভাবে মুসলমানদের নামে মিথ্যাচার ছাড়ানো হচ্ছে, গো হত্যা বিরোধিতার নামে অবলীলায় মানুষ হত্যা চলছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী ও নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) নামে জোরপূর্বক মুসলিমদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে চাচ্ছে। জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণসহ লাভ জিহাদ নামে বিভিন্ন উসকানিমূলক প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে জাতিগত ও ধর্মীয় বিদ্বেষ তৈরি করা হচ্ছে সরকারি মদদে।
আর এসব কারণেই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আসল বিরোধিতা তৈরি করেছে ভারতের আমজনতা। কৃষক ও শ্রমিকদের আন্দোলন থেকেই মোদি সরকারের পতনের দাবি জোরালো হয়েছে। চাকরি ও নিরাপত্তাহীনতায় মুখ খুলেছে তরুণ, যুব ও নারীসমাজ। সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে মোদি সরকারের পতন হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন দেশটির সাধারণ নাগরিকরা। বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভিত্তি ক্রমেই দুর্বল হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের উদীয়মান ও তরুণ নেতৃত্বের প্রতি জনগণ ক্রমেই আস্থাশীল হয়ে উঠছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাস্তবতা দেখার জন্য এখন শুধু ক্ষণ গণনার পালা। হ

 

 


আরো সংবাদ



premium cement