২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাশিয়া না যুক্তরাষ্ট্র : দোটানায় ভারত!

-

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের সাম্প্রতিক মাখামাখির কথা সবাই জানে। দেশ দু’টির মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভূ-কৌশলগত দৃশ্যপটই পাল্টে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় যে রাশিয়া ছিল ভারতের মিত্র,ওই স্থানটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের। কেবল এখানেই নয়, রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনকে সংযত করার জন্য জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে চার দেশীয় জোট গড়ার কাজেও অনেকটা এগিয়ে গেছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। এভাবেই যখন চলছিল, তখন নতুন সমীকরণও হাজির হয়ে গেছে, অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে।
আর তা হলোÑ রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ৪ অক্টোরব তার বিশেষ আইএল-৯৬ বিমানে করে নয়া দিল্লি যাওয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট দিল্লি সফর করতেই পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রোপটে এবারের রুশ-ভারত শীর্ষ বৈঠকটির দিকে সবার তীক্ষ্ম নজর থাকবে। গত মাসে দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের ‘২+২’ সংলাপের পর যে পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তার প্রোপটে পুতিনের ভারত সফর বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রুশ অস্ত্র কেনা হলে ভারতের ওপর অবরোধ আরোপ করার মার্কিন হুমকির ফলে সত্যি কী ঘটে, সে ব্যাপারে সবার নজর থাকবে। তা ছাড়া ইরানের চাহাবার বন্দরের ভবিষ্যৎ কী হবে তাও পরোভাবে নির্ভর করবে আসন্ন এই সফরের ওপর রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ বিমান বিধ্বংসী পেণাস্ত্র ক্রয় না করার জন্য ভারতকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ভারতের প্রতিরামন্ত্রী সীতারামন ১৭ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লিতে মিডিয়াকে বলেছেন যে, ওই ক্রয়চুক্তি ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে। ভারত ৪০ হাজার কোটি রুপিতে চারটি এস-৪০০ কেনার কথা ভাবছে। এশিয়া ও প্যাসিফিক নিরাপত্তাবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী র‌্যান্ডল স্করিভার ভারতের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ না হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি ওয়াশিংটনে বলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ নতুন প্লাটফর্ম ও সিস্টেম কেনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অত্যন্ত উদ্বেগের’ বিষয় হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ে কি ভারত ওই অস্ত্র কেনা থেকে বিরত থাকবে?
এর আগে মে মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোচিতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকে বলেছিলেন যে, রাশিয়ার সাথে ভারতের ‘বিশেষ ও সুবিধাজনক কৌশলগত সম্পর্ক’ রয়েছে। একসময় মিগ-২১ বিমান রাশিয়ার কাছে ভারতের অস্ত্র বাজারের দুয়ার খুলে দিয়েছিল। এখন পর্যন্ত রুশ নির্মিত জঙ্গিবিমান, রণতরী, ট্যাঙ্ক ও সাবমেরিন ভারতে যাচ্ছে। ভারতীয় অস্ত্র ভাণ্ডারের ৬০ ভাগ সরঞ্জামই রাশিয়ায় নির্মিত। এগুলো রাতারাতি প্রতিস্থাপন করা কঠিন ব্যাপার।
আবার ওয়াশিংটনের বিরক্ত হওয়ার কারণ বোধগম্য। যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক। গত এক দশকে তারা ভারতে ১৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। কিন্তু তবুও রাশিয়াকে এই বাজার থেকে সরাতে পারেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে তাদেরই এক নম্বরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবারের পুতিন-মোদি শীর্ষ বৈঠকে নর্থ-সাউথ করিডোরও গুরুত্ব পাবে। এই সংপ্তি রুট দিয়ে মুম্বাই থেকে ইরান ও রাশিয়া হয়ে ভারতীয় পণ্য চলাচল করতে পারবে। তবে প্রতিরা সম্পর্কই হবে প্রধান বিষয়। ইরানি বন্দরটি নিয়েও পরো আলোচনা হতে পারে। মধ্য এশিয়া ও আফগানিস্তানে প্রবেশের জন্য ভারতের কাছে এই বন্দরটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু ইরানের ওপর মার্কিন অবরোধের ফলে ভারত ওই দিকে অগ্রসর হতে পারছে না।
এদিকে রাশিয়ার অস্ত্র আরো দুই দশক পর্যন্ত ভারতের বাজারে সরবরাহ অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা হতে পারে মোদি-পুতিন বৈঠকে। দুই পরে মধ্যে এস-৪০০ পেণাস্ত্রব্যবস্থা ছাড়াও আরো অনেক অস্ত্র নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফায়েল জঙ্গি বিমান কেনার চুক্তি হলেও ভারতীয় বিমান বাহিনীতে আরো বিমান প্রয়োজন। তা ছাড়া, ২ বিলিয়ন ডলারে আরেকটি আকুলা-কাস পরমাণুচালিত অ্যাটাক সাবমেরিন কেনার কথাও ভাবছে ভারত। দুই বিলিয়ন ডলারের চারটি ক্রিভস-কাস ফ্রিগেট, ২০০টি কেএ লাইট ইউটিলিটি হেলিকপ্টার কেনার আলোচনাও হতে পারে। ভারত তার সেনাবাহিনীর জন্য তার দেশে ছয় লাখ একে-১০৩ অ্যাসাল্ট রাইফেল তৈরি করার ব্যাপারেও আগ্রহী। রুশ কর্মকর্তারা ৫ অক্টোবরের শীর্ষ বৈঠককে ‘লিটমাস টেস্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার জি পার্থসারথী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতাকে রাশিয়া সন্দেহের চোখে দেখছে। এই ঘনিষ্ঠতা ত্রিদেশীয় সামরিক মহড়া, হার্ডওয়্যার বিক্রি, বাহরাইনে মার্কিন নৌবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডে একটি ভারতীয় নৌবাহিনীর বহরকে সংযুক্ত করার দিকে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতে সই করা কয়েকটি কৌশলগত চুক্তি নিয়েও রাশিয়া উদ্বিগ্ন। এসবের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের সম্পর্ক ক্রমাগত নিবিড় হচ্ছে। রাশিয়া এখন একই ধরনের চুক্তি তাদের সাথে করার জন্যও ভারতকে চাপ দিচ্ছে।
এ দিকে রাশিয়ার সাথে চীনা ঘনিষ্ঠতায় পাশ্চাত্য যেমন উদ্বিগ্ন, ভারতও তা সহজভাবে নিচ্ছে না। এ দিকে যুক্তরাষ্ট্র এখন পাকিস্তানের প্রতি বৈরী হয়ে ওঠছে। কিন্তু এই ফাঁকে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে রাশিয়া।
মার্কিন অবরোধের শঙ্কার মুখে গত কয়েক মাসে ভারত ও রাশিয়া তাদের মুদ্রা দিয়ে বাণিজ্য পরিচালনার ব্যাপারে কথা বলছে। বিশেষ করে মার্কিন ডলার বাদ দিয়ে নতুন কোনো ব্যবস্থায় রাশিয়া থেকে কেনা অস্ত্রের মূল্য পরিশোধ করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য রাশিয়া থেকে কেনা একটি সাবমেরিনের মূল্য পরিশোধ হিসেবে ৪০ মিলিয়ন ডলারের সম পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। এটিই আরো ব্যাপকভাবে করা যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এতে বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র যদিও রুশ প্লাটফর্মের ওপর থেকে ভারতের নির্ভরশীলতা কাটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু ভারত-রুশ সম্পর্ক এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে করে আমেরিকানদের হতাশই হতে হবে। বরং বর্তমান অবস্থার আলোকে বলা যায়, নিকট ভবিষ্যতে রাশিয়া-ভারত সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে।
আবার অনেকের মতে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতে সাধারণ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখেই পুতিনকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। দেশবাসীকে এর মাধ্যমে এই বার্তা দেয়া হচ্ছে যে মোদি অত্যন্ত সফল কূটনীতিবিদ। তিনি ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। হ


আরো সংবাদ



premium cement