২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
আফগানিস্তান

এখন কী করবেন ট্রাম্প?

-

এখন কী করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ট্রাম্প কার্ডগুলোর কোনোটিই কাজে লাগছে না, বরং বুমেরাং হয়ে তার দিকেই আঘাত হানছে। তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রচারণায় অন্যতম ইস্যু ছিল আফগানিস্তান। বলেছিলেন, সেখান থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু কাজ করলেন বিপরীত। বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে আফগান নীতি ঘোষণা করেছিলেন। পাকিস্তানকে দোষারোপ করে গরম গরম টুইটও করলেন। কিন্তু এখন আবার সুর নরমও করছেন। আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ নিয়ে তিনি বেশ বিপাকে পড়েছেন।
গত কয়েক সপ্তাহে যুদ্ধ হঠাৎ করেই মর্মান্তিক ও ভয়াবহ হয়ে ওঠায় কী করবেন বুঝতেই পারছেন না।
নভেম্বরে আফগানিস্তানে নিহত উটার মেয়র ও মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর ব্রেন্ট টেলরের লাশ দেশে আনা হয়। এ অনুষ্ঠানে আমেরিকান বাহিনীর স্বার্থ কতটা মারাত্মক চ্যালেঞ্জে পড়েছে, সে চিত্রই ফুটিয়ে তুলেছে। নভেম্বরের শেষ দিকে তালেবানের পুঁতে রাখা মাইনের আঘাতে আরো তিন মার্কিন সৈন্য নিহত হয়। চলতি বছরে এটিই এ ধরনের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘটনা।
আফগানিস্তান এমন একটি যুদ্ধ, যাতে তিনজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ছয়জন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং পাঁচজন জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ জড়িত থেকেও সুনির্দিষ্ট জয় হাসিল করতে পারেননি। কয়েক দশক আগে সোভিয়েত ইউনিয়নও একই চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আফগানিস্তানে তাদেরও ভয়াবহ বিপর্যয় বরণ করতে হয়েছিল।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আফগানিস্তান থেকে সরে আসতে চান। কিন্তু এ মন্তব্য বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আবার তিনি সৈন্য বাড়ানোর প্রস্তাবেও সায় দিয়েছেন। তাহলে তার কোন অবস্থানটি ঠিক? সৈন্য প্রত্যাহার বা সৈন্য বাড়ানোÑ কোনটি আফগানিস্তান যুদ্ধের অবসান ঘটাবে?
ইতিহাস হয়তো কিছু তথ্য দিতে পারে। আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিল ৯ বছরের কিছু বেশি সময় (১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত)। এতে ১৫ হাজার সৈন্য নিহত ও ৩৫ হাজার সৈন্য আহত হয়েছিল সোভিয়েতের। কফিনে আসা তরুণদের লাশ কমিউনিস্ট শাসন অবসান ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
আর আমেরিকার ১৭ বছরের যুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৭ হাজার। আমেরিকার আফগানিস্তান অভিযান প্রায়ই ভিয়েতনামে দেশটির যুদ্ধের সাথে বেশি তুলনা হয়। সেখানে মার্কিন বাহিনীকে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে পালাতে হয়েছিল।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রকে এর চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। ভিয়েতনামে আমেরিকানরা অন্তত তাদের শত্রুকে চিনত। কিন্তু আফগানিস্তানে তারা সম্ভবত কোনোকালেই শত্রু চিনতে পারেনি। তবে এটিই একমাত্র সমস্যা নয়। স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন (এসআইজিএআর) কংগ্রেসকে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে অনেক জটিলতার কথা বলা হয়েছে।
প্রথমত, দেশটিতে আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।
বর্তমানে আফগান সরকার মাত্র ৫৫ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। অথচ তিন বছর আগে তাদের দখলে ছিল ৭১ শতাংশ এলাকা। আবার আফগান নেতৃত্বাধীন আমেরিকান মদদপুষ্ট বিমান হামলায় বেসামরিক লোক আগের চেয়ে বেশি নিহত হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে প্রায় ৩১৩ জন নিহত ও ৩৩৬ জন আহত হয়েছে। এটি মার্কিন সরকারের হিসাব। আর জাতিসঙ্ঘের হিসাবে হতাহতের সংখ্যা এর চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি।
তাদের হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এক হাজার ৬৯২ জনের মৃত্যু ও তিন হাজার ৪৩০ জন আহত হয়েছে।
অধিকন্তু দুর্নীতি বাড়ছে। আবার মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন রাঘব বোয়ালদের দিকে হাত না বাড়িয়ে চুনোপুঁটিদের পাকড়াও করতেই বেশি আগ্রহী।
আফগানিস্তান এখনো বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম আফিম রফতানিকারক। গত দুই বছরে আফিম চাষের জমি ৬৩ শতাংশ বেড়েছে বলে এসআইজিএআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০০২ থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য ১.৫ মিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাতে কোনো সুফল আসেনি, বরং বেড়েছে। জাতিসঙ্ঘের হিসাব মতে, ২০০২ সালের চেয়ে আফিম উৎপাদন চারগুণের বেশি বেড়েছে।
আবার আফগান সামরিক বাহিনীতে লোকবলের সঙ্কট কাটানো যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় লোকবলের চেয়ে ১১ শতাংশ বা ৪০ হাজার জনশক্তি কম আছে সামরিক বাহিনীতে।
আফগান বাহিনীকে নিয়েও বিপদে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা যাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তারাই অনেক সময় ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। মেজর টেলর নিহত হয়েছেন এভাবেই।
এখন আফগানিস্তানে মার্কিন অবস্থান আরো খারাপ দিকে যায় কি না, সেটিই দেখার বিষয়। তালেবানের মাধ্যমে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের ভূমিকা আবার বাড়তে পারে। নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কী ভূমিকা পালন করেন, তাই দেখার বিষয়। পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে ট্রাম্প যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হয়নি।
এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়, তবে শত্রুরা আরো সুযোগ পেয়ে যাবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র আরো অরক্ষিত হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে এবং পরবর্তী প্রজন্মের আরো অনেকে আফগানিস্তানে গিয়ে নিহত হওয়ার বদলে যুক্তরাষ্ট্রের এখন উচিত হবে পরাজয় শিকার করে দেশটি থেকে বের হয়ে আসা।
এ কাজটি যত দ্রুত করবে তারা, ততই মঙ্গল। এ কাজের জন্যই সম্প্রতি তারা বিশেষ দূত নিয়োগ করেছে। দেখা যাক কী হয়। হ


আরো সংবাদ



premium cement