২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ব্রেক্সিট ইস্যুতে কী করতে যাচ্ছেন থেরেসা মে

-

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ২০১৬ সালের জুনে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গণভোটে ইইউ ত্যাগের পে রায় দেন দেশটির ভোটারেরা। এর পরিপ্রেেিত পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন থেরেসা মে। তিনি ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দেন। কী কী শর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাবে তা নির্ধারণ করতে গিয়ে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন প্রস্তাবনার খসড়া চূড়ান্ত করে তার সরকার। একই সাথে ইইউয়ের সাথেও দর কষাকষি চলতে থাকে।
একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র বিরুদ্ধে ইইউয়ের অনেক শর্ত বিনা বাধায় মেনে নেয়ার কারণ উল্লেখ করে পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিট-বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস। তার পরই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন প্রস্তাবের শর্তের সাথে একমত হতে না পেরে পদত্যাগ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। এ সময় বিভিন্ন মহল থেকেও পুনরায় গণভোটের দাবি উঠতে থাকে।
আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হলেও ঠিক কী কী শর্তে যুক্তরাজ্য ইইউ ত্যাগ করবে তা নিয়ে যুক্তরাজ্যের সরকারে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। ইউরোপের ২৭ দেশের জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ব্রিটেনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে এখনো মতবিরোধ মেটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি ‘ব্যবসাবান্ধব’ ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন বলা হলেও দুইপ কিভাবে বাণিজ্য চালিয়ে যাবে তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ েেত্র ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিছুটা নমনীয় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। আর তাই প্রধানমন্ত্রীর এমন পরিকল্পনায় ুব্ধ হয়েছেন অনেক রণশীল এমপি। ব্রেক্সিট চূড়ান্ত করতে সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাণিজ্যনীতি। বাণিজ্যিক সুবিধা নিশ্চিতের জন্য যুক্তরাজ্য ইইউ অঞ্চলে মানুষের চলাচল ও ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেবে কি না তা নিয়ে থেরেসা মে’র নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির মধ্যেই বিরোধ রয়েছে।
ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যক্তি বরিস জনসন ও তার অনুগামীরা ইইউ থেকে ব্রিটেনের প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছেদের প,ে যাতে ইউরোপ থেকে অবাধ অভিবাসন এবং ব্রিটেনের ওপর ব্রাসেলসের কর্তৃত্ব বন্ধ হয়। যাদেরকে ‘হার্ড বেক্সিট’ গ্রুপ নামে ডাকা হয়। আর অন্য পকে বলা হয় ‘সফট ব্রেক্সিট’। এরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার বিরোধী। তারা চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন যে সুবিধাগুলো পায় সেগুলো অব্যাহত রাখতে। যাতে ব্রিটেনে কর্মসংস্থান এবং ইইউ-ব্রিটেন ব্যবসা-বাণিজ্য তিগ্রস্ত না হয়। তাই গণভোটের পর থেকেই ব্রিটেনে এ বিতর্ক চলছে যে ব্রিটেন ইউরোপ থেকে কতটুকু আলাদা হবে এবং কিভাবে তা বাস্তবায়ন হবে।
থেরেসা মে এখন তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সবচেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি কার্যকর চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন বলা হচ্ছে। এসব নিয়ে নিজ দলেই তিনি এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে কঠোর অবস্থান কেবল ব্রিটেনের ভাঙনকেই ত্বরান্বিত করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে ব্রেক্সিটপন্থীদের নতুন প্রচেষ্টার মধ্যেই দেশটির মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে এ হুঁশিয়ারি দিলেন।
মে যদি ইইউর সাথে যুগোপযোগী চুক্তি করতে ব্যর্থ হন তবে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বিপর্যয়সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যুক্তরাজ্যের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। এমনটা হলে ব্রেক্সিট ইস্যু তাকে ব্রিটেনের ইতিহাসের ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রীদের তালিকায় ফেলতে দ্বিধা করবে না। থেরেসা মে ব্রেক্সিটের জন্য যেসব শর্তের চূড়ান্ত করেছিলেন, সেগুলোর বিষয়ে ইইউ নেতারা অস্ট্রিয়ার সালজবার্গে গত সপ্তাহে বৈঠকে বসেছিলেন। ইইউ নেতাদের প থেকে বলা হয়েছে, থেরেসা মে’র পরিকল্পনা সফল হবে না। মূল সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে ইইউ সদস্যরাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড অংশের মধ্যে বাণিজ্যের শর্ত নির্ধারণ নিয়ে। এ বিষয়ে ইইউয়ের মতামত হচ্ছে, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় বাজারের অংশ হিসেবে থাকবে। আর বাকি যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক ও সাংবিধানিকভাবে যুক্তরাজ্যকে বিভক্ত করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে আগামী অক্টোবরেই ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের সভা। সেখানে যদি চূড়ান্ত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা উপস্থাপন করা না যায়, তাহলে আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত থেরেসা মে নিয়েছেন তা বাস্তবায়নে চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর করতে হবে, যা ‘নো ডিল-ব্রেক্সিট’ নামে আখ্যায়িত হচ্ছে। যদি কোনো চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে দেশটি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব নিয়েই বাস্তবিকই থেরেসা মে’র নেতৃত্বাধীন সরকার খুবই সঙ্কটময় সময় পাড়ি দিচ্ছে। যদিও ইইউ ত্যাগের ছয় মাস আগে চুক্তিতে না পৌঁছানো এবং চলমান অচলাবস্থার জন্য ব্রাসেলসকে দায়ী করেন থেরেসা ম। এ দিকে ইইউ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র খালি হাতে ফেরাকে ব্রিটিশ গণমাধ্যম মানহানিকর হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সর্বশেষ এ ঘটনাটি মে’র কনজারভেটিভ পার্টির ইইউ সংশয়বাদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে, যারা দলীয় প্রধানকে কঠোর হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। সালজবার্গ সম্মেলন থেকে দৃশ্যত খালি হাতে ফিরে আসাকে বিপর্যয়কর হিসেবে উল্লেখ করে সিনিয়র সংরণবাদী নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সুয়েজ সঙ্কটের মতো বড় কূটনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারেন এবং চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট কার্যকর করলে তা যুক্তরাজ্যের ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
ব্রিটেন ১৯৭৩ সালে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির সাথে সংযুক্ত হয়। ল্য ছিল সুলভ মূল্যে ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে মুক্তবাণিজ্য ও অভিন্ন বাজারসুবিধা। ১৯৯৩ সালে তা হয়ে যায় ইইউ, নিজস্ব মুদ্রা, নীতিমালা, নাগরিকদের জন্য সীমানামুক্ত বিচরণসহ যুক্ত হয় অনেক পরিবর্তন। অনেক দিন ধরেই ব্রিটেনের ইইউর বিধি-নিষেধ মেনে চলা নিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকেরা নাখোশ। যার পরিপ্রেেিত ২০১৬ সালে গণভোটের আয়োজন করে যুক্তরাজ্য। এখন থেরেসা মে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের জন্য কতটুকু সফলতা বয়ে আনবেন তার উত্তর পাওয়া যাবে আর কিছুদিন পরই।হ
farhanjnu12@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল