১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মালদ্বীপে ক্ষমতার পরিবর্তন

-

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলাফল অনুযায়ী ক্ষমতাসীন পিপিএম প্রার্থী আব্দুল্লাহ ইয়ামিন পরাজিত হয়েছেন। ১৬ শতাংশের কাছাকাছি ভোটের ব্যবধানে সম্মিলিত বিরোধীদলীয় প্রার্থী এমডিপি নেতা ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। দুই লাখ ৬২ হাজার ভোটারের মধ্যে ৮৮ শতাংশ তাদের ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের বিরুদ্ধে তিনি নির্বাচনে কারসাজি করতে পারেন বলে অভিযোগ করা হলেও দৃশ্যত অবাধ, মুক্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশটিতে। আর মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন হলে মালদ্বীপে এ ধরনের ফলাফলই প্রত্যাশা করা হয়েছিল। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও বিরোধী প্রার্থীরা কাছাকাছি ব্যবধানে জয়ী হয়। মালদ্বীপের সংবিধান অনুসারে ৫০ শতাংশের কম ভোট পেলে শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গতবারের নির্বাচনে ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিলেন মোহাম্মদ নাসিদ। কিন্তু দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে প্রথম দফায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা আবদুল্লাহ ইয়ামিন বিজয়ী হন। এবার দুইজন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কারণে ভোট ভাগাভাগি হয়নি। আর প্রথম দফাতেই বিজয়ী হন ইব্রাহিম সলিহ।
নির্বাচনের এই ফলাফল মালদ্বীপের জন্য নানা ধরনের পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ বয়ে আনতে পারে। এ নির্বাচনে ইয়ামিনের পক্ষে ছিলেন চীন-সৌদি-পাকিস্তান অক্ষ। অন্য দিকে বিরোধী প্রার্থীকে সরাসরি সাহায্য করেছে ভারত। ভারতের নীতিনির্ধারক ও গণমাধ্যম ইতোমধ্যেই মালদ্বীপের নির্বাচনের এই ফলাফলকে স্বাগত জানিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছে। আব্দুল্লাহ ইয়ামিন এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার বা ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে স্পষ্ট কোনো কথা বলেননি। দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর এই দ্বীপ দেশটির ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ইয়ামিন সেসব পদক্ষেপ গত কয়েক বছরে নিয়েছেন, তাতে কেউ কেউ তিনি স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কি না তাতে সংশয় প্রকাশ করেন। বাস্তবে সেটি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে হচ্ছে। ইয়ামিন নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিয়ে বিজয়ী প্রার্থীকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। তা না হলে দ্বীপদেশটিকে বৈরী আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে, যা সামাল দেয়া কঠিন হবে।
মালদ্বীপের গত কয়েক বছরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে, প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও তার পশ্চিমা মিত্ররা দেশটিতে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টির প্রতি জোর দিয়েছেন। এ জন্য তারা মালদ্বীপের সব বিরোধী দলকে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। ইয়ামিন এর মোকাবেলায় রাজনৈতিক কৌশলের পরিবর্তে প্রশাসন, সেনা ও পুলিশবাহিনীকে ব্যবহার করেছেন। একই সাথে বিচার বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করার চেষ্টা করেছেন। এটি করতে গিয়ে তিনি তার রাজনৈতিক উত্থানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জ্ঞাতিভাই সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গাইয়ুমের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। তিনি মামুনকে শাসক দলের প্রধানের পদ থেকে সরিয়েই ক্ষান্ত হননি, একই সাথে তাকে কারাগারেও নিয়েছেন।
এর মধ্য দিয়ে মালদ্বীপে শাসক দলের পক্ষে যে ক্ষমতার ভারসাম্য এক সময় তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট হয়ে গেছে। যে জমহুরি পার্টি ও আদালত পার্টি আগের নির্বাচনে শাসক দল পিপিএম-এর অংশীদার ছিল, তারা বিরোধী এমডিপির সাথে জোট বেঁধে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছে। একই সাথে মামুন গাইয়ুমকে বের করে দেয়ার পর সরকারি দল ভাগ হওয়ার কারণে ইয়ামিন সংসদে কার্যত সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। তিনি এর মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছেন সংসদকে অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিয়ে। এ অবস্থার প্রভাব জনমতে কী হতে পারে তার প্রতিফলন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রত্যক্ষ করা গেছে। কিন্তু এর পরবর্তী পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার মতো রাজনৈতিক পদক্ষেপ তিনি নিতে পারেননি। ইয়ামিন কেবলই শক্তি প্রয়োগকে সমাধান হিসেবে পেতে চেয়েছেন।
এ ছাড়াও ইয়ামিন বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পক্ষপাতমূলক বিচার আর জেল-নির্বাসন দিয়ে দমন করার বিপরীতে জনমতকে নিজের পক্ষে আনার জন্য উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানকে উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি চীন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সহায়তা গ্রহণ করেছেন উদারভাবে। এটি গ্রহণ করতে গিয়ে প্রত্যক্ষভাবে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ভারত-যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের সাথে। তিনি মালদ্বীপকে কমনওয়েলথ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এসবের প্রভাব নানা ক্ষেত্রেই পড়েছে।
প্রশ্ন হলোÑ মালদ্বীপে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন হলে দেশটির অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। মামুন আব্দুল গাইয়ুমের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ নাসিদের বিজয় লাভের পর তিনি ক্ষমতাকে সংহত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই নাসিদকে বিচার বিভাগের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। এর পরবর্তী নির্বাচনে তিনি আর জয়ী হতে পারেননি। সন্ত্রাসে যুক্ত থাকায় অভিযোগে আনা এক মামলায় ১৩ বছর জেল দণ্ড থাকায় এবারের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি।
ইব্রাহিম সলিহ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলে কারারুদ্ধ মামুন আব্দুল গাইয়ুমসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তিলাভ ঘটতে পারে। নাসিদ নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসতে পারেন। বিচারের মুখে পড়া সাবেক প্রধান বিচারপতি দায় থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করা এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা নতুন সরকারের জন্য হবে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন চীনের সাথে বেশকিছু বিনিয়োগ চুক্তি করেছেন। সৌদি আরব বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহায়তা করেছে উদারভাবে। নতুন সরকার সেখান থেকে বের হয়ে আবার ভারত ও পাশ্চাত্যমুখী নীতি গ্রহণ কতটা করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নাসিদ এর আগে থেকেই খোলাখুলিভাবে বারবার ভারতের সহায়তা প্রার্থনা করেছেন। ভারতের সহায়তায় তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার স্বপ্নও দেখেছিলেন, কিন্তু সেটি বাস্তবে হয়নি। বিরোধী জোটের সবাই অথবা মালদ্বীপের জনগণ নাসিদের এই দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করে না। তারা গণতন্ত্র চর্চা চেয়েছে বলে বিরোধী পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই ভোট ভারতের আধিপত্যের পক্ষে কোনোভাবেই নয়। এ বিষয়টিতে নতুন প্রেসিডেন্টকে বুঝেশুনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকসের পতনের পর সিরিসেনা-বিক্রমাসিংহে সরকারকে একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ভারতের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত চীনের সাথে সমঝোতায় যেতে হয় সিরিসেনা-বিক্রমাসিংহে সরকারকে। মালদ্বীপের নতুন সরকারকেও তেমন এক অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। তবে মালদ্বীপ আর শ্রীলঙ্কার আকার, অবস্থান ও সক্ষমতা সমান নয়। ফলে মালদ্বীপের পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা দেখার জন্য আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। হ


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল! অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে সালাম-মজনু গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু

সকল