১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা এরপর কী হবে?

-

পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা যে পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল, তাতে করে পরমাণু যুদ্ধও বেধে গেলে খুব বেশি বিস্ময়কর ঘটনা হতো না। কিন্তু ইমরান খানসহ পাকিস্তানি নেতাদের রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপের কারণে সাময়িক উত্তেজনার প্রশমন ঘটেছে। অবশ্য সীমান্তে গুলিবিনিময়ের খবর প্রায়ই আসছে। সেই সাথে যে কাশ্মিরকে কেন্দ্র করে এত কিছু ঘটে গেল, তার কোনো সুরাহা হয়নি। বরং পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনার কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত থেকেছে, তাদের খবর প্রকাশ আরো কম হচ্ছে।
অবশ্য পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ শুরু হোক, তা প্রায় কেউই চায় না। কারণ এই যুদ্ধ কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না। কিন্তু ক্ষতি হবে সবারই। এমনকি যেসব দেশ এই যুদ্ধের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়, তারাও ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে পরমাণু যুদ্ধের প্রভাবে পুরো উপমহাদেশের মানচিত্র বদলে তো যেতে পারে, সেই সাথে তার রেশ অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তা ছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের দুই ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই যুদ্ধে হাত গুটিয়ে থাকতে পারবে না। ফলে তাদেরও জড়িয়ে পড়তে হতো। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য ছিল। উত্তেজনা প্রশমন করতে তাই যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া বেশ জোরদার ভূমিকা পালন করেছে।
অবশ্য, এই প্রথম নয়, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে এসব দেশ আরো আগে থেকেই ভূমিকা পালন করছিল। অনেক সময় তারা কোনো পক্ষকে সমর্থন করেছে, আবার মধ্যস্থতার কাজও করেছে। বিশেষ করে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ, ১৯৭১ সালের যুদ্ধ, কার্গিল যুদ্ধ ইত্যাদিতে এসব পরাশক্তির কোনো না কোনো ভূমিকা ছিলই।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনা শুরু করাতে মার্কিনিদের নাটকীয় কিছু করতে হয়েছিল। আর তা হয়েছিল আটক ভারতীয় পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে মুক্তি দিতে পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজি করানোর কারণে।
এ ব্যাপারে একটি ইঙ্গিত রয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি হ্যানয়ে আলোচনাকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবৃতিতে। তিনি সেদিন বলেছিলেন, আমি পাকিস্তান ও ভারতের কাছ থেকে উৎসাহব্যঞ্জক খবর পাচ্ছি।
এর পরপরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পার্লামেন্টে ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেয়ার কথা জানান। এর ফলে ভারতের সবচেয়ে বড় দাবি পূরণ হয়ে যায়, ভারতে যুদ্ধ-উন্মাদনা প্রশমিত হয়।
এবার চীনও কাজ করেছ। তবে তারা কাজটি করেছে নীরবে। চীনের কাছে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ কোনোভাবেই কাম্য নয়। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) নির্মাণ ও ভারতের স্বার্থের কারণে চীন এই ভূমিকা পালন করেছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু ক্যাং মিডিয়াকে বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা দূর করতে সমন্বয় সাধন ও সংলাপে বসার জন্য উভয় দেশের সাথে আন্তরিকভাবে যোগাযোগ করেছে চীন। উত্তেজনা প্রশমন ও আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীন অব্যাহতভাবে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে যাবে।
পুলওয়ামা ও বিমান হামলার পর প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন টেলিফোন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ শাহ কোরেশির সাথে কথা বলেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তাস জানায়, উত্তেজনা হ্রাস করতে মস্কো তার ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত রয়েছে।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, পরাশক্তিগুলো তাদের নিজেদের মতো করে সাময়িক হলেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে। তারা কি তাদের ভূমিকা অব্যাহত রেখে দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনার মূল কারণ কাশ্মির সমস্যার সমাধান করতে পারে না? কাশ্মির সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান যতক্ষণ না হবে, ততক্ষণ উত্তেজনা সাময়িক হ্রাস পেলেও তা ধিকধিকি করে জ্বলতেই থাকবে। মাঝে মধ্যেই তা প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এই উত্তেজনা বিস্ফোরিত হবেই।
অবশ্য অনেকে মনে করেন, পরাশক্তিগুলো নিজস্ব কারণেই এ সমস্যার সমাধান করবে না। কারণ এ সমস্যা যতদিন থাকবে, তত দিন উত্তেজনা থাকবে, আর তাতে করে পাকিস্তান-ভারত তাদের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ স্থগিত রেখে হলেও অস্ত্র কিনতে থাকবে। এতে করে পরাশক্তিগুলার অস্ত্র ব্যবসায় চলতে থাকবে। আর অস্ত্র ব্যবসাই সবচেয়ে লাভজনক। ফলে যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টির রাস্তা তারা কোনোভাবেই বন্ধ করবে না।
তাহলে কি এই উত্তেজনা চলতেই থাকবে? হয়তো চলতেই থাকবে। তবে পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থা কিছুটা সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে চীনের কানেক্টিভিটিকেন্দ্রিক মহাপরিকল্পনা বৈশ্বিক মানচিত্রকেই ব্যাপকভাবে বদলে দিতে পারে।
আবার এ অঞ্চলে সৌদি বিপুল বিনিয়োগও বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশের সাথেই দেশটি সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে সম্ভাবনাময় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সৌদি আরবেরও আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এবারের সঙ্কট নিরসনেও সৌদি আরবের ভূমিকা ছিল।
এই দুই দেশ যদি জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করে, তবে উপমহাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে যেতে পারে। তবে তারা কিছু করবে কি না বা করতে পারবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ফলে উত্তেজনা চলতেই থাকবে এটাই যেন অনিবার্য বিষয়। বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদিদের মতো যুদ্ধংদেহী নেতাদের অস্তিত্ব যত দিন থাকবে, ততদিন শান্তির সুযোগ কমই থাকবে। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল! অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে সালাম-মজনু গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু মসজিদের ভেতর থেকে খাদেমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

সকল