২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বসনিয়ার নির্বাচনে সার্বপন্থীর জয় : ঝুলে যাচ্ছে দেশটির ভাগ্য

-

ইউরোপ মহাদেশের বলকান উপদ্বীপের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বসনিয়া হার্জেগোভিনা। অড্রিয়াটিক উপসাগরের তীরে ত্রিভুজ আকৃতির দেশটির আয়তন ৫১ হাজার ১২৯ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৩৫ লাখ দুই হাজার ৬৩৬ জন। রাজধানী সারায়েভো।
৭ অক্টোবর বসনিয়ায় যুদ্ধের পর দেশটিতে অষ্টম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বসনিয়ার নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল নির্বাচনী ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। কেননা দেশটিতে কেন্দ্র দু’টি স্বতন্ত্র সরকার, ক্যানটন ও ডিস্ট্র্রিক্ট অব ব্রিচকোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশটির ৩৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৩৩ জন ভোটার কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট (তিনজন), কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট, দুই অংশের অ্যাসেম্বলি, ডিস্ট্রিক্ট অব ব্রিচকো ও সার্ব স্বতন্ত্র অংশ রিপাবলিকা স্রেপ্সকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ৫৩ দল, ৩৬ জোট এবং ৩৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্য থেকে তাদের পছন্দের প্রার্থী বাছাই করেছেন।
অন্যান্য দেশের মতো একজন প্রেসিডেন্ট দেশটি পরিচালনা করেন না। এখানে তিন জাতি থেকে তিনজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তাদের দায়িত্ব আট মাস পরপর পরিবর্তন হয়। প্রতি চার বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবার তিন সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্সি পর্ষদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে বসনীয় আসনের জন্য ছয়জন, ক্রোয়েট আসনের জন্য পাঁচজন এবং সার্বীয় আসনের জন্য চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। ১০ অক্টোবর প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট গণনা ও প্রকাশের ভিত্তিতে বসনিয়ায় রাষ্ট্রপতির তিনজন সদস্যকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বসনীয় মুসলিমদের থেকে বিজয়ী হয়েছেন সেফিক ডিফাফেরভিক, ক্রোয়েটদের থেকে জেলজকো কোমসিক এবং সার্বদের থেকে মিলোরাদ দোদিক।
এ নির্বাচনে কট্টর সার্ব জাতীয়তাবাদী মিলোরাদ দোদিকের জয়ের ফলে বসনিয়া যুদ্ধের ২০ বছরের মাথায় দেশটির অস্তিত্ব আবারো হুমকির মুখে পড়েছে। দোদিক একজন কট্টরপন্থী সার্ব নেতা। তিনি আরো আগে থেকেই বসনিয়া থেকে সার্ব সংখ্যাগরিষ্ঠদের অংশ রিপাবলিকা স্রেপ্সকাকে আলাদা করতে আগ্রহী। এ ছাড়া দোদিক রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনপন্থী হিসেবে পরিচিত। তার জয়ের ফলে বলকান অঞ্চলে পুতিনের প্রভাব আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
ব্যক্তিগত জীবনে দোদিক একজন সার্ব আইনজীবী। তাকে বসনিয়া থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাবেক যুগোশ্লভিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল (আইসিটিওয়াই) এবং দ্য ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছেন। আদালত দু’টি তার যুদ্ধাপরাধকে গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করেছে। এসব কারণে তাকে বসনিয়া থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। এমন একজন ব্যক্তি দেশটির প্রেসিডেন্ট পর্ষদের একজন নির্বাচিত হওয়ায় দেশটিতে তিন জাতি তাদের নিজেদেরকে কত দিন একসাথে রাখতে পারে এটিই দেখার বিষয়।
এ নির্বাচনের ফলে দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। ইইউ ও ন্যাটোতে যোগ দেয়ার শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, দেশটির নিজস্ব সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। যা প্রায় অসম্ভব। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই এ অঞ্চলটিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা লেগেই আছে। অন্য দিকে, রাশিয়াও চায় না বলকানের এ দেশটি ন্যাটোতে যোগদান করুক।
জটিল শাসনব্যবস্থায় বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
মূলত বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা দেশটির ভেতর আরো একটি দেশ রয়েছে। মুসলিম বসনিয়াক ও ক্রোয়েটদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দ্য ফেডারেশন অব বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা নামে পরিচিত। মূল আয়তনের ৫১ শতাংশ নিয়ে এর অবস্থান। আর বাকি ৪৯ শতাংশে সার্বদের শাসিত অংশের নাম রিপাবলিকা স্রেপ্সকা। এই অংশের রাজধানীর নাম বানজা লুকা। দুই অংশেরই আলাদা প্রেসিডেন্ট, সরকার, সংসদ, পুলিশ ও পৃথক কর্তৃপ রয়েছে।
দেশটির পার্লামেন্ট দুই কবিশিষ্ট। দ্য হাউজ অব পিপলস এবং দ্য হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ। হাউজ অব পিপলসে ১৫ জন সদস্য রয়েছেন। এর দুই-তৃতীয়াংশ দ্য ফেডারেশন অব বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার এবং এক-তৃতীয়াংশ রিপাবলিকা স্রেপ্সকার। অর্থাৎ বসনিয়াক, ক্রোয়েট ও সার্বদের পাঁচজন করে সদস্য রয়েছেন এতে। আর হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে রয়েছেন ৪২ জন সদস্য। এখানেও বসনিয়াক, ক্রোয়েট ও সার্বদের আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি রয়েছে।
দুই স্বতন্ত্র পরে এই সরকার দ্বারা পরিচালিত দেশটিতে চারজন প্রেসিডেন্ট, পাঁচটি পার্লামেন্টারি হাউজ এবং ১০টি ক্যানটন অ্যাসেম্বলি (শাসনতান্ত্রিক বিভাগ) রয়েছে। সার্বদের পরিচালিত রিপাবলিকা স্রেপ্সকায় একজন প্রেসিডেন্ট ও দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। আর বসনিয়ার মুসলিম-ক্রোয়েট ফেডারেশনের দ্বিকবিশিষ্ট পার্লামেন্টের জন্য দুইজন প্রেসিডেন্ট ও দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। বসনিয়ার মুসলিম-ক্রোয়েট ফেডারেশনের ১০টি ক্যানটনের জন্যও ভোটাররা ভোট দিয়ে থাকেন।
এ দুই স্বতন্ত্র অংশের শাসিত দেশে উভয়পক্ষের মধ্যেই বিভেদ রয়েছ। বসনিয়ার মুসলিমরা চায় কেন্দ্র শক্তিশালী হোক। অন্য দিকে, সার্বরা কোনো অবস্থায় স্বতন্ত্র শাসন সমর্পণ করতে রাজি নয়। আর ক্রোয়েটদের মধ্যে বিভক্তি আরো বেশি। সার্ব আর ক্রোয়েটরা উভয়েই তাদের প্রতিবেশী দেশ সার্বিয়া আর ক্রোয়েশিয়ার প্রতি দুর্বল।
৩৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটি রাজনৈতিক ও আর্থিক সমস্যাসহ বিভিন্ন সঙ্কটে জর্জরিত। এক-তৃতীয়াংশের বেশি লোক এখন বেকারত্বের সীমায় অবস্থান করছে।
২০১৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েক লাখ বসনিয়ান তরুণ-যুবক কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছে। ১৯৯৫ সালে ডেটন শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে দেশটিতে সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটে। যে যুদ্ধে লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানচ্যুত হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
সমালোচকদের দৃষ্টিতে নড়বড়ে চুক্তিটির মাধ্যমে দেশটিকে দুটো আধা-স্বতন্ত্র শাসনে বিভক্ত করা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কমে গেছে। ভিন্ন মতালম্বীর সরকার হওয়ার ফলে বিভক্তিগুলো আরো বেড়েছে। যা বসনিয়াকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এ নির্বাচনে কট্টর সার্বপন্থীর বিজয় এ বিভেদকে আরো বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে। হ
ভধৎযধহলহঁ১২@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল