২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আব্বাস ও ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের ভাগ্য

-

ফিলিস্তিনি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সদস্যরা আবারো এক বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। এর কারণ, ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদানে এবং পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বন্ধে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের এবারের অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট আব্বাস ইতঃপূর্বের নেয়া সুপারিশমালাকেই পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এ বিভ্রান্তিকর অবস্থা শুরু হয়েছিল কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে ইতঃপূর্বে আব্বাসের দেয়া বক্তব্যের সময় থেকেই। ওই ভাষণে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশমালা ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং হামাসের সাথে সম্পর্কিত। তিনি খোলাখুলিভাবে বলেছিলেন, কাউন্সিল শুধু ওই তিন পক্ষের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তই নেয় না, তা বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ নেয়। আব্বাস বলেন, ‘ইসরাইল, আমেরিকা এবং হামাসকে মোকাবেলা করার জন্যই শুধু এই কাউন্সিল নয়, বরং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যও এ কাউন্সিল আমাদের প্রয়োজন। সম্প্রতি অধিবেশনে সম্ভবত আব্বাসের গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতিটি হচ্ছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং হামাসের সাথে আমাদের সম্পর্কটা কেমন হবে, তা আমরা অতীতে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেখাব। আমরা অবশ্যই আলোচনা চালিয়ে যাবো এবং তাদের চাপ দিতে থাকব, ভবিষ্যতে এটা ইতিহাসের কেন্দ্র হয়ে থাকবে।’
প্রেসিডেন্ট আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেন এবং এ পরিকল্পনাকে ‘শতাব্দীর ভাগ-বাটোয়ারা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। আব্বাস গাজা ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি স্থাপনের এ সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক শাস্তিমূলক কার্যক্রমেরই একটি উল্লেখ করে বলেন, হামাস সমর্থনপুষ্ট ‘অস্থায়ী সীমান্তে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’ তারই একটি অংশ।
আব্বাসের গৃহীত নীতিমাল থেকে এটা সুস্পষ্ট, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে তিনি যে নির্দেশাবলি দিয়েছেন তা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের ইতঃপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ব্যাহত করছে। তিন বছর আগে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ইসরাইলের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রশ্নে সুস্পষ্ট সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছিল। সেই সাথে তেল আবিবের সাথে ইহুদি বসতি স্থাপনের চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করেছিল। যদিও নেতানিয়াহু সরকার দ্বন্দ্ব নিরসনের এ সুপারিশমালা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চলেছে। তাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, অধিকৃত এলাকায় মার্কিন দূতাবাস সরানোর ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল।
আব্বাস শুধু ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সুপারিশই উপেক্ষা করেননি, সেই সাথে পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ রক্ষায় মার্কিন সিদ্ধান্তের বাইরেও চলে গেলেন। আব্বাস খোলাখুলিভাবে ইসরাইলের নেতাদের, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক অভিজাতশ্রেণীদের বিক্ষোভের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তিনি ইসরাইলি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রয়োজনে তাদের সাথে তিনি প্রতিদিন বৈঠক করবেন। যাতে করে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরো জোরদার করা যায়।
এটা মূলত প্রতিরোধী পরিবেশকে আরো জোরালো করে তোলা। যা নিষ্পত্তি ও ইহুদি বসতি স্থাপন প্রকল্পকে আরো হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে। আব্বাস আরো বলেন, যেহেতু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু তার সাথে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তাই ইসরাইলি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (শিনবেট) প্রধান নাদভ আর্গমানের সাথেও মাসিক বৈঠক করতে আগ্রহী। আব্বাসের এ উদ্যোগ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার প্রতি তার এ আন্তরিকতা বেশ প্রশংসার দাবিদারÑ আর সে কারণে ইসরাইলি গণমাধ্যমে নেতানিয়াহু সরকার ও শিন বেট তীব্র সমালোচনার মধ্যে পড়ে। হেব্রোন থেকে সম্প্রচারিত রেডিও স্টেশনগুলো শুনলে যে কেউ এটা অনুধাবন করতে পারেন।
ইহুদি সন্ত্রাসী আন্দোলনের কাচ নেতা বারুচ সার্জেল সম্প্রতি এক ঘোষণায় বলেছেন, তিনি পরের নেসেট নির্বাচনে অংশ নেবেন, যাতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম তিনি সহজেই পরিচালনা করতে পারেন। মার্কিন প্রশাসনের সাথে আব্বাসের যোগাযোগ বন্ধের কারণে তিনি কার্যত আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন।
এ দিকে, ওয়াশিংটনের সাথে আব্বাসের যোগাযোগ বন্ধের পরপরই ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সাজেদ ফারাজ যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। সেখানে তার কার্যক্রম কী ছিল তা জানা না গেলেও এটা সবারই জানা, ট্রাম্প প্রশাসনই ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের ও ফিলিস্তিনিদের বিশ্বস্ত সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
ওয়াশিংটন থেকে পিএলও প্রতিনিধিকে বহিষ্কারের পর ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনের পাশাপাশি শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের ত্রাণ কর্মসংস্থানে আর্থিক সহায়তা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে উৎসাহিত করতে (নিরাপত্তা সংস্থা পরিচালিত কার্যক্রম ছাড়া) অন্যান্য কার্যক্রমও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে, ফিলিস্তিন কেন্দ্রীয় কাউন্সিল তার শেষ অধিবেশনে গাজায় আব্বাসের জারি করা সব পদক্ষেপ বাতিলের সুপারিশ করেছে। আর তাই বলা যায়Ñ আব্বাস শুধু কাউন্সিলের সুপারিশ সম্পূর্ণ উপেক্ষাই করেননি, অর্থনীতি বিষয়ে আরো শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়েছেন। অতএব আব্বাসের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে এবং অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এটাই বলা যায়, গাজা এবং এর অধিবাসীদের অবশ্যই আব্বাসের এ সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement