২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইমরান খানের চ্যালেঞ্জ

পাকিস্তান
নির্বাচনে বিজয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খান -

পাকিস্তানের নির্বাচনের দিকে যাদের নজর ছিল, সবাই মনে করত, ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ভালো করবে। এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দলটি পাবে না, তবে বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। অবশ্য তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। পর্দার আড়ালের খেলায় ইমরান হয়তো পিছিয়ে পড়বেন। কিন্তু না, সব জল্পনা-কল্পনা মিথ্যা প্রমাণ করে ইমরান খানের দল এককভাবে সরকার গঠন করতে না পারলেও এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন যে, তাকে বাদ দিয়ে অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী পদে দাবিদারই নেই। নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) বেশ খারাপ করেছে। তিনি কারাগারে থাকলে সহানুভূতিসূচক ভোট পাবে দল, এমন আশাও অমূলক প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি খোদ পাঞ্জাবেও দলটি সরকার গঠন করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আবার নির্বাচনের আগের হবু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যাদের কল্পনা করা হয়েছিল, তাদের অন্যতম ছিলেন চৌধুরী নিসার। তিনি নির্বাচনে হেরেই গেছেন। অন্য দিকে, ভুট্টোদের পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) হয়েছে তৃতীয়। পিএমএল (এন) ও পিপিপি মিলেও সরকার গঠন করার মতো অবস্থায় নেই।
নির্বাচনের পর পিএমএল (এন) ও পিপিপি জোট গঠন করে পর্দার অন্তরালে চলা খেলা ভুণ্ডুল করে দিতে পারে বলে শঙ্কার মধ্যেই ইমরানের দল এত বেশি আসন পেয়েছে।
এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে ইমরান খানের বিপুল চ্যালেঞ্জ আর অপার সম্ভাবনা। তিনি কী করবেন? প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম কাজ কী হবে? নির্বাচনের আগে থেকেই প্রচার চলছিল, তিনি সেনাবাহিনীর পছন্দের লোক। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফ ও তার দলকে যেভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছিল, তাতে ভিন্ন কোনো ধারণা বিবেচনা করার অবকাশও ছিল না। এখন ক্ষমতায় বসে ইমরান খানকে তার বৈধতা প্রমাণ করতে হবে। তিনি যে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর পুতুল নন, সেটাই তাকে সব কিছুর আগে দেখাতে হবে। আবার তিনি যদি তা করতে চান, তবে তা হবে বাঘের পিঠে সওয়ার হওয়ার সামিল। তার বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো তিনি নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে টানা পাঁচ বছর ধরে বিদ্বেষপ্রসূত লড়াই করে দেশটির গণতান্ত্রিক কাঠামোকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। অথচ ২০১৩ সালের যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নওয়াজ, সেটিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মোটামুটিভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ বলেই রায় দিয়েছিল। গণতান্ত্রিকব্যবস্থা অক্ষুণœ রাখতে হলে ইমরান খানকে এখন তার তছনছ করা কাঠামোকে গড়ে তুলতে হবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইমরান খানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সম্ভবত পারিবারিক রাজনীতির অবসান ঘটানো। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি তার সমর্থকদের বলে আসছিলেন, পারিবারিক রাজনীতির ওপর মারণ আঘাত হেনে তিনি চাকরি সৃষ্টি ও সেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন। ১৯৮৮ সালে বর্তমান ধাপের গণতান্ত্রিকপ্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে পিএমএল-এন ও পিপিপি পালাবদল করে ক্ষমতায় রয়েছে। একদিকে রয়েছেন নওয়াজ শরিফ পরিবার, অন্য দিকে ভুট্টো পরিবার। ইমরানের দাবি, এসব দলের দুর্নীতিবাজ নেতারা জনসাধারণের সম্পদ চুরি করছেন। ফলে দেশ গরিবই থাকছে। তিনি দুর্নীতি ও পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে যত সোচ্চার হয়েছেন, তার বিন্দুমাত্র ধর্মীয় উগ্রবাদের প্রতি হননি। তার কাছে এটি বড় ধরনের সমস্যা মনে হয়নি।
অন্য দিকে, অনেকে মনে করেনÑ মধ্যম মেয়াদে তিনি হয়তো সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের সাথে জোট গঠন করবেন। দুই পূর্বসূরির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েই তিনি তা করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্ষীয়ান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তার সামনে অনেক বড় চিত্র ভেসে ওঠবে। তিনি দেখতে পারবেন যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মান উন্নয়ন, চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিÑ সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্র। পূর্বসূরিদের মতো তিনিও বুঝতে পারবেন, তাকে এই অঞ্চলের, বিশেষ করে ভারতের সাথে সঙ্ঘাত ও উত্তেজনা হ্রাস করতে হবে। আবার এসবের জন্য পাকিস্তানের নিরাপত্তা এস্টাবলিশমেন্টকেই অনেকাংশে দায়ী করা হয়। এই অবস্থা থেকে দেশকে বের করে নিতে হবে। ওয়াশিংটনের সাথে ইসলামাবাদের যে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছে, তার অবসান ঘটাতে হবে। চীনের সাথেও সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হবে। ভারতের সাথে সমস্যাগুলো মেটাতে হবে। অনেক কাজ তার সামনে। আবার দেশের ভেতরেও তার সমস্যা কম নয়। ইতোমধ্যেই পিএমএল (এন) ও পিপিপি ঘোষণা করেছে, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে পিটিআইকে মোকাবেলা করবে। দুর্নীতি দমনের যে অভিযান চলছে, তার টার্গেট এই দুটি দলই। ফলে পিঠ বাঁচানোর জন্য হলেও দুই দলকে একই সমতলে আসতে হবে। ইমরান কি আপস করবেন?
তিনি আপস করলে পাকিস্তান আরেকটি স্বপ্নভঙ্গের মধ্যে পড়বে। আর ক্রিকেটে যেভাবে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে পাকিস্তানকে অবিস্মরণীয় অনেক জয় এনে দিয়েছেন, এবারো যদি অদম্য বাঘের মতো লড়াই করেন, তবে জয় পেয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তিনি আবার পাকিস্তানের অবিসংবাদিত সম্রাটে পরিণত হবেন। কেউ তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement