২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নতুন প্রভাব বলয়ের খোঁজে সৌদি আরব

-


সাম্প্রতিক অতীতের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব। বিভিন্ন ইস্যুতে আঞ্চলিক প্রতিবেশী কিংবা পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছে রিয়াদের। যার ফলে নতুন মিত্রের সন্ধানে নেমেছে দেশটি। আর এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তারা মিত্রতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলোর দিকে।
ইয়েমেন যুদ্ধ, কাতার অবরোধ এবং সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কিছু বিষয়ে সব দিক থেকে চাপে আছে সৌদি শাসকেরা। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সৌদি আরবের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক নেই অনেক দেশের। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে ক্রমেই বাড়ছে দূরত্ব। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন রিয়াদবান্ধব হিসেবে পরিচিত হলেও পার্লামেন্ট সদস্যদের পক্ষ থেকে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাপ বাড়ছে প্রেসিডেন্টের ওপর। ইউরোপের বড় দেশগুলোও ক্ষুব্ধ সৌদি আরবের বর্তমান প্রশাসনের ওপর। প্রতিবেশী অনেক দেশের সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। ইরানের সাথে বৈরিতা অনেক দিনের। গত বছর কাতারে সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ছোট্ট দেশটির ওপর অবরোধ আরোপ করেছে রিয়াদ। অবরোধের সময় কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক, যার কারণে দূরত্ব বেড়েছে তুরস্কের সাথেও। আর সর্বশেষ সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা নিয়ে তো রিয়াদ-আঙ্কারা সম্পর্ক স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ সময় অতিক্রম করেছে।
কাজেই এমন পরিস্থিতিতে নতুন মিত্রের সন্ধানে নেমেছে সৌদি প্রশাসন। আর এ জন্য তারা বেছে নিয়েছে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ লোহিত সাগর উপকূল ও ‘হর্ন অব আফ্রিকা’র অঞ্চলের দেশগুলোকে। বৈশ্বিক সমুদ্র পরিবহনের ক্ষেত্রে লোহিত সাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সমুদ্রসীমা। এ ছাড়া, এডেন উপসাগর, আরব সাগরও ‘হর্ন অব আফ্রিকার’ দেশগুলোর খুব কাছে। কাজেই বাণিজ্যিক ও ভূরাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল এটি।
গত ১২ ডিসেম্বর বুধবার রিয়াদে ওই অঞ্চলের কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছে সৌদি আরব। রিয়াদে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিল মিসর, জিবুতি, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন ও জর্দান সরকারের প্রতিনিধিরা। ওই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আরো জানা গেছে, এই দেশগুলোর বিশেষজ্ঞপর্যায়ের লোকেরা শিগগিরই মিলিত হবেন। কারিগরি দিক নিয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে মিসরে।
প্রশ্ন আসতে পারে, সৌদি আরব কেন হঠাৎ এই অঞ্চলের দিকে মনোযোগী হলো। কৌশলগত কারণে লোহিত সাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সমুদ্রসীমা। বিশ্বের বাণিজ্যিক পরিবহনের বড় একটি অংশ হয় এই পথে। লোহিত সাগরের সাথে এডেন উপসাগরের সংযোগ পথটিকে বলা হয়Ñ বাব আল মানদেব প্রণালী। এই প্রণালী দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিদিন ৩২ লাখ ব্যারেল তেল রফতানি হয় ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রণালীটির দিকে নজর দিতে শুরু করেছে ইয়েমেনের হাউসি বিদ্রোহীরা। হাউসিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ করছে সৌদি আরব ও তাদের মিত্র কিছু দেশ। তাই হাউসিরা সৌদি আরবকে বেকায়দায় ফেলতে বাব আল মানদেব প্রণালী দখল করতে চাইতেই পারে। সৌদি আরব মনে করছে এই প্রণালীতে হাউসি প্রভাব বাড়লে একদিকে যেমন তাদের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হবে, অন্য দিকে তা সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে সুবিধা দেবে। প্রসঙ্গত, শিয়া হাউসি বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে ইরান।
এ ছাড়া অর্থনীতিতে তেলনির্ভরতা কমাতে সৌদি আরব যেসব পরিকল্পনা নিয়েছে তার মধ্যেও লোহিত সাগরের উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব রয়েছে। রিয়াদ লোহিত সাগর এলাকায় কায়রো ও আম্মানের সাথে যৌথ কিছু প্রকল্প শুরু করতে চাচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য এলাকা এবং বিলাসবহুল পর্যটন এলাকা গড়ে তোলা।
আলজাজিরা লিখেছে, সৌদি আরব ও তার উপসাগরীয় মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ উপকূলকে মনে করে তাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থান। দেশ দু’টির আশঙ্কা তাদের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে চাইতে পারে। আর এ কারণেই অঞ্চলটিতে সম্পর্ক জোরদার করতে সচেষ্ট হয়েছে রিয়াদ।
সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর এ আশঙ্কার পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকার বিশেষ করে পূর্ব আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তার করতে সচেষ্ট হয়েছে অনেক দেশ। ইরান হাউসিদের মাধ্যমে ইয়েমেনে কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করছে। ইয়েমেনের রয়েছে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের বিশাল উপকূল। এ ছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সামাজিক কর্মকাণ্ড ও অর্থ সহায়তার মাধ্যমে প্রভাব বৃদ্ধি করছে তেহরান। আল আরাবিয়ার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আফ্রিকার অন্তত ১২টি দেশে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে ইরানি অর্থায়নে।
তুরস্কও সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকায় প্রভাব জোরদার করছে। লোহিত সাগরে সুদানের একটি দ্বীপ লিজ নিয়েছে তুর্কি সরকার যেটির মাধ্যমে আফ্রিকার হাজীদের মক্কা যাওয়ার নতুন রুট গড়ে তোলা হবে। জিবুতিসহ অনেক দেশে তুর্কি অর্থায়নে সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান এ বছর আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। কাজেই আফ্রিকায় প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রভাব বাড়তে চলেছে এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগী হয়েছে সৌদি আরব। যার প্রথম পদক্ষেপ রিয়াদের ওই বৈঠক। রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকের বিষয়ে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবাইয়ের সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘এটি এই অঞ্চলে সৌদি আরবের ও প্রতিবেশীদের স্বার্থ রক্ষার একটি প্রচেষ্টা এবং আমাদের এই অঞ্চলটিকে স্থিতিশীল করা ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিও প্রয়াস এটি’।
তবে লোহিত সাগরের পশ্চিম পাড়ের দেশ ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না বৈঠকে। ইরিত্রিয়ার রয়েছে ৭১৫ মাইল দীর্ঘ লোহিত সাগরের উপকূল। ইথিওপিয়া লোহিত সাগরের তীরের দেশ না হলেও, উপকূল থেকে দেশটির সীমান্ত খুব বেশি দূরে নয়। ত ছাড়া দেশটি ‘হর্ন অব আফ্রিকায়’ অবস্থিত।
আফ্রিকা মহাদেশ তুলনামূলকভবে গরিব একটি অঞ্চল। তাই এ অঞ্চলে ধনী দেশগুলোর জন্য প্রভাব বিস্তার করা সহজ। আর সেই সুযোগটিই হয়তো নিতে চাইছে সৌদি আরব। হাউসিদের কারণে ইয়েমেন এখন অনেকটাই ইরানের অধীন। পাশাপাশি লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের অন্য পাড়ের দেশগুলোও ইরানের মিত্র হয়ে গেলে সৌদি আরবের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়বে এ রুট দিয়ে আরব সাগরে যাওয়া। তাই সৌদি সরকার সচেষ্ট হয়েছে সুদান, জিবুতি এবং সোমালিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল