১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতের এস-৪০০ বনাম পাকিস্তানের এমআইআরভি

-

ভারত সম্প্রতি এস-৪০০ বিমান প্রতিরাব্যবস্থা কেনার জন্য রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে। এই চুক্তি শুধু এ দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পুরো দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর কারণ এই অস্ত্র সামরিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
ভারতের মতাসীন এলিটরা মনে করছে, ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকায়ন ও সামরিক সরঞ্জাম স্তূপ করে ভারত ভারসাম্য ব্যাপকভাবে তার অনুকূলে নিয়ে গিয়ে অপরিহার্যভাবে আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
এস-৪০০ হলো রাশিয়ার চতুর্থ প্রজন্মের বিমান ও পেণাস্ত্র প্রতিরাব্যবস্থা। এটি ৪০০ কিলোমিটার দূরেই আকাশে থাকা টার্গেটকে শনাক্ত করতে পারে। এটি ব্যালাস্টিক পেণাস্ত্র, ড্রোন ও বিমান হামলার বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আমেরিকার প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের চেয়ে এটি অনেক বেশি কার্যকর বলে প্রমাণ হয়েছে। অবশ্য কৌশলগত বিশ্লেষকেরা একমত যে, উভয় প্রতিরাব্যবস্থাই ১০০ ভাগ নির্ভুল নয়। ফলে আক্রমণাত্মক স্ট্রাইকে প্রতিরা ঢাল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
চীনের হাতেও আছে এই এস-৪০০। তা ছাড়া, অন্যান্য সামরিক শক্তিতেও এগিয়ে আছে চীন। ফলে এস-৪০০ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভয়ে পড়তে পারে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানও বসে নেই। তারাও তাদের সামর্থ্যরে আলোকে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ধেয়ে আসা পেণাস্ত্র ঠেকাতে ব্যালাস্টিক মিসাইল ডিফেন্সের (বিএমডি) উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। এমআইআরভি প্রযুক্তির ব্যালাস্টিক মিসাইল সাধারণত পোস্ট-বুস্ট পর্যায়ে গিয়ে ওয়ারহেড অবমুক্ত করে। এতে পেণাস্ত্র প্রতিরাব্যবস্থার কার্যকারিতা কমে যায়। বিএমডি মূলত একক কোনো পেণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে সম। বিএমডির রাডার ছুটে আসা কোনো পেণাস্ত্র শনাক্ত করার পর এর গতিপথ নির্ণয় করে কম্পিউটার। এর ভিত্তিতে ছুটে আসা পেণাস্ত্রটি মাঝপথে ধ্বংস করার জন্য প্রতিরোধক পেণাস্ত্র বা ইন্টারসেপ্টর ছোড়া হয়। ইন্টারসেপ্টরে একটি ওয়ারহেড থাকলেও এমআইআরভি-তে একাধিক ওয়ারহেড সংযুক্ত থাকে।
২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রথম এমআইআরভি প্রযুক্তির পেণাস্ত্র পরীার কথা ঘোষণা করে। ২০১৭ সালের পরীার মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের প্রথম এমআইআরভি-সজ্জিত পেণাস্ত্র হিসেবে আবাবিলের আগমন ঘটে।
অবশ্য পাকিস্তান সত্যিই এই প্রযুক্তি পুরোপুরি হাসিল করতে পেরেছে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন কিছু বিশেষজ্ঞ। কারণ, এমআইআরভি ওয়ারহেডগুলো সাধারণভাবে প্রচলিত ওয়ারহেডের তুলনায় অনেক ছোট হয়। এর জন্য পারমাণবিক ওয়ারহেডের মিনিয়েচারাইজেশন প্রয়োজন হয়। তাই এমআইআরভি-তে ব্যবহারের উপযোগী ুদ্র পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরিতে পাকিস্তান কতটা সফল হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন সেখানে।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান এমআইআরভি-যোগ্য পেণাস্ত্র তৈরি করেছে। দিল্লিডিফেন্সরিভিউ.কম-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আবাবিলের হিটশিল্ডের পরিধি এর কোর ভেহিকেলের চেয়ে বেশি। এতে বোঝা যায় আবাবিলের প্রয়োজনীয় এমআইআরভি-সামর্থ্য রয়েছে। তবে পাকিস্তানকে এমআইআরভি সামর্থ্য অর্জনের স্বীকৃতি দিতে হলে আরো কিছু ফ্যাক্টর বিবেচনা করতে হবে।
ভারতের সাথে প্রচলিত অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার বদলে পাকিস্তান আরেকটি পদপে গ্রহণ করেছে। তা হলো তার পরমাণু অস্ত্র সামর্থ্য বাড়ানো। এর আলোকেই অবশ্য এমআইআরভির দিকে এগিয়েছে পাকিস্তান। দেশটি ভীতিপ্রদর্শন নীতি পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে স্বল্পমাত্রার পরমাণু অস্ত্রের দিকে তার বিশেষ নজর রয়েছে। এসব অস্ত্র ভারতের কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিন ও প্রো-অ্যাকটিভ মিলিটারি অপারেশন স্ট্র্যাটেজি প্রতিরোধে অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় পাশ্চাত্যের নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা পাকিস্তানের যুদ্ধেেত্র ব্যবহারোপযোগী বা স্বল্পমাত্রার পরমাণু অস্ত্রের গুরুত্ব বুঝতে পারছে না। মনে রাখতে হবে, বর্তমানে পরাশক্তিগুলোও স্বল্পমাত্রার পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। খবরে প্রকাশ, রাশিয়ার হাতে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্রই শুধু নেই, সেই সাথে তারা যুদ্ধেেত্র সীমিত তি সৃষ্টি করার মতো অস্ত্র তৈরিতে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।
একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রও গত ফেব্রুয়ারিতে তাদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নের বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে। এ কারণে বলা যায়, পাকিস্তানের পরমাণু সামর্থ্য বিচিত্রমুখী করা বৈশ্বিক কৌশলগত পরিবেশের বিরাজমান ধারার বিরুদ্ধে নয়।
প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ৫ অক্টোবর ৫ বিলিয়ন ডলারে এস-৪০০ দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিপেযোগ্য পেণাস্ত্র চুক্তি করেছে। এটি দণি এশিয়ার কৌশলগত পরিবেশে বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী বিষয় হলো, এস-৪০০ ও প্যাট্রিয়ট পেণাস্ত্র ভুয়া নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। এটি আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদও সৃষ্টি করে। এস-৪০০ পেণাস্ত্র পাকিস্তানের প্রতিরা প্রাচীর অস্থিতিশীল করতে পারবে না বা আক্রমণ মতা অকার্যকর করতে পারবে না। এ ছাড়া এস-৪০০ পুরো ভারতীয় এলাকাকে সুরতিও করতে পারবে না। পাকিস্তানের ক্রুইজ পেণাস্ত্র অনায়াসেই এ ধরনের প্রতিরাব্যবস্থা ভেদ করতে পারবে।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান এর সাথে আলাদাভাবে বহুমুখী ল্েয আঘাত হানার এমআইআরভি তৈরি করছে। ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তান তার মধ্যমপাল্লার আবাবিল ব্যালাস্টিক পেণাস্ত্র পরীা করেছে।
তৃতীয়ত, সাবমেরিনচালিত ব্যবস্থায় বাবর ৩-এর মাধ্যমে হামলা চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে এই পেণাস্ত্র শনাক্তকরণ কঠিন হয়ে পড়বে।
সংেেপ বলা যায়, ভারত আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করে ও প্রাণঘাতী অস্ত্র সংগ্রহ করে দণি এশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতা হুমকিগ্রস্ত করলেও পাকিস্তানের সামর্থ্যকে অস্থিতিশীল করতে পারেনি। হ


আরো সংবাদ



premium cement