২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শাটডাউন : যুক্তরাষ্ট্রে অচলাবস্থা

-

আইনপ্রণেতারা বাজেট পাসে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একাংশে ‘শাটডাউন’ (আর্থিক বরাদ্দ বন্ধ) শুরু হয়েছে। বাজেটে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবিকৃত ৫০০ কোটি ডলার বরাদ্দের ব্যাপারে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় সরকারের একাংশে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, সরকারের স্বরাষ্ট্র, বিচার ও কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারি দফতরের এক-চতুর্থাংশের বাজেট বরাদ্দ ফুরিয়ে যায় শুক্রবারই। তবে সমঝোতার অভাবে নতুন বাজেট পাস করতে না পারায় শনিবার থেকে ‘অচলাবস্থা’র মধ্যে পড়েছে সরকার। বছরের তৃতীয় এই অচলাবস্থার মেয়াদ কত দিন হতে পারে, তা নিশ্চিত নয়।
গত ২২ ডিসেম্বর মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের সব বিভাগ সচল রাখতে প্রয়োজনীয় ১৩০ কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দের একটি বিল অনুমোদন করেছিল। সে সময় হোয়াইট হাউজের পে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল বিলটি অনুমোদন করা হবে। তবে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ট্রাম্প বিলটিতে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। আর এতেই সৃষ্টি হয় জটিলতা।
সর্বশেষ খবর, ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সাথে সমঝোতায় পৌঁছতে চাইছেন। ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার ও নেন্সি পোলিসের সাথে আলোচনার সম্ভাবনার কথা। যদিও তিনি সরাসরি তাদের আলোচনার জন্য কোনো আহ্বান বা আমন্ত্রণ জানাননি।
খবরে বলা হয়েছে, উগ্র ডানপন্থীদের দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতি নিজের অঙ্গীকার প্রমাণ করতেই ট্রাম্প ওই অর্থ বরাদ্দের প্রশ্নে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এ সংক্রান্ত আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেছিলেন, দেয়াল নির্মাণ প্রশ্নে বরাদ্দ না পেয়ে যদি অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে হয়, তাহলে তিনি ‘গর্ববোধ’ করবেন। তবে শুক্রবার তিনি সব দায় চাপান ডেমোক্র্যাটদের ওপর।
শুক্রবার এক টুইটার পোস্টে ট্রাম্প বলেন, বাজেট পাস করতে ‘সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দরকার। তবে তারা সম্ভবত সীমান্ত নিরাপত্তা ও দেয়াল নির্মাণ প্রশ্নে বরাদ্দের বিরোধিতা করবেন, যদিও এর অপরিহার্যতা তারা বোঝেন। তিনি হুমকি দেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা নেতিবাচক অবস্থান নিলে সরকারে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে এবং তা হবে দীর্ঘমেয়াদি। জনগণ উন্মূক্ত সীমান্ত আর অপরাধ চায় না’। পরে ওভাল অফিসে তিনি বলেন, সরকারে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা না করার ব্যাপারটা এখন ডেমোক্র্যাটদের হাতে। আমি আশা করব অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে না তবে দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার মুখোমুখি হতে আমরা প্রস্তুত।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের তিন-চতুর্থাংশ কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ বরাদ্দ করা আছে। বাকি এক-চতুর্থাংশের বাজেট ফুরিয়ে যাওয়ায় অচলাবস্থা ঠেকাতে শুক্রবার নতুন বাজেট বরাদ্দ ছিল অপরিহার্য। দেয়াল নির্মাণের বরাদ্দ প্রশ্নে সমঝোতায় পৌঁছাতে এদিন দুই পক্ষের আইনপ্রণেতারা আলোচনায় বসেন। সমঝোতার অভাবে সন্ধ্যা ৭টায় প্রতিনিধি পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়। সৃষ্টি হয় ‘অচলাবস্থা’। হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তা ও উভয় পার্টির কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকলেও শনিবার দিনের প্রথম ভাগেই বন্ধ হয়ে যায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কার্যক্রম।
মেক্সিকো সীমান্তে প্রেসিডেন্টের সাধের প্রাচীর প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে তুমুল দ্বন্দ্বে মার্কিন কংগ্রেসে পাস হলো না ফেডারেল স্পেন্ডিং বিল। আর তার জেরেই শনিবার দুপুর ১২টা এক মিনিট থেকে তালা পড়ে গেল আমেরিকার রাজকোষে। হাতেগোনা কয়েকটি দফতর ছাড়া বন্ধ হতে বসেছে নাসা, বাণিজ্য, নিরাপত্তা, বিচারবিভাগসহ একাধিক দফতরের কাজকর্ম। সব মিলিয়ে বেতন বন্ধের মুখে পড়েছেন আমেরিকার প্রায় আট লাখ সরকারি কর্মী। অপ্রত্যাশিত এই আর্থিক সঙ্কট মুহূর্তেই ম্লান করে দিয়েছে বড়দিনের ছুটির আনন্দ-আমেজকে। ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মীরা কী করবেন, তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না। তার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চাপে ফেলে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস। যদিও ট্রাম্পের আশ্বাস, এই আর্থিক অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে না; কিন্তু সঙ্কট মোকাবেলায় তিনি কী পদক্ষেপ নেবেন, তার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি ট্রাম্প। সরকারের এই অনিশ্চয়তার মধেই তিনি বড় দিনের ছুটি কাটিয়েছেন ফ্লোরিডায়।
আচমকা আর্থিক সঙ্কটে পড়া আমেরিকার ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। চলতি বছরে এ নিয়ে তিনবার আর্থিক অচলাবস্থার মধ্যে পড়ল বিশ্বের শক্তিশালী দেশ। তবে এবারের সঙ্কটে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে মার্কিন শেয়ারবাজার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ পার করেছে ওয়াল স্ট্রিট। গত শুক্রবার ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি ছিল বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
আমেরিকায় সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য ও হিউম্যান সার্ভিসেসের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। ফলে বর্তমান আর্থিক অচলাবস্থায় এ তিন দফতরের খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাকি প্রায় ২৫টি দফতরের অর্থ বরাদ্দের মেয়াদ শেষ হয়েছে শনিবার। আর শুক্রবারই মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের প্রকল্পকে ঘিরে মার্কিন কংগ্রেসে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। তাতেই ফেডারেল ‘স্পেন্ডিং বিল’ পাস না করিয়ে মুলতবি হয়ে যায় মার্কিন কংগ্রেস। আমেরিকায় ভোটযুদ্ধে নেমে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার সেই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন তিনি। এর জন্য প্রায় ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অর্থ বরাদ্দের সেই প্রস্তাব সিনেটে পাসও করিয়ে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ওই প্রস্তাব মার্কিন কংগ্রেসে এলে বাধা হয়ে দাঁড়ান ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। তা নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। আর তার জেরেই আটকে যায় প্রায় ২৫টি দফতরে অর্থ বরাদ্দের ‘স্পেন্ডিং বিল’। উপায় না দেখে ট্রাম্প অবশ্য ডেমোক্র্যাটদের সাথে আলোচনার আভাস দিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো সমাধান বা পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
ইতোমধ্যেই নাসা, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক দফতর, বিচারবিভাগ, কৃষি এবং বিভিন্ন জাতীয় উদ্যানসহ একাধিক দফতরে কাজকর্ম লাটে উঠেছে। নাসার বহু কর্মী কাজে না যেতে পারেন বলে খবর। জাতীয় উদ্যানগুলো খোলা থাকলেও কর্মীরা কী করবেন বুঝতে পারছেন না। গত শনিবার থেকে বহু উদ্যানের কর্মী কাজে যোগ দেননি। মার্কিন বাণিজ্য দফতরের কাজকর্মও শিকেয় উঠেছে। অগত্যা, বড়দিনের ছুটির মওসুমে কাজকর্ম সচল রাখতে কর্মীদের বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে সরকার চাপ দিতে পারে বলে জানা গেছে। 

 


আরো সংবাদ



premium cement