১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন

কতটুকু ধাক্কা খেলেন ম্যাক্রোঁ

-


চার সপ্তাহ ধরে চলা আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়েছে ফ্রান্স। ইউরোপের অন্যতম এ দেশটির এক দশকেরও বেশি সময় পর দেখা দেয়া সবচেয়ে বড় নাগরিক অসন্তোষ ও বিক্ষোভ এটি। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এমন আন্দোলন এটাই প্রথম। মূলত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির জন্য এ আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও এর সাথে যোগ হয়েছে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বিভিন্ন ধরনের কর আরোপ, বেতন বৃদ্ধিসহ সর্বোপরি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবির আন্দোলন। কয়েক সপ্তাহ ধরে ফ্রান্সজুড়ে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও হয়ে আসছে।
এ প্রতিবাদ বিক্ষোভে ট্যাক্সিচালকদের ব্যবহৃত ইয়েলো ভেস্ট (হলুদ জ্যাকেট) পরে অংশ নিচ্ছে প্রতিবাদকারীরা। ফ্রান্সের আইনে ট্যাক্সিচালকদের উজ্জ্বল সবুজাভ হলুদ জ্যাকেট পরে গাড়ি চালাতে হয়। যাতে সবার চোখে এটা দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা ইয়েলো জ্যাকেট পরে আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে এ প্রতিবাদটি ‘ইয়েলো ভেস্ট’ বা ‘হলুদ জ্যাকেট’ আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
দেশটিতে ১৭ নভেম্বর প্রথম জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়। দ্রুতই এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই আন্দোলনকারীরা দেশের বিভিন্ন এলাকার রাস্তা আটকে দেয়। তারা শপিংমল, কারখানা ও জ্বালানি সরবরাহ কেন্দ্রে প্রবেশের পথে বাধা দেয়। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে। মূলত ফ্রান্সে জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র নাগরিক অসন্তোষ। এসবের প্রতিবাদে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ পরে রাস্তায় নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা। এ আন্দোলনে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
আগামী ১ জানুয়ারি থেকে জ্বালানির ওপর বর্ধিত কর কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ নভেম্বর গ্যাসোলিন ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়। বিক্ষোভ গত শনিবার ভয়াবহ সহিংস আকার ধারণ করে। এদিন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে প্যারিসের রাজপথ। সেই সাথে আন্দোলনকারীরা সহিংস হয়ে ওঠেন। রাজধানী প্যারিস, মার্শাই, লিওঁ, তুলুজসহ বেশ কয়েকটি শহরে দাঙ্গা পুলিশের সাথে ইয়েলো ভেস্ট বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে সারা দেশে মোট এক হাজার ৭২৩ জনকে আটক করা হয়েছে। শুধু শনিবারই এক হাজার ৮২ জনকে আটক করা হয়। দেশব্যাপী প্রায় লাখখানেক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত রয়েছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে এক হাজার ২২০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবারের বিক্ষোভে সারা দেশে এক লাখ ৩৬ হাজার লোক অংশ নেন। তবে এ শনিবার প্যারিসের বিক্ষোভ ছিল বেশি সহিংস। বিক্ষোভকারীরা গাড়ি ও পুলিশ ব্যারিকেডে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা রাস্তার পাশের বিভিন্ন দোকানে হামলা চালায় ও লুটপাট করে। এ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত শতাধিক যানবাহন পোড়ানো হয়েছে বলে সরকারি বরাতে জানা গেছে।
তুমুল বিক্ষোভের মুখে ফ্রান্স সরকার জ্বালানি কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি বাতিল করলেও বিক্ষোভকারীদের অসন্তোষ থেকেই গেছে এবং অন্য ইস্যুগুলো নিয়ে বিক্ষোভ চলছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বহীন ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীরা সরকারকে ন্যূনতম পেনশন, কর ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন, অবসরের বয়সসীমা কমানোসহ ৪০টিরও বেশি দাবি ছুড়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ফিলিপ এদুয়া বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। কোনো কর ব্যবস্থাই আমাদের জাতীয় ঐক্যকে বিপন্ন করতে পারে না।’
এমন নাজুক পরিস্থিতিতে সোমবার রাতে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ভাষণে তিনি আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। নি¤œ আয়ের মানুষদের বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি করের বোঝা কমানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
ম্যাক্রোঁ ২০১৯ সাল থেকে সর্বনি¤œ মজুরি ১০০ ইউরো বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এ ছাড়াও অল্প আয়ের পেনশনভোগীদের জন্য পরিকল্পিত শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল করা হয়। অতিরিক্ত সময়ের মজুরির ক্ষেত্রে নেয়া শুল্ক বিলোপ করা হয়। এ ছাড়া মালিকপক্ষের কাছ থেকে বছর শেষে কর্মচারীরা শুল্কমুক্ত বোনাস পাবে বলে ঘোষণা দেন ম্যাক্রোঁ। তবে বিক্ষোভকারীদের ধনী ব্যক্তিদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব নাকচ করেন তিনি।
সর্বনি¤œ মজুরি ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর এ অতিরিক্ত মজুরি মালিকপক্ষের পরিবর্তে সরকারিভাবে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। ফ্রান্সভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক বক্তব্যে দেশটির সরকারবিষয়ক মন্ত্রী অলিভার ডাসসপ্ট বলেন, সব মিলিয়ে এসব কিছুর ব্যয় হবে কমপক্ষে আট থেকে ১০ বিলিয়ন।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীদের বেশির ভাগ দাবিদাওয়া মেনে নিয়েছেন। এ আন্দোলন নি¤œ আয়ের মানুষদের প্রেরণা জোগাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। চার সপ্তাহের এ আন্দোলন ইউরোপসহ গোটা বিশ্ব কাঁপিয়ে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ফরাসি জনগণের সামনে মাথা নত করলেন ম্যাক্রোঁ। ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন থেকে স্বল্প আয়ের মানুষ কতটুকু সুবিধা পায়, সেটাই দেখার বিষয়। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের অন্যতম দাবি ছিল ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ। যে দাবিগুলো এখনো আদায় হয়নি, সেগুলো ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীরা কিভাবে নেয়; সেদিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্ববাসী। হ


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকা লিগে মোহামেডানকে হারাল শাইনপুকুর বিশাল ব্যবধানে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে হারালো গাজী গ্রুপ চকরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে কুপিয়ে হত্যা আবারো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আইএমএফ বুয়েটে নতুন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নিয়োগ পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহতদের পরিবারের সাথে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪

সকল