২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নতুন সমীকরণে সৌদি আরব-পাকিস্তান-চীন

-

কয়েক দিন আগেও যেটি ছিল চিন্তারও বাইরে, সেটিই এখন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। আর তা হলো সৌদি আরব, চীন, পাকিস্তান জোট। সৌদি আরব অনেক দিন ধরেই মার্কিন শিবিরে রয়েছে। পাকিস্তান আর চীনÑ উভয় শিবিরেই ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তব কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনাদের দিকেই বেশি ঝুঁকেছে। ভূ-কৌশলগত টালমাটাল এ সময়ে সৌদি আরব-পাকিস্তান-চীন জোট নতুন কিছুর ইঙ্গিতই দিতে পারে।
সম্প্রতি সৌদি আরব নিশ্চিত করেছে যে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরে একটি তেল শোধনাগার নির্মাণে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। রিয়াদের এই সিদ্ধান্ত একটি বড় ধরনের কৌশলগত ঘটনা। এটি কেবল সিপিইসিকেই জোরদার করবে না, সেইসাথে সৌদি আরব, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে নতুন কৌশলগত জোট গঠনের প্রয়াসও। উল্লেখ্য, সিপিইসির লক্ষ্য হলো ব্যাপকভিত্তিক সড়ক, রেলওয়ে ও বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট হলো এই সিপিইসি। এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা মানে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরেকটু সরে যাওয়া। মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু চীনাদের এ উদ্যোগের প্রবল বিরোধিতা করছে।
চীনের তহবিলপুষ্ট সিপিইসি (এতে বেইজিং ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে) হলো বৃহত্তর ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড (ওবিওআর) প্রকল্পের অংশবিশেষ। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে এই বলে সমালোচনা হচ্ছে যে, এটি গ্রাহক দেশগুলোকে ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলছে। বস্তুত মালয়েশিয়া গত বছর ওবিওআরের দুটি বড় প্রকল্প বাতিল করেছে, এই ভয়ে যেÑ এগুলো দেশটিকে দেউলিয়া করে ফেলবে। গ্রাহক দেশগুলোকে দেনার দায়ে বেঁধে ফেলা নিয়ে ভয় ক্রমাগত বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে গোয়াদরে তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠার সৌদি সিদ্ধান্ত সিপিইসি ও ওবিওআরকে শক্তিশালী করবে। এটি চীনা প্রকল্পগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়াবে, এগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে তুলে ধরবে।
চীন ওবিওআর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে এসব প্রকল্প যাতে পারস্পরিকভাবে কল্যাণকর হয়, সেটিও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে বোঝানো প্রয়োজন। আবর-যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে চীনের সাথে কৌশলগত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ায় বেইজিংকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এ ছাড়া হাম্বানতোতার ঘটনাটি চীনের জন্য ইতিবাচক হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের পাকিস্তান সফরকালে গোয়াদরে আনুষ্ঠানিক সৌদি বিনিয়োগ নিশ্চিত হলে তা চীনা পরিকল্পনার জন্য আশীর্বাদপুষ্ট হবে।
তবে সিপিইসির ব্যাপারে রিয়াদের এত আগ্রহী হওয়ার নেপথ্যে কী রয়েছে। আমি মনে করি, এর পেছনে রয়েছে গত বছরের সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপড়েন। দুই পক্ষই তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেও আমেরিকার বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ রিয়াদকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। প্রথমত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর প্রকাশ্যে বলেছেন যে, মার্কিন সমর্থন ছাড়া সৌদি বাদশাহ দুই সপ্তাহও টিকতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্র যখন তেলের দাম কমানো এবং এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির জন্য আরো অর্থ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছিল, তখনই ট্রাম্প এ মন্তব্য করেন। প্রকাশ্যে এ ধরনের অপমানজনক মন্তব্যকে রিয়াদ ভালোভাবে নেয়নি।
তারপর ডিসেম্বরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার জন্য প্রিন্স মোহাম্মদকে দায়ী করে মার্কিন সিনেট একটি প্রস্তাব পাস করে। একই সময় সিনেটে পাস করা আরেক প্রস্তাবে ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। এসব ঘটনায় বিরক্ত হয়ে সৌদি আরব তার কৌশলগত সম্পৃক্ততা নানামুখী করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে। আর বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানে চীনা প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করার চেয়ে ভালো আর কোনো উপায় থাকতে পারে? সন্ত্রাসবাদ ও আফগানিস্তান প্রশ্নে কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক অবনতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে রিয়াদ, ইসলামাবাদ ও বেইজিংকে ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ করার নেপথ্য শক্তি সহজেই অনুমান করা যায়।
এটি পুরনো যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান-সৌদি আরব ত্রিভুজের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। সার্বিকভাবে চীন এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে। তবে এর মাধ্যমেই প্রক্রিয়াটির সমাপ্তি ঘটবে না এবং তা কখনো শেষ হবে কি না কেউ জানে না। তবে ট্রাম্পের পরিবর্তনশীল পদক্ষেপ এবং দাম্ভিক মনোভাব চীনের জন্য কাজটি সহজ করে দিয়েছে। চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্রকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হলো। এর মাধ্যমে ভূ-কৌশলগত পরিবর্তনশীল বিশ্বে নতুন মাত্রার সৃষ্টি হলো।


আরো সংবাদ



premium cement
বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায় বরিশালে সালাতুল ইসতিসকার আদায় অর্ধ শতাব্দীতে ভ্যাকসিন সাড়ে ১৫ কোটি লোকের জীবন বাঁচিয়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল্লাহর রহমত কামনায় সকলকে সিজদাহ অবনত হতে হবে-মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন কাউখালীতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা ভাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল